বিমানবন্দরের বাইরে কেরলের পর্যটকদের প্রাতরাশ। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ইচ্ছে ছিল কলকাতা ছাড়ার আগে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ঘুরে দেখবেন শহর। কিন্তু ধর্মঘটের জেরে তা আর সম্ভব হল না তামিলনাড়ু থেকে প্রথম বার কলকাতা ঘুরতে আসা পর্যটক দলটির।
বৃহস্পতিবার দুপুরের ২টোর ইন্ডিগোর উড়ানে তাঁদের চেন্নাই ফেরার কথা ছিল। ধর্মঘটের আতঙ্কে তাঁরা ভোর ৫টার মধ্যেই পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। দলের সদস্যা জয়লক্ষ্মী শ্রীনিবাসন বলেন, ‘‘কলকাতায় প্রচুর ধর্মঘট হয় শুনেছিলাম। এ বার দেখলাম। বেলা বাড়লে সমস্যায় পড়ার ভয়ে কাকভোরে উঠেই চলে এসেছি।’’ কিছুক্ষণ পরে দেখা গেল, ৪০ জনের ওই দলটি প্লাস্টিকের প্লেট হাতে বিমানবন্দরের গেটের বাইরেই বসে প্রাতরাশ সেরে নিচ্ছেন।
বিভ্রাট এড়াতে নির্ধারিত সময়ের বহু আগে অনেকে পৌঁছে যান বিমানবন্দরে। রাস্তায় আটকে পড়ার ভয়ে ব্যারাকপুরের দিতি ভট্টাচার্য অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেন। এ দিন তিনি বিমানবন্দরে আসেন তাঁর মেয়ে ও দুই নাতনিকে বেঙ্গালুরুর উড়ানে তুলে দিতে। দিতির কথায়, ‘‘ঝুঁকি নিতে রাজি নই। তাই তিন গুণ ভাড়া দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করেছিলাম।’’ আরও এক যাত্রী অমিত রায় বুধবার রাত থেকেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন বিমানবন্দরে। দোকানে খেয়ে এবং বেঞ্চে শুয়ে-বসে কাটিয়েছেন ১৭ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি উড়ে যান আগরতলা।
ধর্মঘটের বাজারে কিছু ট্যাক্সিচালক নিজেদের মুনাফা বুঝে নিয়েছে বলেও অভিযোগ বহু যাত্রীর। হাওড়ার বাসিন্দা, পেশায় ব্যবসায়ী বন্ধু প্রসাদ এ দিন তাইল্যান্ড যান। হাওড়া থেকে বিমানবন্দর পৌঁছতে ট্যাক্সিচালক ৮০০ টাকা চান। শেষে ৫০০ টাকায় রফা হয়।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন নির্ধারিত সূচি মেনেই ওঠা-নামা করেছে প্রায় প্রতিটি উড়ান। যদিও যাত্রী ছিল তুলনায় কম। তবে গো এয়ারের একটি উড়ান যাত্রা শুরু করার ঠিক আগে একটি পাখি ঢুকে যায় বিমানের ইঞ্জিনে। ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এটিসি অফিসারেরা পাইলটকে বিমান ফিরিয়ে নিয়ে আসতে বলেন। যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিমানটি বাতিল করা হয়। যাত্রীদের দুপুরে অন্য উড়ানে গুয়াহাটি যাওয়ার ব্যবস্থা হয়।
এ দিন যাঁরা অন্য শহর থেকে কলকাতা এসেছেন, বিমানবন্দর থেকে বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছনোর সময়ে ট্যাক্সির আকাল টের পেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের সহায়তায় এ দিন সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে বিধাননগর ট্রাফিক পুলিশ। প্রি-পেড, লাক্সারি বা রেডিও ক্যাব চললেও তার সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ফলে, বিমানবন্দরের ভিতরে প্রি-পেড কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে।
এখন কলকাতা থেকে অন্য শহরের উড়ান ধরতে যেতে হয় নতুন টার্মিনাল-এর দোতলায়। আর অন্য শহর থেকে যাঁরা আসেন, তাঁরা একতলা দিয়ে বেরোন। অনেক সময়ে দোতলায় যাত্রী নামিয়ে সোজা শহরে চলে যায় ট্যাক্সি। ফলে নীচে অপেক্ষারত যাত্রীরা ট্যাক্সির নাগাল পান না। এ দিন অবশ্য যে ট্যাক্সি যাত্রী এনে দোতলায় নামিয়েছে, তাদেরই একতলায় অপেক্ষারত যাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে পুলিশ। বিমানবন্দর থেকে বাস পরিষেবাও স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি পুলিশের।
অন্য দিকে, রেলকে ধর্মঘটের আওতা থেকে ছাড় দেওয়া হলেও এ দিন কোথাও কোথাও রেল অবরোধ হয়েছিল। তবে যাত্রীদের অনুরোধে অল্প সময়ে অবরোধ ওঠে। সকালের দিকে শিয়ালদহ, হাওড়া ও খড়্গপুর শাখায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে ট্রেন চলেছে নিয়ম মেনেই। তবে যাত্রী ছিল নামমাত্র। শহরতলির লোকাল ট্রেন বা মেট্রো— সব চলেছে ফাঁকাই।
রেল সূত্রের খবর, এ দিন শহরতলির ট্রেনে যাত্রীসংখ্যা ছিল ২০ শতাংশ। মেট্রোয় সন্ধ্যা পর্যন্ত যাত্রী হয়েছে ৩০ শতাংশ। ফলে মেট্রো ও শহরতলির লোকাল ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে রেলকে বিরাট অঙ্কের টাকা কার্যত ভর্তুকি দিতে হয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, শিয়ালদহ মেন শাখায় ডায়মন্ড হারবার, মগরাহাট, লক্ষ্মীকান্তপুরে অবরোধ হয়। সকালে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার হটোর স্টেশনে হাজির হন শ’দেড়েক ধর্মঘট সমর্থক। রেল পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। অবরোধ হয় রামপুরহাট শাখায়, ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইন ও দুর্গাপুরেও। তবে হলদিয়া, দিঘা ও মেদিনীপুর শাখায় সব ট্রেনই চলেছে সময় মেনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy