Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Fire

মধ্যরাতে বাড়ির দিকে এগোচ্ছে আগুন, গাড়ি চালকের তৎপরতায় বাঁচল ঘুমন্ত পাড়া

তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার গাড়ির চালক তাপস ভুঁইয়ের চোখের সামনেই দ্রুত পরিণতি পাচ্ছিল গোটা ঘটনা।

আগুনের গ্রাস থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়ার পর, রবিবার নিজের বাড়ির সামনে বাবু মাইতি — নিজস্ব চিত্র।

আগুনের গ্রাস থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পাওয়ার পর, রবিবার নিজের বাড়ির সামনে বাবু মাইতি — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৮:৪১
Share: Save:

গভীর রাতে রাস্তার পাশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। শীতের রাতে, উত্তুরে হাওয়ায় ভর করে সেই আগুনের শিখা এগিয়ে যাচ্ছে কয়েক মিটার দূরের বাড়িটার দিকে। বাঁশ-কাঠ টিন দিয়ে তৈরি বাড়িতে সেই আগুনের শিখা পৌঁছলে মুহূর্তে খাক হয়ে যাবে। সল্টলেক সেক্টর ফাইভের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার গাড়ির চালক তাপস ভুঁইয়ের চোখের সামনেই দ্রুত পরিণতি পাচ্ছিল গোটা ঘটনা। গোটা পাড়া তখন ঘুমোচ্ছে। কাকে সাবধান করবেন?

অবস্থা যে কয়েক মিনিটে ভয়াবহ আকার নিতে পারে আঁচ করেই আগুন থেকে খানিকটা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খালের পাশের সেই ঘরের বাসিন্দাদের ডাকতে থাকেন তাপস। কিন্তু শীতের রাতে কোনও সাড়া শব্দ নেই বাড়ির ভিতর থেকে। মরিয়া হয়ে শেষে বাড়ির দরজায় ধাক্কা মারতে থাকেন। এবার ঘুম ভাঙে বাড়ির বাসিন্দা বাবু মাইতির। দরজা খুলে আগুন দেখে হুঁশ ফেরে তাঁর। ততক্ষণে আগুন আরও খানিকটা এগিয়ে এসেছে। তাপসই বাবুর বাড়ি থেকে জল নিয়ে আগুন নেভাতে শুরু করেন। তার পর একে একে যোগ দেন পাড়ার বাকিরাও। খবর যায় পুলিশ এবং দমকলেও। তবে দমকল আসার আগেই নিভে যায় ওই আগুন।

তাপস ভুঁই, গভীর রাতে আগুনের হাত থেকে বাঁচান গোটা একটা পাড়াকে— নিজস্ব চিত্র।

কিন্তু উল্টোডাঙার কেস্টপুর খালের পাশে ক্যানাল সার্কুলার রোডে দাসপাড়া বস্তির বাসিন্দারা জানেন, ওই সময় তাপস যদি বাবু মাইতিকে ডেকে সাবধান না করতেন, আগুন নেভাতে না শুরু করতেন তবে শুধু বাবুর ঘর নয়, ছাই হয়ে যেত গোটা পাড়া। বাড়ির সঙ্গেই ছোট একটা মুদি দোকান বাবুর। শুক্রবার রাতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী।

রবিবার তিনি বলেন, ‘‘তাপস বাবু না এলে কী যে হত, তা ভাবতেও পারছিনা। গোটা পাড়া বাঁচিয়ে দিয়ে গেলেন উনি।’’ বাবুর কাছ থেকেই জানা যায়, শনিবার সকালেও এক বার ওই পাড়ায় গিয়েছিলেন তাপস। খোঁজ নিতে কারও কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না। রবিবার দাসপাড়ার বাসিন্দারা এক কথায় বলেন, ‘‘ ঈশ্বরের দূত হয়ে এসেছিলেন তাপস। বাঁচিয়ে দিয়ে গিয়েছেন এতগুলো মানুষকে।” রবিবার তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি অবশ্য বিশেষ গুরুত্ব দিতে চাননি বিষয়টিকে। তিনি বলেন, ‘‘ আমি ওই রাস্তা দিয়েই ফিরছিলাম। আগুন দেখে খালি ওই বাড়ির লোকজনকে সতর্ক করে দিয়েছি। আমার বদলে অন্য কেউ থাকলে তিনিও করতেন।” সেই কথা শুনে বাবু বলেন,‘‘ টালা ব্রিজে বড় গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর সারা রাত এই রাস্তা দিয়ে অজস্র গাড়ি যায়। কই, অন্য কোনও গাড়ির চালক তো গাড়ি থামাননি!” দমকলের আধিকারিকরাও স্বীকার করেন, সময় মতো আগুন দেখে ব্যবস্থা নেওয়ায় আগুন বাড়তে পারেনি। তা না হলে ওই আগুনই বড় হতে সময় নিত না। ওই এলাকার কাউন্সিলর এবং ৩ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত বলেন, ‘‘ আমি তাপস বাবুকে গোটা এলাকার তরফ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা সবাই যদি এ রকম বিষয়গুলো এড়িয়ে না গিয়ে সামান্য উদ্যোগী হই, তাহলে অনেক বড় বড় দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। সেই শিক্ষাই দিয়ে গেলেন তাপসবাবু।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Salt Lake Ultadanga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE