সশব্দে: রাস্তার উপরেই ফাটছে শব্দবাজি। বুধবার, ভবানীপুরের কাঁসারিপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র
গত বছর কালীপুজোর রাতে পরিবেশকর্মীদের সংগঠন সবুজ মঞ্চের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছিল ৩৭টি। এ বার কালীপুজোর রাতে সেই অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯! তার মধ্যে শুধু কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকেই এসেছে ৮০টি।
শহরবাসীর অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, মঙ্গলবার রাতে শব্দবাজির দাপট অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তা হলে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ল কী ভাবে?
পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস বাড়ছে নাগরিকদের একাংশের। এটা তারই প্রমাণ। সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্তের কথায়, ‘‘২০১১ সাল থেকে এত অভিযোগ এক রাতে কখনও পাইনি। মনে হচ্ছে, মানুষের প্রতিবাদের সাহস বা়ড়ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও ভরসা জুগিয়েছে।’’
মঙ্গলবার রাত ১২টা ৫৩ মিনিটে মুচিপাড়া এলাকা থেকে ফোন পেয়েছিলেন নববাবুরা। বাজি ও লাউড স্পিকারের তাণ্ডবে অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন পেসমেকার বসানো এক বৃদ্ধ। রাত ২টো ২৭ মিনিটে বড়তলা থানা এলাকা থেকে শব্দবাজির তাণ্ডবে অতিষ্ঠ হয়ে ফোন করেন এক বৃদ্ধ দম্পতি। এ বছর এমন অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা গভীর রাতে ফোন করেছেন। এমনকি, কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের নাম-ঠিকানাও জানিয়েছেন।
পরিবেশকর্মীরাই বলছেন, এর আগে অভিযোগ জানাতে কেউ ফোন করলেও নিজের পরিচয় দিতেন না। কারণ, অভিযোগ জানালে পরে অভিযুক্তেরাই অনেক সময়ে অভিযোগকারীর বাড়িতে চড়াও হত। কিন্তু এখন আর সেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন না মানুষ। তাই এগিয়ে এসে প্রতিবাদ করছেন। ‘‘এমন নাগরিক প্রতিবাদ যত হবে, ততই শব্দবাজির দাপট কমবে,’’ বলছেন নববাবু।
কলকাতা পুলিশের হিসেব অবশ্য বলছে, এ বছর তাদের কাছে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। গত বছর ১৬১টি অভিযোগ মিলেছিল। এ বছর সেই সংখ্যা নেমেছে ৯৮য়ে। সব মিলিয়ে ২১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বছর ধৃতের সংখ্যা ছিল ১৮৭। তবে পরিবেশকর্মী সংগঠনের কাছে জমা পড়া কলকাতা সংক্রান্ত অভিযোগ কিন্তু শুধু কলকাতা পুলিশের আওতাধীন এলাকা থেকে আসেনি, শহরতলির বৃহত্তর কলকাতাও তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। দমদম, সোনারপুর ও হাও়়ড়ার মতো এলাকায় কলকাতার থেকেও বেশি শব্দবাজি ফেটেছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।
কলকাতা পুলিশের এ-ও দাবি, অভিযোগ মেলার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেহালা থানা মঙ্গলবার রাতে ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে। বাজেয়াপ্ত করেছে ২৫০ কিলোগ্রাম বাজি। বাঁশদ্রোণীতে ২৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ধরপাক়ড়ের মধ্যে একটি ঘটনা ‘বিরল’ বলে দাবি করেছে পুলিশ সূত্র। মঙ্গলবার রাতে রিজেন্ট পার্ক এলাকার নেহরু কলোনিতে বিকট শব্দে বাজি ফাটছে বলে লাগাতার অভিযোগ আসছিল। পুলিশ গিয়ে দেখে, এক যুবক ১০টি চকলেট বোমা জড়ো করে একসঙ্গে ফাটাচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, এ ভাবে চকলেট বোমা ফাটাতে সচরাচর দেখা যায় না।
অনেকেই বলছেন, কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ যেমন কম জমা পড়েছে, উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে ধৃতের সংখ্যাও। পুলিশ সূত্রের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে দু’-একটি শব্দবাজি ফাটিয়েই পালিয়ে গিয়েছেন অভিযুক্তেরা। ফলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও তাঁদের খোঁজ পায়নি। এর পাশাপাশি, আরও একটি দিক নজরে এসেছে পুলিশের। তা হল, নাবালকদের শব্দবাজি ফাটানোর ঘটনা। একাধিক পুলিশ অফিসার জানান, বহু ক্ষেত্রেই ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, নাবালকেরা শব্দবাজি ফাটাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বাজি বাজেয়াপ্ত করা হলেও ওই নাবালকদের গ্রেফতার করা হয়নি। তার বদলে তাদের অভিভাবকদের ডেকে ধমকে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘অভিভাবকদের প্রশ্রয়েই নাবালকেরা শব্দবাজি ফাটায়। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদেরই সচেতন হওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy