Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তালা ভেঙে রেলের আবাসন ভাড়াটের কব্জায়

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কুড়ি আগে রেল এই আবাসনগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তার পরে তালা ভেঙে সেগুলিতে ভাড়াটে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই চল এখনও বজায় আছে বলে জানালেন এলাকার বাসিন্দারা।

 মাথা গোঁজা: ধসে পড়েছে উপরের তল। তবু প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ছাদ রক্ষার চেষ্টা ভাড়াটেদের। সোমবার, পাতিপুকুরের আবাসনে। নিজস্ব চিত্র

মাথা গোঁজা: ধসে পড়েছে উপরের তল। তবু প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে ছাদ রক্ষার চেষ্টা ভাড়াটেদের। সোমবার, পাতিপুকুরের আবাসনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৯ ০০:৫৯
Share: Save:

ভাঙা ছাদে ডালপালা মেলেছে বড় অশ্বত্থ। পাশেই ডিটিএইচ অ্যান্টেনা। তার নীচের ঘরটির রাস্তার দিকের দেওয়াল বিলকুল উধাও। মেঝেতে মাঝ বরাবর ফাটল।

সেখানেই ঘরকন্না দীপালি দেবনাথের। ঠিকানা, পাতিপুকুর ঝিলপাড় রেল কোয়ার্টার্স। দীপালি সেখানে শুধু একটি নাম। সার সার এমন কোয়ার্টার্সে বাস আরও অনেক পরিবারের।

দীপালি থাকেন রেল আবাসনের একটি বাড়ির চারতলায়। রবিবার বিকেলে তাঁর সামনের আবাসনে তাঁরই মতো চারতলার ঘর ভেঙে মৃত্যু হয়েছে আশা হাজরা নামে এক প্রৌঢ়ার। দীপালি বা আশা কিংবা তাঁদের পরিবারের কেউই কিন্তু রেলের কর্মী নন। যে বাড়ির মেঝেতে পা ফেলতে হয় অতি সাবধানে, সেখানেই তাঁরা থাকছেন বছরের পর বছর ধরে। আশার মৃত্যুর পরেও কারও হুঁশ ফেরেনি। রেলের সাবধানবাণীর পরেও নয়।

যেমন বসিরহাটের বাসিন্দা নিমাই ঘোষ। পেশায় ফল ব্যবসায়ী নিমাই বছর পনেরো ধরে একতলার একটি কোয়ার্টার্স দখল করে আছেন। ঘরে টিভি রয়েছে। আছে আলমারি, খাট এবং অন্য আসবাব। নিমাই সাফ জানালেন, ভাড়া বাড়িতে থাকার মতো সামর্থ্যই নেই তাঁদের। একই কথা জানালেন আর এক ভাড়াটে আভা সাউটিয়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কুড়ি আগে রেল এই আবাসনগুলিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। তার পরে তালা ভেঙে সেগুলিতে ভাড়াটে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেই চল এখনও বজায় আছে বলে জানালেন এলাকার বাসিন্দারা। তবে কর্তৃত্বের হাত বদল হয়েছে। আগে যারা এসে ভাড়া আদায় করত,তাদের বদলে অন্যেরা আসে।

কত ভাড়া? কাকে দিতে হয়?

প্রশ্ন শুনে পড়শির দিকে তাকালেন আভা, রিনা দাস, রূপালি সরকারেরা। দীর্ঘ বিরতির পরে তাঁরা বললেন, ‘‘আগে ৫০০-৬০০ টাকা করে ভাড়া দিতাম। কিন্তু এখন আর কাউকে ভাড়া দিতে হয় না। এমনিই থাকি।’’

সোমবার বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, রেল আবাসনের কাছেই একটি নির্মীয়মাণ মন্দিরের সামনে বসে আছেন আশার পুত্র সুব্রত হাজরা। মাকে নিয়ে চারতলার একটি ঘরে থাকতেন তিনি। ওই ঘরটির অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ ছিল। সেটা তাঁরা নিজেরাও বুঝতে পেরেছিলেন। যার জন্য সব জিনিসপত্র একটি ঘরে ডাঁই করে রেখেছিলেন। তবুও বাড়ি ছেড়ে যাননি। কিন্তু কেন?

সুব্রত বলছেন, ‘‘কোথায় যাব? আমাদের তো থাকার আর কোনও জায়গা নেই। এই ঘরটাই যা আশ্রয় ছিল। কাল রাতে পাড়ার ক্লাবে ঘুমিয়েছি।’’ জানালেন, তিনি এক চিকিৎসকের গাড়ি চালান। কত রোজগার হয়, তা অবশ্য বলতে চাইলেন না। কিন্তু তাঁর মতো আরও অনেকেই তো গাড়ি চালান। সকলেই কি রেলের পরিত্যক্ত আবাসনে থাকেন? সেই প্রশ্নের উত্তর দেননি সুব্রত। জবাব নেই বাকি বাসিন্দাদের কাছেও।

যশোর রোড থেকে ১০০ গজ ভিতরে ঝিলপাড়ে পরপর চারটি বহুতল। প্রতিটি বহুতলে ২৪টি করে কোয়ার্টার্স। আরও একটি বহুতল ছিল সেখানে। বছরখানেক আগে রেল সেটি ভেঙে দেয়। তার কিছু দিন আগে সেখানেও ছাদ ভেঙে জখম হয়েছিলেন এক জন।

প্রায় সব বাড়িতেই টিভি, ফ্রিজ-সহ অনেক আধুনিক উপকরণ রয়েছে। কিন্তু, কারও নাকি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার মতো সঙ্গতি নেই। তা হলে টিভি-ফ্রিজ আসছে কী করে? রিনাদের জবাব, ‘‘খুব কষ্ট করে করতে হয়েছে।’’

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে রেলের আধিকারিকেরা এসে আবাসিকদের বলেছেন ঘর খালি করে দিতে। কিন্তু আবাসিকদের একটাই কথা, ‘‘আমরা যাব কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Rail Quarter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE