চেনা ছবি। — শৌভিক দে
বাঙুর পারে। কিন্তু একই পুরসভার অন্য এলাকাগুলি পারে না। কারণ, বাসিন্দাদের সমঝদারির অভাব। প্লাস্টিক মুক্ত করার অভিযান প্রসঙ্গে এ ভাবেই বাঙুরের বাসিন্দাদের পিঠ চাপড়ালেন দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান। বাঙুর এলাকাকে প্লাস্টিক মুক্ত করার মূল উদ্যোক্তা মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের সমঝদারি নিয়ে এই উক্তি কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে তো বলতে হবে রাজ্যের যত সমঝদার মানুষ এক মাত্র বাঙুরেই বাস করেন!’’
পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, পুরসভার চেষ্টা সত্ত্বেও ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ জনসচেতনতার অভাব। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই যুক্তিতে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। তাঁদের প্রশ্ন, প্রশাসন কি ঠুঁটো? বাসিন্দাদের অভিযোগ, উন্নয়ন হয় শুধু বাঙুরেই।
পুর-কর্তৃপক্ষ অন্য এলাকার দিকে ঘুরেও তাকান না। পুরবাসীদের মতে, এ বারও সামান্য বৃষ্টিতেই ফের ভেসেছে গোটা দক্ষিণ দমদম পুর এলাকা। তাই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আগে থাকতে বাসিন্দাদের উপর দায় চাপিয়েছে প্রশাসন।
বাঙুরের ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হওয়ায় এখন পাশের ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৃগাঙ্কবাবু। তাঁর কথায়: ‘‘কড়া হাতে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ফাইন ধার্য করতেই পারত প্রশাসন। আসলে এই কাজে দক্ষিণ দমদম পুর প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। নিয়ম রক্ষার্থে কাজ হচ্ছে। তাতে বড় পরিবর্তন আনা কখনওই সম্ভব নয়।’’
২০০৭-এ রাজ্য সরকার ৪০ মাইক্রনের কম এবং ১২/১৬ ইঞ্চি সাইজের ছোট প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। তবু নিয়ম ভেঙে এর দেদার ব্যবহার চলছে। ব্যতিক্রম বাঙুর। ২০০১ সাল থেকেই সেখানে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার অভিযান শুরু হয়।
যথেচ্ছ প্লাস্টিকের ব্যবহারের ফলে প্রতি বছর নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে নাগেরবাজার, লেকটাউন, দমদম পার্ক, অর্জুনপুর-সহ দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে। পুরসভার দাবি, ৭০ শতাংশ নর্দমা ঢাকা হলেও প্লাস্টিক আটকে জল জমে যায়।
দক্ষিণ দমদম পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নিয়মিত দোকান-বাজারে অভিযান চলে। ৪০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বাজেয়াপ্তও হয়। কিন্তু সচেতনতার অভাব রয়েছে। ফাইন চালু করে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত।’’
মৃগাঙ্কবাবুর দাবি, ‘‘শুধু প্রচার আর মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু হবে না। বাঙুরে বিভিন্ন ক্লাব, দোকানদার, বাজার কমিটি এবং রাজনৈতিক দল নিয়ে একাধিক বার আলোচনা, মিটিং হত। শুধু মাত্র ৪০ মাইক্রনের কমই নয়, যে কোনও ধরনের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের। সেটাই বাঙুর করে দেখিয়েছে। বাঙুর নিচু এলাকা। তাই জল সরাতে এর পাশাপাশি সারা বছর পাম্প চালাতে হয়।’’ পুর-কর্তৃপক্ষের যুক্তি ফাইন নিতে আইনগত সমস্যা থাকবে। তাই নেওয়া যাবে না। আমরা দেখব কলকাতা পুরসভা এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ করে। আমরাও তাই অনুসরণ করব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy