Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মিছিল ও অবরোধে দিনভর পথ-যন্ত্রণা

শহরের এক প্রান্তে ভাঙা সেতু, তো অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত বিপজ্জনক বাড়ি! এই জোড়া যন্ত্রণার জেরে শহরে যানজট ছিলই। এর উপরে মঙ্গলবার, সপ্তাহের কেজো দিনে দফায় দফায় অন্য নানা ঝঞ্ঝাটে দিনভর দুর্ভোগের শিকার হলেন নিত্যযাত্রীরা।

সকালে অটো না পেয়ে নিত্যযাত্রীরা অবরোধ করায় উল্টোডাঙায় থমকে যায় যানবাহন

সকালে অটো না পেয়ে নিত্যযাত্রীরা অবরোধ করায় উল্টোডাঙায় থমকে যায় যানবাহন

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৩
Share: Save:

শহরের এক প্রান্তে ভাঙা সেতু, তো অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত বিপজ্জনক বাড়ি! এই জোড়া যন্ত্রণার জেরে শহরে যানজট ছিলই। এর উপরে মঙ্গলবার, সপ্তাহের কেজো দিনে দফায় দফায় অন্য নানা ঝঞ্ঝাটে দিনভর দুর্ভোগের শিকার হলেন নিত্যযাত্রীরা।

আম-নাগরিকের জীবন জটিল করতে এই ব্যস্ত শহরে ‘সুনাম’ রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এ দিন কিন্তু দেখা গেল, দলগত পরিচয় ছাড়াও যে কেউ শহরের যে কোনও প্রান্তে নিত্যযাত্রীদের চলার পথ কার্যত জবরদখল করে নিতে পারেন। পুলিশকর্তারাও মানছেন, সাধারণ অফিসকর্মী থেকে স্কুলের অভিভাবক কিংবা উদ্‌যাপনে মাতোয়ারা জনতা— নিজের স্বার্থে অন্যকে দুর্ভোগে ফেলায় কেউই কারও থেকে কম যান না।

শহর জুড়ে নানা বিক্ষোভে কলকাতা এ দিন হয়ে উঠেছিল কার্যত অবরোধ-নগরী। সকাল ১০টায় একযোগে উল্টোডাঙা ও যাদবপুরে শুরু হয় জোড়া অবরোধ। এর ফলে যাদবপুরে যাত্রীদের দশা হয়, মাথার পিছনে হাত ঘুরিয়ে নাক ধরতে চাওয়ার মতো! স্কুলের একটি নোটিস ঘিরে ভুল বোঝাবুঝিতে যাদবপুর বিদ্যাপীঠ স্কুলের সামনে রাস্তায় বসে পড়েছিলেন অভিভাবকেরা। স্থানীয় পুলিশের বক্তব্য, যাদবপুরের অবরোধ চলে সকাল ১০টা থেকে প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এর ফলে দক্ষিণমুখী গাড়ি যাদবপুর থানার মোড় থেকে ই এম বাইপাস বা গল্ফগ্রিনের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। আবার গড়িয়া-বাঘা যতীনের দিক থেকে উত্তরমুখী যানবাহনকে সুকান্ত সেতু ধরে ই এম বাইপাস হয়ে যেতে হয়।

শোভাযাত্রার জেরে গতিহীন সন্ধ্যার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট। মঙ্গলবার। —নিজস্ব চিত্র।

স্থানীয় সূত্রে খবর, এত ঘোরাঘুরির জেরে কয়েকটি রুটে অটোর ভাড়া বেড়ে যায়। রবীন্দ্র সরোবর থেকে যাদবপুর এইট-বি স্ট্যান্ডমুখী অটো কাটজুনগর হয়ে যাচ্ছিল। ভাড়া ১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয় বলে জানিয়েছেন নিত্যযাত্রীরাই।

উল্টোডাঙা স্টেশনের কাছেও দুর্ভোগ কিছু কম ছিল না। অভিযোগ, স্টেশনের কাছ থেকে সেক্টর ফাইভে যেতে বাস-অটো কিছুই পাচ্ছিলেন না যাত্রীরা। তাই তাঁরা রাজপথ আটকেছিলেন। পুলিশের অবশ্য দাবি, খুব একটা সংগঠিত ছিল না অবরোধ। তাতেও ভুগতে হয় দফায় দফায়। সকাল ১০টা ২০ মিনিট থেকে সওয়া ১১টা পর্যন্ত চলে অবরোধ।

কেন হল অবরোধ? স্থানীয় এক ট্র্যাফিক-কর্তার দাবি, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে পরিবহণ নিগমের এসি বা নন-এসি, কোনও বাসই বেশি বেরোয়নি। অটোও কম ছিল। তাতেই সমস্যা। এর ফলে গৌরীবাড়ি বা শোভাবাজারের দিক থেকে উল্টোডাঙার রাস্তায় বা সল্টলেকেও যান চলাচলের উপরে চাপ বাড়ে। দলীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে বিজেপি-র তরফেও দুপুরে ও বিকেলে খন্নার মোড় বা বেহালা ট্রাম ডিপোর মতো জায়গায় কয়েক মিনিট ধরে অবরোধ চলে।

মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে বেহালার দিকে বিকল্প পথ হাতড়ানো চলছে এখনও। তার সঙ্গে বাগড়ি মার্কেটের আগুনের জেরে ব্যস্ত ব্রেবোর্ন রোডেও দফায় দফায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। লালদিঘি থেকে জল নিয়ে ব্রেবোর্ন রোড ধরেই ক্যানিং স্ট্রিটে বাগড়ি মার্কেটের দিকে যাচ্ছিল দমকলের গাড়ি। তাতে হাওড়ার দিক থেকে কলকাতায় ঢোকা গাড়িগুলিকে বারবারই আটকে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে বিকেলে শুরু হয় মহরমের শোভাযাত্রা। ক্যানিং স্ট্রিট, কলুটোলা, কলেজ স্ট্রিট, বৌবাজার, লালবাজার হয়ে রবীন্দ্র সরণির গোলকোঠি অবধি চলেছে মিছিল। শহরের গতি তাতেও কিছুটা থমকে যায়। রাতে আবার ডিজে-র দাপটের মধ্যে গণেশ-বিশ্বকর্মার ভাসান। ফলে, কলকাতার পথ-যন্ত্রণা চলল গোটা দিনই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Traffic jam Road blockade
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE