Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঠাকুর দেখার টানে শহর চাইছে ‘অকালবোধন’

ভিড় ঠেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এক তরুণী আর এক তরুণীকে বলছেন, “দুটো দেখা গেল তা হলে। কেন যে ঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখা হয়! বোধনটা কেন যে আরও আগে হয় না?” 

প্রতিমাকে গয়না পরানোর পালা। বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতার এক বনেদি বাড়িতে। ছবি: সুমন বল্লভ

প্রতিমাকে গয়না পরানোর পালা। বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতার এক বনেদি বাড়িতে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৬
Share: Save:

পঞ্চমীর বিকেল। গড়িয়াহাট মোড়ে ভিড়ের চাপে তিল ধারণের জায়গা নেই। এক দিকে পুজো দেখতে নেমে পড়া দর্শকের ঢল। সেই সঙ্গে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে আসা ক্রেতারা। সব মিলিয়ে দম আটকানো ভিড়ের মধ্যে থেকেই ভেসে আসছিল এক শিশুকন্যার কান্না। বাবা-মায়ের সঙ্গে সে-ও এসেছে পুজো দেখতে।

কিন্তু তাতে কী। উৎসাহের পারদ তখন তুঙ্গে। ভিড় ঠেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এক তরুণী আর এক তরুণীকে বলছেন, “দুটো দেখা গেল তা হলে। কেন যে ঠাকুরের মুখ ঢেকে রাখা হয়! বোধনটা কেন যে আরও আগে হয় না?”

‘বোধন কেন আরও আগে হয় না’—তৃতীয়া থেকেই প্রতিমা দর্শনের এমন উৎসাহ এ বার যেন সেই প্রশ্নই তুলতে শুরু করেছে। ষষ্ঠী পর্যন্ত যেন কেউই অপেক্ষা করতে চাইছেন না। বৃষ্টির ভ্রুকুটিকে তাচ্ছিল্য করে চতুর্থীতেই মণ্ডপে মণ্ডপে আছড়ে পড়েছে জনজোয়ার। পঞ্চমীতেও সেই ধারা অব্যাহত। বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা শ্রীলেখা রায় বললেন, ‘‘কিছু কেনাকাটা বাকি ছিল। গড়িয়াহাটে এলাম আর আশপাশের ঠাকুরগুলো দেখব না, তা হয় নাকি!” দেশপ্রিয় পার্কে ঢোকার মুখে নয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বললেন, “তেলেঙ্গাবাগানে থাকি। ষষ্ঠী থেকে পাড়ায় থাকতে হবে। তাই আগে দক্ষিণের পুজোগুলো সেরে নিচ্ছি।”

চতুর্থীর রাতে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে গাড়ির জটে আটকে ত্রিধারা সম্মিলনী, দেশপ্রিয় পার্কে ঢুকতেই পারেননি বলে আক্ষেপ করছিলেন অনেকে।

কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, দক্ষিণের তুলনায় চতুর্থী এবং পঞ্চমীতে ভিড় বেশি ছিল উত্তরেই। তবে রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, শরৎ বসু রোড, গড়িয়াহাট রোড, চেতলা সেন্ট্রাল রোড-সহ দক্ষিণের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ির চাপ ছিল। ভিআইপি রোডের বিমানবন্দরমুখী লেনেও যানজট তৈরি হয়। ফলে উল্টোডাঙায় ছিল লম্বা গাড়ির সারি।

টালা সেতু বন্ধ থাকলেও টালা বারোয়ারি, টালা পার্ক প্রত্যয়ের মতো পুজোগুলিতে পৌঁছতে দর্শকদের উৎসাহে কোনও ভাটা দেখা যায়নি। সেতুর ভবিষ্যৎ কী, উৎসবের পরিবেশে সেই প্রশ্ন উধাও। উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল শোভাবাজারের দুই রাজবাড়ি, কুমোরটুলির পুজোগুলিতেও। সাবেকিয়ানাই বৈশিষ্ট বাগবাজারের পুজোর। সেখানে দেখা গেল, প্রতিমা দর্শনের পরেই খাবারের স্টলে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

পুজোর শহরে পুর প্রশাসনকে ভাবাচ্ছে প্লাস্টিকের দূষণও। চতুর্থীর রাতেই সেই চিত্র দেখা গিয়েছে। কলকাতা পুরসভার দাবি, পঞ্চমীর সকাল থেকে সাফাইও শুরু হয়েছে।

এ দিকে, পঞ্চমীর দুপুরে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে একটি গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয় দেশপ্রাণ শাসমল রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড-সহ টালিগঞ্জ, নিউ আলিপুরের বিভিন্ন রাস্তায়। গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়তে দেখা যায় হাজরা থেকে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি পর্যন্ত। পরে অবশ্য খারাপ গাড়িটি সরিয়ে দেওয়া হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Crowd Schedule
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE