Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাবে নিয়ে গিয়ে ‘মার’ পুলিশকে

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই মোটরবাইক আরোহী কলকাতা পুলিশের এক অফিসার। ডিউটি সেরে সাদা পোশাকে বাড়ি ফিরছিলেন। আর পিছনের গাড়িতে ছিলেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু। ওই কাউন্সিলর ও তাঁর দলবলই পুলিশ অফিসারকে নিগ্রহ করেছেন বলে লালবাজার সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে।

এই ক্লাবেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

এই ক্লাবেই মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১১
Share: Save:

মানিকতলা রেল ব্রিজের কাছে লাল সিগন্যাল দেখে ‘স্টপ’ লাইনের আগে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন এক মোটরবাইক আরোহী। পিছনে দাঁড়িয়ে একটি গাড়ি। বাইক আরোহী কেন ওই গাড়িকে যাওয়ার রাস্তা করে দিলেন না, তা নিয়ে বেধে যায় বিবাদ। অভিযোগ, ওই বাইক আরোহীকে এর পরে কাছের একটি ক্লাবে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়। বৃহস্পতিবারের ঘটনা।

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই মোটরবাইক আরোহী কলকাতা পুলিশের এক অফিসার। ডিউটি সেরে সাদা পোশাকে বাড়ি ফিরছিলেন। আর পিছনের গাড়িতে ছিলেন ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু। ওই কাউন্সিলর ও তাঁর দলবলই পুলিশ অফিসারকে নিগ্রহ করেছেন বলে লালবাজার সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। আরও অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের এক হোমগার্ডও নিগ্রহকারীদের মধ্যে ছিলেন। নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়েও রেহাই পাননি জোড়াসাঁকো থানার ওই অফিসার রুদ্র শেখর।

আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্সি ছাড়ছেন আরও এক অধ্যাপক

লালবাজার জানিয়েছে, ওই অফিসার থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের না করলেও ঘটনার গুরুত্ব বুঝে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ডিসি-কে (ইএসডি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, কেন ওই অফিসারকে নিগৃহীত হতে হল, কারা ওই নিগ্রহের সঙ্গে জড়িত, সব কিছু খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ডিসি-কে। তাঁর রিপোর্ট পাওয়ার পরেই আইনি প্রক্রিয়া শুরু করবে লালবাজার।

অভিযুক্ত কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুন্ডু ওই পুলিশ অফিসারকে নিগ্রহের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘‘সে দিন কথা কাটাকাটি হয়েছিল মাত্র। থানায় গিয়ে মিটমাট করে নেওয়া হয়েছে। এর বেশি কিছু হয়নি।’’

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রাত দশটা নাগাদ মানিকতলা মেন রোড দিয়ে মোটরবাইক চালিয়ে বেলেঘাটার বাড়িতে ফিরছিলেন রুদ্রবাবু। মানিকতলা রেল ব্রিজ পেরোনোর পরে বাগমারি রোড ও মানিকতলা মেন রোডের মোড়ে লাল সিগন্যাল দেখে দাঁড়িয়ে যান তিনি। সেই সময়ে তাঁর বাইকের পিছনে দ্রুত গতিতে একটি গাড়িতে চলে আসে। তাতে ছিলেন কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জনবাবু। কেন তাঁর গাড়িকে রাস্তা দেওয়া হল না, তা নিয়ে প্রথমে গাড়ির চালক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগ, এর পরে গাড়ি থেকে নেমে রুদ্রবাবুর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন কাউন্সিলরও।

লালবাজার সূত্রে অভিযোগ, এর মধ্যেই কাউন্সিলরের অনুগামীরা সেখানে উপস্থিত হয়ে অফিসারকে হেনস্থা করেন। তাঁদের মধ্যে মানিকতলা থানার এক হোমগার্ডও ছিলেন। অভিযোগ, এর পরে ওই অফিসারকে স্থানীয় একটি ক্লাবে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়।

অভিযুক্ত কাউন্সিলর এবং তাঁর অনুগামীরা গোটা বিষয়টি হাল্কা করে দেখাতে চাইলেও এলাকার মানুষ কিন্তু সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘শান্তিবাবু ও তাঁর লোকজন পুলিশ পিটিয়ে যে কাণ্ডটা করলেন, তা অত্যন্ত লজ্জাজনক।’’ যেখানে নিয়ে গিয়ে ওই অফিসারকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ, সেই ক্লাব সংলগ্ন একটি বাড়ির বাসিন্দা এক মহিলার কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার রাত তখন সা়ড়ে দশটা। আমি পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ক্লাবের সামনে খুব ভি়ড়। কাউন্সিলর ছিলেন। আর এক জনের মাথা থেকে রক্ত পড়ছিল।’’ এ দিন ওই ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, দরজা খোলা। এক জন ঘুমোচ্ছেন। ক্লাবের লোকজন কোথায় জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘‘কাউকে পাবেন না এখন।’’

পুলিশ জানায়, বচসার সময়ে ওই অফিসার প্রথমে নিজের পরিচয় দেননি। লালবাজারের দাবি, দু’পক্ষের বচসার সময়ে কেউই কারও পরিচয় জানতেন না। পুলিশের একটি অংশের দাবি, পরে ওই অফিসার নিজের পরিচয় দিলেও ছাড় পাননি। ঘটনার পরে মানিকতলা থানায় নিয়ে যাওয়া হয় ওই অফিসারকে। লালবাজারের দাবি, হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। এই ঘটনা প্রসঙ্গে স্থানীয় বিধায়ক সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে নিশ্চয়ই প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দলের এক কাউন্সিলর পুলিশের গায়ে হাত তুলছেন, এটা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Lal Bazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE