দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে একটি টাটা সুমো। সেটিকে থামাতে রাস্তার মাঝখানে রাখা গার্ডরেলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়াচ্ছেন তিন পুলিশকর্মী। তাঁদের তোয়াক্কা না করেই পাশ কাটিয়ে যেতে গিয়ে সজোরে ধাক্কা রেলিংয়ে। গাড়ি থেকে নেমে এলেন ষণ্ডামার্কা পাঁচ-ছ’জন যুবক। কেন রাস্তার মাঝে রেলিং রেখে গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে পুলিশের উপরে চড়াও হলেন তাঁরা। সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ। প্রতিবাদ করতেই রাস্তায় ফেলে তিন পুলিশকর্মীকে মারধর শুরু করেন ওই যুবকেরা। পরে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেন তাঁরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, পুলিশকর্মী আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় নবতম সংযোজন এই ঘটনাটি ঘটে বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ, গার্ডেনরিচ থানার নেচার পার্কের সামনে। তবে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝির হাতে পুলিশকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা এবং গ্রিন পুলিশকে হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল সাংসদ দোলা সেনের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নিলেও গার্ডেনরিচের এই ঘটনায় তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ভোরের মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত তিন যুবককে।
পুলিশকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, শীর্ষ পুলিশকর্তারা যদি নিচুতলার কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার অন্য ঘটনাগুলিতে ব্যবস্থা নিতেন, তা হলে হয়তো শহরের বুকে এ ভাবে একের পর এক পুলিশকর্মীকে আক্রান্ত হতে হতো না। তাঁদের আরও অভিযোগ, খোদ থানার ওসিকে নিগ্রহ করার পরেও গ্রেফতার করা হয়নি আলিপুরের তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহাকে। তেমনই এনআরএস হাসপাতালে তিন পুলিশকর্মী জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে মার খাওয়ার পরেও কাউকে গ্রেফতার করার সাহস দেখাননি পুলিশকর্তারা। পুলিশের নিচুতলার ওই অংশের অভিযোগ, গার্ডেনরিচের ঘটনায় অভিযুক্তেরা সকলেই এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতী। তাই কয়েক জনকে গ্রেফতার করার সাহস দেখিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার রাত আড়াইটে নাগাদ নেচার পার্কের কাছে রাস্তায় গার্ডরেল রেখে ‘নাকা চেকিং’ করছিলেন গার্ডেনরিচ থানার এএসআই সৌরভ কুমার বড়ুয়া, কনস্টেবল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং হোমগার্ড কাঞ্চন সরকার। ওই তিন পুলিশকর্মী জানান, গার্ডেনরিচের দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগতির টাটা সুমো তাঁদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে তারাতলার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে গার্ডরেলে ধাক্কা মারে। কেন বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলছে, তা জানতে ওই তিন পুলিশকর্মী এগোতেই নেমে আসেন ছয় যুবক। তাঁরা পাল্টা জানতে চান, কেন মাঝরাস্তায় রেলিং রাখা হয়েছে। এক পুলিশকর্মী তাঁর আধিকারিকদের জানিয়েছেন, ওই যুবকদের আটকানো মাত্রই তাঁরা নিজেদের বন্দর এলাকার একটি থানার ওসির আত্মীয় বলে দাবি করে হুমকি দিতে থাকেন। এর পরেই তাঁদের রাস্তায় ফেলে মারধর শুরু করেন ওই যুবকেরা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা সংখ্যায় ছ’জন হওয়ায় খুব সহজেই পুলিশকর্মীদের কাবু করে ফেলেন তাঁরা। রাস্তায় ফেলে চলে এলোপাথারি চড়-কিল-ঘুষি। পরে গাড়ি হাঁকিয়ে এলাকা ছাড়েন হামলাকারীরা।
লালবাজার সূত্রে খবর, ঘটনার সময়ে এক পুলিশকর্মী ওই টাটা সুমোর নম্বর লিখে রেখেছিলেন। তদন্তকারীরা তা থেকেই জানতে পারেন, গাড়িটির মালিকের বাড়ি রবীন্দ্রনগর এলাকার ময়লা ডিপোতে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ভোরের আলো ফোটার আগে সেখানে হানা দেন গার্ডেনরিচ থানার পুলিশ। মালিকের কাছ থেকে জানা যায় চালকের নাম। তাঁকে জেরা করেই পরে গ্রেফতার হয় বাকি দু’জন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা হলেন, বিষ্ণু সিংহ, গৌতমকুমার সাউ এবং বিশাল কেজরি। তিন জনেরই বাড়ি রবীন্দ্রনগরেরই তেনজিং গ্রাউন্ড রোডে। এঁদের মধ্যে বিষ্ণু গাড়িচালক হলেও বাকিরা প্রোমোটিং-এর সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy