Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
আমার পাড়া: গোপীকৃষ্ণ পাল লেন

রকে বসে আড্ডাটা এখনও ‘মাস্ট’

উত্তর কলকাতার ছেলেদের কাছে পাড়া মানে বাড়িরই সম্প্রসারিত অংশ। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। পাড়ার বাড়িঘর, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সব কিছুই যেন কত আপন। আমার পাড়া আহিরীটোলা-জোড়াবাগান অঞ্চলের গোপীকৃষ্ণ পাল লেন।

অবসর: উত্তুরে সংস্কৃতি আজও বেঁচে এ পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

অবসর: উত্তুরে সংস্কৃতি আজও বেঁচে এ পাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

সৌম্য সেন
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৭ ১২:২৫
Share: Save:

উত্তর কলকাতার ছেলেদের কাছে পাড়া মানে বাড়িরই সম্প্রসারিত অংশ। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। পাড়ার বাড়িঘর, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সব কিছুই যেন কত আপন।

আমার পাড়া আহিরীটোলা-জোড়াবাগান অঞ্চলের গোপীকৃষ্ণ পাল লেন। নির্ঝঞ্ঝাট এই পাড়াটা শান্তিপূর্ণ। গৌর লাহা স্ট্রিট থেকে শুরু পাড়াটা বি কে পাল অ্যাভিনিউ পেরিয়ে সোজা চলে গিয়েছে। পাড়ার চৌহদ্দিতে রয়েছে কালীপ্রসন্ন ব্যানার্জি লেন।

এখানে এখনও আছে উত্তুরে সংস্কৃতি। সকলেরই সময় কমেছে। তবু রাতে ফিরে পাড়ার রকে বসে আড্ডাটা একে বারে ‘মাস্ট’। না হলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত আড্ডার হরেক দৃশ্য। বিকেলে আড্ডা দেন পাড়ার মহিলারাও।

অনেকেরই সকালের শুরু প্রাতর্ভ্রমণে। গন্তব্য গঙ্গার ঘাট বা বি কে পাল পার্ক। ফেরার পথে চায়ের দোকানে আড্ডা মেরে বাজারও সেরে ফেলেন অনেকেই।

এ পাড়াটায় ঢোকার মুখে তৈরি হয়েছে রঙিন ফোয়ারা। সেটাই পাড়ার ল্যান্ডমার্ক। পাড়ায় যেখানে জঞ্জাল ফেলা হয় সেখানে কিছু ছেলের উদ্যোগে একটা ছোট বাগান করা হয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য।

মনে পড়ে ছেলেবেলায় খেলতে খেলতে সন্ধ্যা হয়ে গেলে পাড়ার অঘোষিত অভিভাবকেরা ধমক দিয়ে বলতেন, ‘যা, বাড়ি গিয়ে পড়তে বস।’ এখানে খেলাধুলোর পরিবেশটা আজও আটুট। রবিবার পাড়ার আবহাওয়াটা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। রাস্তাতেই হয় পাড়ার ক্রিকেট খেলা। তাতে যুবক থেকে বৃদ্ধ, কারও উৎসাহে কমতি নেই। এ ছাড়াও শীতকালে রাতের দিকে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়।

দুর্গাপুজোর চেয়ে পাড়ার কালীপুজোর আকর্ষণটা বেশি। এমনকী, যাঁরা এ পাড়া ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, তাঁরাও তখন পাড়ায় ফিরে আসেন। এক সঙ্গে খাওয়াদাওয়া, আড্ডায় কেউ বাদ পড়তে চান না। আগে শীতকালে কালীপ্রসন্ন ব্যানার্জি লেনে গানের জলসা হতো। আসতেন কত প্রখ্যাত শিল্পী। সেটা আজ শুধুই স্মৃতি। আগে অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে এ পাড়ায় ঘুড়ি উড়ত। এখন সেই দিনটাতে আকাশে একটাও ঘুড়ি আর চোখে পড়ে না।

নানা সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে কিছু আক্ষেপও। কাছাকাছি ভাতের হোটেল, মিষ্টির দোকান, তেলেভাজার দোকান থাকলেও নেই কোনও ভাল রেস্তোরাঁ বা ফাস্ট ফুড সেন্টার।

কাছাকাছি বেশ কিছু রাস্তা ওয়ানওয়ে হওয়ায় সন্ধ্যার পরে ট্যাক্সিচালকেরা এ দিকে আসতে চান না। বি কে পাল অ্যাভিনিউ ও নিমতলা ঘাট স্ট্রিট দিয়ে হাওড়াগামী বাস যায়। এতে যাতায়াতে সমস্যা হয় বইকী। পর্যাপ্ত অটো চলাচল করে। দু’-এক বার বদলে বদলে যাতায়াত করতে হয় এখান দিয়ে। এখানে কাছাকাছি নেই কোনও ট্যাক্সি স্ট্যান্ডও।

কাছাকাছি রয়েছে অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হোম। তবে নেই কোনও হাসপাতাল। প্রয়োজনে কিছুটা দূরে রোগীকে নিয়ে যেতে হয়। মাঝেমাঝে রাতের দিকে বহিরাগত কিছু ছেলে পাড়ার মধ্যে বিপজ্জনক ভাবে বাইক চালায়। এতে নজর না পড়লে যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

এ সব অবশ্য অভিযোগ নয়, নিজের ভাললাগার জায়গাটাকে ভাল রাখার ভাবনা মাত্র। শহরের অন্যত্র বাসস্থান থাকা সত্ত্বেও এ পাড়া ছেড়ে কখনও যেতে তো পারিনি। শিকড়ের টান আর মায়ার বন্ধনই যে ধরে রেখেছে এখানে!

লেখক শিক্ষক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gopi Krishna Paul Lane hangout Adda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE