Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata News

শিশুর ‘যৌন নিগ্রহ’ ঘিরে ধুন্ধুমার কারমেল স্কুলে, ধৃত শিক্ষক

ওই স্কুলেরই ক্লাস টুয়ের শিশুর উপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্কুলের নাচের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে শুক্রবার সকাল থেকেই স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন অভিভাবকরা।

অভিভাবকদের বিক্ষোভে রণক্ষেত্র কারমেল প্রাইমারি স্কুল। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

অভিভাবকদের বিক্ষোভে রণক্ষেত্র কারমেল প্রাইমারি স্কুল। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:৫৪
Share: Save:

ক্লাস টুয়ের ছাত্রীর উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠল কারমেল প্রাইমারি স্কুল। রণক্ষেত্রের চেহারা নিল দেশপ্রিয় পার্কের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলটি। অভিভাবকদের প্রবল রোষ থেকে রেহাই পেল না পুলিশও। অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হল, তৈরি হল প্রায় গণপ্রহারের পরিস্থিতি। অভিভাবকদের উপর লাঠি চালিয়ে অভিযুক্তকে নিয়ে এলাকা ছাড়ল পুলিশ। ধুন্ধুমার কাণ্ডে জখম হলেন টালিগঞ্জ থানার ওসি। স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন অভিভাবকরা।

কারমেল প্রাইমারি স্কুলের নাচের শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। নাচ শেখানোর নামে মাসখানেক ধরেই ক্লাস টুয়ের শিশুর উপর ওই শিক্ষক যৌন নির্যাতন চালাচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকেই অভিভাবকরা জড়ো হন স্কুলে। নাচের শিক্ষককে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে বলেও একাংশ দাবি জানাতে থাকেন।

স্কুলের সামনে বিক্ষোভ যে বিশাল চেহারা নিয়েছিল, তাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। টালিগঞ্জ থানায় খবর পৌঁছয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। বিক্ষোভরত অভিভাবকদের স্কুল চত্বরের বাইরে বার করে দেওয়া শুরু হয়।

আরও পড়ুন: ‘ওই টিচারকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক’

আতঙ্ক: পরিস্থিতি তখনও থমথমে। স্কুল ছুটির পরে কড়া পুলিশ পাহারায় অভিভাবকদের হাতে এক এক করে তুলে দেওয়া হচ্ছে অন্য পড়ুয়াদের। শুক্রবার দেশপ্রিয় পার্কের কাছে কারমেল প্রাইমারি স্কুলে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

এতে বিক্ষোভ থেমে গিয়েছিল, তা কিন্তু নয়। স্কুল গেটের বাইরেই বিক্ষোভ চলতে থাকে। অবশেষে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষককে সর্বসমক্ষে আনতে হবে বলে দাবি জানাতে থাকেন বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ। কিন্তু তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য স্কুল থেকে বার করার চেষ্টা হতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের হাত থেকে অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়, শুরু হয় মারধর। ফলে পুলিশের সঙ্গে অভিভাবকদের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় স্কুল গেটের সামনে। টালিগঞ্জ থানার ওসি সেই ধস্তাধস্তিতেই জখম হন। তবে শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পুলিশ। যে শিশুর উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে বলে অভিযোগ, তাকে এবং তার অভিভাবককেও স্কুল চত্বর থেকে নিয়ে য়ায় পুলিশ। থানায় গিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নির্যাতিতা শিশুটির মা বয়ান দিয়েছেন বলে খবর। অভিযুক্তকে পকসো আইনে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

অভিযুক্ত এবং নির্যাতিতাকে স্কুল চত্বর থেকে সরিয়ে নেওয়া হলেও পরিস্থিতি কিন্তু এখনও স্বাভাবিক হয়নি। স্কুলের সামনেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন অভিভাবকরা। নাচের শিক্ষককে স্কুল থেকে বার করে নিয়ে য়াওয়ার সময় পুলিশ যে ভাবে লাঠি চালিয়েছে, তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। অভিভাবকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নাচের শিক্ষক যে ক্লাস টুয়ের শিশুটির উপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছেন, সে কথা স্কুল কর্তৃপক্ষকে আগেই জানানো হয়েছিল। ক্লাস টিচার সব জানতেন, কিন্তু তিনি কোনও পদক্ষেপ না করে নির্যাতনের প্রমাণ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

স্কুলে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনা নিয়ে একগুচ্ছ প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। মেয়েদের স্কুলে কেন পুরুষ শিক্ষক রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন তাঁরা। স্কুলে কেন পর্যাপ্ত সিসিটিভি নেই, প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা নিয়েও। এ দিন অভিভাবকদের বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা মোটেই ইতিবাচক ছিল না বলেও অনেকের অভিযোগ। যাঁর মেয়ের উপর নির্যাতন হয়েছে বলে অভিযোগ, তিনি ছাড়া অন্যেরা কেন নাক গলাচ্ছেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এমন প্রশ্নও তোলা হয় বলে বিক্ষুব্ধ অভিভাবকরা জানিয়েছেন। স্কুলের সামনে অভিভাবকরা যে ভাবে অবস্থান করছেন, তাতে ফের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মাসখানেক আগেই জি ডি বিড়লা এবং এম পি বিড়লা স্কুলে পড়ুয়াদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অভিভাবকদের সঙ্ঘাত চরমে পৌঁছয়। সেই ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই দক্ষিণ কলকাতার আরও এক স্কুল উত্তাল হল একই অভিযোগে। শহরের স্কুলগুলি কি পড়ুয়াদের নিরাপত্তার বিষয়ে আদৌ ভাবিত? প্রশ্ন তুলে দিল কারমেল প্রাইমারি স্কুল।

গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE