Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

জরাগ্রস্ত বাকিরাও, ভার সইবে কি

দিনভর ঘুরে দেখা গেল, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ায় দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার পুরো চাপ যে সেতুগুলির উপরে পড়েছে, তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থাও বেশ খারাপ।

বেহাল: এমনই জীর্ণ অবস্থা নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতু (বাঁ দিকে) এবং টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের সেতুর। ছবি: সুমন বল্লভ

বেহাল: এমনই জীর্ণ অবস্থা নিউ আলিপুরের দুর্গাপুর সেতু (বাঁ দিকে) এবং টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের সেতুর। ছবি: সুমন বল্লভ

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:০৭
Share: Save:

সেতুর গায়ে বড়সড় ফাটল। সূর্যের আলো সেখান দিয়েই সরাসরি নেমে আসছে নীচের খালে। কয়েক পশলা বৃষ্টির পরে জলও নামছে ওই পথেই। কয়েক মিটার দূরে আবার সিমেন্ট খসে গিয়ে সেতু ধরে রাখার বিমের অর্ধেক অংশ খুলে এসেছে! ওই অংশে কার্যত ভাঙা স্তম্ভের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি।

দিনভর ঘুরে দেখা গেল, মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ায় দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কলকাতার পুরো চাপ যে সেতুগুলির উপরে পড়েছে, তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থাও বেশ খারাপ। ধারণক্ষমতার থেকে বেশি গাড়ির চাপ সেই সেতুগুলি আদৌ সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও প্রশাসন সূত্রের খবর, সেতুগুলির স্বাস্থ্যোন্নতির লক্ষ্যে দ্রুত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটি বারবার জানালেও কাজ কিছুই হয়নি। কার্যত মাঝেরহাট সেতুর মতোই ধুঁকছে আলিপুর রোডের দুর্গাপুর সেতু, আদিগঙ্গার টালিগঞ্জ সেতু, ব্রেস ব্রিজ এবং বাস্কুল ব্রিজ। এই সেতুগুলির উপর দিয়েই এখন ঘুরপথে গাড়ি যাতায়াতের ব্যবস্থা করেছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ।

সব চেয়ে বেশি চাপ দুর্গাপুর সেতুতে। নিউ আলিপুর রোড, আলিপুর স্টেশন রোড হয়ে বর্ধমান রোডে গাড়ি পাঠানো হচ্ছে এই পথেই। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সেতুর রাস্তায় কয়েক বার পিচ ঢেলে, রেলিংয়ে নীল-সাদা রং‌ করে বহিরঙ্গের সংস্কার হলেও সার্বিক স্বাস্থ্যোন্নতির কাজ হয়নি। সেতুর গায়েই তাই গজিয়ে উঠেছে গাছ। ফাটল দেখা দিয়েছে রাস্তায়। সেই সঙ্গে বেশ কয়েক বার পিচ ঢালাই করায় সেতুর ওজন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। কেএমডিএ-র অধীন ২৪ বছরের পুরনো সেতুটি মালবাহী ভারী গাড়ির চাপ কতটা সামলাতে পারবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেতুর নীচেই রয়েছে নিউ আলিপুর স্টেশন সংলগ্ন রেললাইন। সেতুর নীচেই থাকে অন্তত কয়েক হাজার ঝুপড়িবাসী পরিবার।

আরও খারাপ অবস্থা টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে আদিগঙ্গার উপরে থাকা সেতুর। ১৯৩৬ সালে তৈরি ওই সেতুটি কেএমডিএ-র অধীন। শেষ কবে সেটির সংস্কার হয়েছিল, মনে করতে পারছেন না ওই সংস্থার আধিকারিকেরাও। রেলিংয়ের একাংশের নড়বড়ে অবস্থা। সিমেন্ট খসে গিয়ে লোহার রড বেরিয়ে রয়েছে যেখানে সেখানে। নীচে নেমে দেখা গেল, সেতু ধরে রাখার কয়েকটি স্তম্ভ ভেঙে গিয়েছে। সেই ভাঙা স্তম্ভের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে সেতুটি।

ব্রেস ব্রিজে আবার ফুটপাত ও রাস্তায় ফাটলের সংখ্যা সমান। খানাখন্দে ভরা পথের অবস্থা এমনই যে, গাড়ি সব সময়েই খুব ধীরে চলে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এখনকার বাড়তি গাড়ির চাপ। ১৯৯৫ সালে সেতুটি তৈরি করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। তার পর থেকে কয়েক বার সামান্য সংস্কার হলেও সার্বিক কাজ হয়নি। বন্দরের এক কর্তার দাবি, কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁদের অধীনে থাকা সেতুগুলির সংস্কারের কাজ শুরু হবে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত বাড়তি গা়ড়ির চাপ নিতে পারবে তো ওই সেতু? এর অবশ্য কোনও উত্তর মেলেনি। বন্দরের মাথাব্যথার আর একটি কারণ বাস্কুল ব্রিজ। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েক বার বিগড়ে গিয়েছে শহরের ওই সেতুর যান্ত্রিক ব্যবস্থা। যে কারণে খিদিরপুর দিয়ে বারবার ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। এখন মাঝেরহাট-কাণ্ডের পরে ওই সেতুই খিদিরপুরের বড় ভরসা। তবে সে এই বাড়তি চাপ নিতে পারবে তো? বন্দরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আপাতত সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ওই সেতুটির ক্ষমতা রয়েছে এই চাপ নেওয়ার।’’

বন্দর এই দাবি করলেও মুখে কুলুপ এঁটেছে কেএমডিএ। কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার আশিস সেন শুধু বললেন, ‘‘আমাকে এখন দয়া করে কোনও প্রশ্ন করবেন না।’’ হঠাৎ বিপর্যয় ঘটলে উত্তর দেবেন কে? সেই জবাব অবশ্য কারও কাছেই নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flyover Condition Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE