Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

করোনার দোসর এ বার আমপান, মানুষ যাবেন কোথায়

কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য জানাচ্ছে, শুধুমাত্র কলকাতায় আংশিক স্থায়ী (সেমি পার্মানেন্ট) ও অস্থায়ী (টেম্পোরারি) বাড়ির সংখ্যা ৬০ হাজার ৬৭৮টি। একই ঠিকানায় বসবাসকারী মানুষের গড় (হাউজ়হোল্ড সাইজ) ৪.৩৮ জন।

ঘেঁষাঘেঁষি: চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের কাছে যদুনাথ দে রোডের একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ফুটপাতবাসীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

ঘেঁষাঘেঁষি: চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের কাছে যদুনাথ দে রোডের একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন ফুটপাতবাসীরা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ০৪:৫৭
Share: Save:

আমপানের হাত থেকে বাঁচার তাগিদই কি কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ বাড়িয়ে দেবে? আপাতত এই প্রশ্নই মুখ্য হয়ে উঠেছে বিজ্ঞানী-গবেষকদের বড় অংশের মধ্যে।

যদিও সংশ্লিষ্ট দুই বিপরীত মেরুর বিপর্যয়ের মধ্যে চরিত্রগত কোনও যোগ নেই। তবে পরোক্ষে কোভিড-১৯ এবং ঘূর্ণিঝড় আমপান পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।

এর আগে তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা বৃষ্টির জেরে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের কোনও পরিবর্তন হয় কি না, তা নিয়ে বেশ কিছু দিন বিতর্ক চলেছিল। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) তরফে ‘মিথ বাস্টারস’ নামে একটি বিভাগের মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, পরিবেশগত বদলের সঙ্গে সার্স কোভ-২ ভাইরাসের শক্তিশালী বা দুর্বল হওয়ার কোনও যোগ মেলেনি।

বিজ্ঞানী-গবেষকদের মত, আমপানের থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাময়িক ভাবে প্রান্তিক মানুষকে সরিয়ে যে ভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে, তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কী ভাবে? তার কারণ ব্যাখ্যা করে হু-র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক দফতরের ‘কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়’-এর প্রাক্তন অধিকর্তা রাজেশ ভাটিয়া জানাচ্ছেন, ভাইরাসের মিউটেশনে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়ার প্রমাণ মেলেনি মানে এই নয় যে, দুর্যোগের সময়ে সংক্রমণের কোনও ঝুঁকি থাকছে না। রাজেশের কথায়, “যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময়েই বহু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়। এতে স্বাভাবিক ভাবেই সংশ্লিষ্ট আশ্রয়স্থলে ভিড় হয়। ঠাসাঠাসি অবস্থায় শুধু কোভিড-১৯ কেন, স্পর্শ বা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে যে কোনও প্যাথোজেনজনিত সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায়।”

বিজ্ঞানীরা এ-ও জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য দূরত্ব-বিধির কথা বলা হচ্ছে। সাধারণ সময়েই এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে দূরত্ব-বিধি মানতে অনীহা দেখা যায়। সেখানে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল যাঁরা, আমপানের তাণ্ডবের পরে তাঁরা কতটা সেই নিয়ম মানতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। কারণ, অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, কী ভাবে ঘূর্ণিঝড়ের সামনে তুলনায় দুর্বল কাঠামোর বাড়ি তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। গত বছরের ঘূর্ণিঝড় ফণীর সেই ধ্বংসচিহ্ন এখনও ওড়িশার বহু জায়গায় রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য জানাচ্ছে, শুধুমাত্র কলকাতায় আংশিক স্থায়ী (সেমি পার্মানেন্ট) ও অস্থায়ী (টেম্পোরারি) বাড়ির সংখ্যা ৬০ হাজার ৬৭৮টি। একই ঠিকানায় বসবাসকারী মানুষের গড় (হাউজ়হোল্ড সাইজ) ৪.৩৮ জন। ফলে আমপানের সামনে শুধু এ শহরেই ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭৭০ জনের আশ্রয়স্থল বিপন্ন হতে পারে! সেই বিপন্নতাই তাঁদের বর্মহীন করতে পারে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সামনে। এক মাইক্রোবায়োলজিস্টের কথায়, ‘‘যে কোনও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ই অপেক্ষাকৃত দুর্বল বাড়ি তছনছ করে দেয়। তখন সেই বাড়ির বাসিন্দার আশ্রয় মেলে ত্রাণ শিবির বা অস্থায়ী কোনও জায়গায়, যেখানে স্বল্প পরিসরে অনেকে থাকতে বাধ্য হন। তখনই সংক্রামক রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। সেখানে কোভিড ১৯-এর মতো মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি থাকবে।’’ ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট মারিয়া সোদারলুন্ড ভেনার্মো বলছেন, ‘‘আসল বিপর্যয় শুরু হয় ঘূর্ণিঝড় থামার পরে। ঝড়ে বাড়িঘর ভেঙে পড়লে তখন মানুষ এমন জায়গায় বাস করতে বাধ্য হন, যেখানে পরিস্রুত পানীয় জল পাওয়া যায় না, নিকাশির পরিকাঠামো থাকে না। ফলে শ্বাসকষ্টজনিত রোগের পাশাপাশি ডায়রিয়া হওয়ারও আশঙ্কা থাকে।’’

কোভিড-১৯ মানুষের বিপন্নতা, অসহায়তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমপান সেই বিপন্নতাকে আরও কতটা তীব্র করবে, এখন সেই আশঙ্কায় সব মহল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE