কলকাতা বিমানবন্দর। —ফাইল চিত্র।
রানওয়ের কাছে ট্যাক্সিওয়েতে দাঁড়িয়ে ঘাস পরিষ্কার চলছিল। যা দেখে শেষ মুহূর্তে বিমান দাঁড় করিয়ে দেন পাইলট। না হলে বুধবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ঘটনার তদন্ত করছেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বুধবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) টাওয়ার থেকে খবর আসে, রোমিয়ো ট্যাক্সিওয়েতে ঘাস পড়ে আছে। এক অফিসার জানান, সম্প্রতি ঘাস কেটে একটু দূরে রাখা হয়েছিল। বুধবার সন্ধ্যায় হাওয়ায় উড়ে সেই ঘাস এসে জমা হয় রোমিয়ো ট্যাক্সিওয়েতে। বিমানবন্দরের জনা আটেক ঝাড়ুদারকে নিয়ে এক অফিসার চলে যান সেই ঘাস পরিষ্কার করতে।
রাত দশটার ঠিক পরে বিরাটির দিক থেকে প্রধান রানওয়েতে নামে বেঙ্গালুরু থেকে আসা একটি বিমান। প্রধান রানওয়ের ডান দিকে রয়েছে পরপর ট্যাক্সিওয়ে। বিরাটির দিক থেকে নামলে বিমানের যা গতি থাকে, তাতে প্রথম কিলো, আলফা, ব্রাভো ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে রানওয়ে খালি করে বেরিয়ে যাওয়া যায় না। কারণ, অত তাড়াতাড়ি বিমানের গতি কমানো সম্ভব নয়।
মূলত রোমিয়ো ও তার পরে চার্লি ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে বিমান রানওয়ে থেকে বেরিয়ে টার্মিনালের দিকে চলে আসে। যে অফিসারেরা রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে দেখভালের দায়িত্বে থাকেন, তাঁদের সঙ্গে এটিসি অফিসারদের সমন্বয় রাখতে হয়। কোন বিমান কোন ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে ঢুকছে-বেরোচ্ছে, সেই তথ্য আদানপ্রদান করতে হয়।
ওই রাতে রানওয়েতে নেমে বোয়িং ৭৩৭ বিমানটির চার্লি ট্যাক্সিওয়ে দিয়ে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু ভুল করে সেটি রোমিয়োয় ঢুকে যায়। যাঁরা তখন ঘাস পরিষ্কার করছিলেন, বৃহস্পতিবার তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘এখনও বুক ধড়ফড় করছে। বিমান যে রোমিয়োতে চলে আসবে, একেবারেই বুঝিনি। আচমকা চোখ তুলে দেখি, নাকের সামনে বিমান। প্রচণ্ড হাওয়া বিমানের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে চিৎকার করে আমরা যে যে দিকে পারি, পালাই। আমি লাফিয়ে পিচ ছেড়ে ঘাসজমিতে সরে আসি।’’
ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, বেশি গতিবেগ থাকা বিমানের ইঞ্জিনের কাছে কোনও বস্তু চলে এলে জেট ইঞ্জিন তাকে নিজের দিকে টেনে নেয়। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, ‘‘বিমানের কাছে পাখি চলে এলে তা সরাসরি ইঞ্জিনে ঢুকে যায়। তাতে ইঞ্জিনের ক্ষতি হয়। মানুষের ওজন অনেক বেশি, তাই বিমানের চার-পাঁচ ফুটের মধ্যে চলে এলেই এই ধরনের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।’’
এক পাইলটের কথায়, ‘‘বিমান যখন নামে, তখন তার গতিবেগ ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার থাকে। নামার পরে খুব তাড়াতাড়ি গতি কমাতে হয়। কারণ, বেশির ভাগ ট্যাক্সিওয়ে সমকোণে থাকে বলে কলকাতায় রানওয়ে থেকে টার্মিনালের দিকে যাওয়ার ট্যাক্সিওয়েতে ঢুকতে বিমানকে প্রায় দাঁড় করিয়ে ফেলতে হয়। রোমিয়ো যে হেতু প্রায় ৪৫ ডিগ্রি কোণে রয়েছে, তাই সেখানে ঢুকতে গতি একেবারে কমাতে হয় না। ‘র্যাপিড ট্যাক্সিওয়ে’ রোমিয়োয় ঢোকার মুহূর্তে তাই বিমানের গতি ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটারের মতো থাকে।’’ সেই সময়ে কোনও মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে তাঁর মৃত্যু তো হবেই, বিমানে আগুনও লাগতে পারে।
ওই রাতে রোমিয়োয় ঢুকে পাইলট যখন সামনে বেশ কয়েক জনকে ছোটাছুটি করতে দেখেন, তিনি বিমানটি দাঁড় করিয়ে দেন। ঝাড়ুদারেরা সরে গেলে বিমানটি টার্মিনালে পৌঁছয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy