Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

হাসপাতালের সামনে তারস্বরে বক্স বাজিয়েই পুণ্যযাত্রা

নিজস্ব সংবাদদাতাএকে শব্দের দাপাদাপি, তার উপরে রাস্তার উপরে মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠানের আয়োজন। এর ফলে যশোর রোডের বেলগাছিয়া এলাকায় দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

বেলাগাম: পেল্লায় বক্সের উপরে বসেই গন্তব্যের পথে। বাগবাজারে। ছবি: স্বাতী ভট্টাচার্য।

বেলাগাম: পেল্লায় বক্সের উপরে বসেই গন্তব্যের পথে। বাগবাজারে। ছবি: স্বাতী ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৩১
Share: Save:

তারস্বরে বেজে চলেছে, ‘বাবা কা বুলাওয়া আয়া হ্যায়...।’ তার তালে তালে চলেছে উদ্দাম নৃত্য। রাস্তা দিয়ে ডিজে বক্স বাজিয়ে চলে যাচ্ছে একের পরে এক পুণ্যার্থী বোঝাই গাড়ি। দৃশ্যটা আর জি কর হাসপাতালের সামনে, শনিবার রাতের। অথচ হাসপাতালের সামনে লাগানো রয়েছে ‘সাইলেন্স জোনে’র সাইনবোর্ড।

প্রতি বছর এই সময়ে যশোর রোড, ভিআইপি রোড, দমদম রোড ধরে অসংখ্য মানুষ উত্তর ২৪ পরগনার চাকলা, কচুয়ায় জল ঢালতে যান। তারস্বরে বাজনার পাশাপাশি পুণ্য অর্জনের এই যাত্রায় এ বছর শামিল হয়েছে বাইকবাহিনীর উল্লাস, রাস্তায় স্তূপাকৃত প্লাস্টিক, থার্মোকলের প্লেট। একদল যুবক মুখে বিচিত্র সব শব্দ বার করে গাড়িতে রাখা বড় সাউন্ডবক্সের তালে তালে রাস্তা জুড়ে নেচে চলেছে। সঙ্গে অঙ্গভঙ্গি। রাত সাড়ে ১২টাতেও সেই দৃশ্য অব্যাহত।

আর জি কর হাসপাতালের সামনে বক্স বাজতে দেখে কালিন্দির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘হাসপাতালের ঠিক বাইরে বিকট শব্দে বক্স বাজছে। হাসপাতালে তো পুলিশও আছে। অথচ কেউ নিষেধ করার নেই!’’ এই দৃশ্য গত বছরও দেখা গিয়েছিল। তবে এ বার তা আরও বেশি বলে মানছেন মানুষ। এ সবের জেরে গত দু’দিন ধরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার বিশৃঙ্খল অবস্থা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে। সব থেকে বেশি আপত্তি শোনা গিয়েছে বিকট শব্দে সাউন্ড বক্সের ব্যবহার।

পুণ্যার্থীদের ফেলা আবর্জনায় ভরেছে যশোর রোড। শনিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

একে শব্দের দাপাদাপি, তার উপরে রাস্তার উপরে মঞ্চ বেঁধে অনুষ্ঠানের আয়োজন। এর ফলে যশোর রোডের বেলগাছিয়া এলাকায় দুর্ভোগের মাত্রা দ্বিগুণ হয়ে যায়। শনিবার এই পরিস্থিতিতে পাতিপুকুরগামী বাসগুলিকে পাইকপাড়ার ভিতর দিয়ে দত্তবাগানের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সুযোগে বেলগাছিয়া মেট্রো থেকে লেকটাউনগামী অটোর ভাড়া একলাফে বেড়ে হয় ১০ টাকা। পথঘাটের অবস্থাও ততোধিক শোচনীয়। বাঁকধারীদের পরিষেবা দিতে কয়েক ফুট অন্তর প্যান্ডেল বেঁধে জল, খিচুড়ি, পায়েস, ছোলা, বাতাসা বিলি করা হচ্ছিল। যে পাত্রে তা পুণ্যার্থীদের দেওয়া হচ্ছিল, তাঁরা খেয়েদেয়ে দিব্যি সেগুলি রাস্তার উপরে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আবর্জনার পাহাড় হচ্ছে দমদম রোড, যশোর রোড, ভিআইপি রোড।

বাঙুরের বাসিন্দা শুচিস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্ন, ‘‘প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের তরফে এত প্রচার হচ্ছে। অথচ এ দিকেই কারও কোনও নজর নেই! কী হচ্ছে এ সব?’’ বাগুইআটির বাসিন্দা তমোঘ্ন সেন বলেন, ‘‘গঙ্গাসাগর যাত্রা ঘিরে আগে চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি হত। এখন সেটা বদলেছে। এ ক্ষেত্রেও প্রশাসনের কড়া হওয়া উচিত।’’ পাইকপাড়ার বাসিন্দা গার্গী ভাদুড়ির নজরে অবশ্য এ ক্ষেত্রে আইন ভাঙার দিকটাই উঠে আসছে। ‘‘একটা বাইকে তিন জন বসছেন। কারও মাথায় হেলমেট নেই, কানে মোবাইল। পুলিশের পাশ দিয়েই তীব্র গতিতে চলে যাচ্ছেন তাঁরা। সব দেখেও নির্বিকার! বিশেষ দিনে কি নিয়মে ছাড় দেওয়া জরুরি!’’— বলছেন গার্গী।

প্লাস্টিকে প্রায় ঢেকেছে যশোর রোড। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় হতাশা। তিনি বলেন, ‘‘প্লাস্টিক বর্জন করতে পুরসভা বছরভর সচেষ্ট থাকে। যাঁরা জলসত্রের আয়োজন করেছেন, তাঁরা সে সব জানেন। তাঁদেরই উচিত পুণ্যার্থীদের নির্দিষ্ট জায়গায় গ্লাস, বাটি, প্লেট ফেলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখার।’’

পরিবেশকর্মী তথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন ল’অফিসার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তারকেশ্বর যাত্রা নিয়ে আমাদের পরিবেশ অ্যাকাডেমির তরফে স্থানীয় পুর প্রশাসনকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, রাস্তার মোড়ে ডাস্টবিন, কয়েক ফুট অন্তর অস্থায়ী শৌচালয় ও মানুষ যাতে যত্রতত্র প্লাস্টিক না ফেলেন সে বিষয়ে প্রচার করতে। কিন্তু সে সব না মানায় নারকীয় পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সক্রিয় হওয়া উচিত। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নিয়মাবলিতে প্রতিটি পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের দায়িত্বও নির্দিষ্ট করা রয়েছে।’’

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘রাস্তাঘাট আর পরিবেশ যাতে দূষিত না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল। ডিজে বক্স বাজানোর তো কোনও প্রশ্নই ওঠে না। প্রশাসনিক তৎপরতার পাশাপাশি মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আগামী দু’দিনের মধ্যে পথঘাট পরিষ্কার করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE