Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছাদ থেকে জল পড়ে সাবওয়েতে, তাই সড়কই ভরসা

এক হাতে কানে ধরা মোবাইল ফোন। অন্য হাতে অফিসের ব্যাগ। দ্রুত হেঁটে ই এম বাইপাসের কাদাপাড়া মোড়ে রাস্তা পেরোনোর চেষ্টা করছিলেন এক ব্যক্তি।

বেহাল: কাদাপাড়া মোড়ের সাবওয়েতে জল সাফ করছেন এক রক্ষী (বাঁ দিকে)। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

বেহাল: কাদাপাড়া মোড়ের সাবওয়েতে জল সাফ করছেন এক রক্ষী (বাঁ দিকে)। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পেরোচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২১
Share: Save:

এক হাতে কানে ধরা মোবাইল ফোন। অন্য হাতে অফিসের ব্যাগ। দ্রুত হেঁটে ই এম বাইপাসের কাদাপাড়া মোড়ে রাস্তা পেরোনোর চেষ্টা করছিলেন এক ব্যক্তি। হঠাৎ পথচারীদের সিগন্যাল লাল হয়ে গিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করল। ভদ্রলোকের সামনে জোরে ব্রেক কষে দাঁড়াল একটি বাস। হাত থেকে ফোন ছিটকে পড়ে ভেঙে চার টুকরো! কোনও মতে দুর্ঘটনা এড়িয়ে রাস্তা পেরিয়ে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘বুক কাঁপছে।’’ এর পরে প্রচণ্ড উত্তেজিত ভাবে বলেন, ‘‘বাজে একটা সাবওয়ে বানিয়েছে। কোনও কাজেই লাগে না! ঢুকলেই ভিজে চান করে বেরোতে হয়!’’

শুধু ওই ব্যক্তিই নন, এক দুপুরে ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে দেখা গেল, ই এম বাইপাসের কাদাপাড়া মোড়ে ভূগর্ভস্থ পথ ছেড়ে রাস্তা দিয়েই পেরোনো দস্তুর। সাম্প্রতিক কালে একাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানী হলেও হুঁশ ফেরেনি কারওই।

জেনেশুনে ঝুঁকির পথে হাঁটা কেন?

বেলেঘাটার বাসিন্দা, সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী রোহিত দত্ত বললেন, ‘‘সাবওয়ের ছাদ থেকে জল পড়ে। ঢুকলেই কাকভেজা হয়ে যেতে হবে। ও ভাবে অফিস যাওয়া যায়?’’ সিগন্যালে চোখ রেখে রাস্তা পেরিয়ে বছর ৬২-র শ্রীমতী সামন্ত জানালেন, সল্টলেকের ইপি ব্লকে থাকেন তিনি। প্রায়ই সুভাষ সরোবরে হাঁটতে যান। তবে ভূগর্ভস্থ পথ ব্যবহার করেন না। তাঁর দাবি, ‘‘কখনও দেখলাম না যে, চলমান সিঁড়িগুলি কাজ করছে। এই বয়সে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারি না।’’ কাদাপাড়ার মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে যাওয়া রাজরূপা ভট্টাচার্য আবার বলেন, ‘‘কেমন সাজিয়েছে দেখতে এক দিন গিয়েছিলাম। পানের পিক, থুতু ফেলে যা করেছে, আর যাওয়ার ইচ্ছে নেই।’’

সরেজমিন দাঁড়িয়ে দেখা গেল, উদ্বোধনের ১৫ মাসের মধ্যেই ওই সাবওয়ের ভয়াবহ অবস্থা। সাবওয়ের গায়ের এক দিকের কাচের নির্মাণ ভেঙে পড়ে রয়েছে সিঁড়িতে ও ফুটপাতে। সেই ভাঙা কাচের উপর দিয়েই হাঁটতে হচ্ছে। সব ক’টি চলমান সিঁড়িই বন্ধ। কবে খুলবে কেউ জানেন না। হাঁটা শুরু করার কয়েক মিনিটেই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়তে শুরু করল। নাগাড়ে জল পড়তে থাকায় ফুলে গিয়েছে সাবওয়ের বেশ কয়েকটি দেওয়ালও। সৌন্দর্যায়নের অংশ হিসেবে দেওয়ালে লাগানো ফুটবলারদের ছবির থেকে ফোলা দেওয়ালেই চোখ যায় বেশি। সঙ্গে দেওয়াল জুড়ে পানের পিকের ছাপ। এক দিকের গেটের নিরাপত্তারক্ষী আবার বললেন, ‘‘জল সাফ করার ব্যবস্থাও রয়েছে।’’ এর পরেই জল সাফ করতে শুরু করলেন।

২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রথম বার অনূর্ধ্ব ১৭ ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পায় ভারত। সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্বকাপ শুরুর আগেই ভূগর্ভস্থ পথ তৈরির কাজ শেষ করা হবে। তবে পূর্ত দফতরের একাংশ বলছে, তাড়াহুড়ো করেই ভুল হয়েছে। যদিও পূর্ত দফতরের রাস্তা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ভাস্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘একটি সাবওয়েতে অনেকগুলি জয়েন্ট থাকে। কখনও কখনও জয়েন্টের মধ্যে সামান্য ফাঁক তৈরি হয়। সেখান দিয়েই জল পড়ে। আমরা দ্রুত গ্রাউটিংয়ের কাজ শুরু করে দিচ্ছি। জল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।’’ চলমান সিঁড়ি সর্বক্ষণ বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে ভাস্করবাবুর দাবি, ‘‘সত্যিই সিঁড়িগুলিতে কাজ চলছে।’’ সেই সঙ্গে ভাস্করবাবু জানান, সাবওয়ের কাচ স্থানীয়েরাই ভেঙে দিয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Subway EM Bypass Water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE