Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

‘দুষ্টু দুষ্কৃতী’ ধরতে হেমন্তেও ঘাম ছুটল পুলিশের

‘দুষ্কৃতী’ ধরতে বনরক্ষী কেন? কারণ, এই দুষ্কৃতী মানুষের ‘পূর্বপুরুষ’। একটি প্রাপ্তবয়স্ক লালমুখো বাঁদর! তার উপদ্রবেই গত দিন তিনেক ধরে কার্যত তটস্থ ছিলেন ফিয়ার্স লেন, ছিদাম মুদি লেনের বাসিন্দারা।

ছিদাম মুদি লেন থেকে উদ্ধার হওয়া সেই বাঁদর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

ছিদাম মুদি লেন থেকে উদ্ধার হওয়া সেই বাঁদর। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৫
Share: Save:

এমন ‘দুষ্কৃতী’র খপ্পরে বোধ হয় আগে পড়েনি পুলিশ! বৌবাজারের এঁদো গলির মধ্যে সে কখন কোথায় সেঁধিয়ে যাচ্ছিল, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তার হদিস পাচ্ছিলেন না বৌবাজার থানার দুই সাব ইনস্পেক্টর। ঘণ্টা দেড়েকের তল্লাশির পর দেখা গেল, ছিদাম মুদি লেনের একটি একতলা বাড়ির ঘরে ঘাপটি মেরে রয়েছে সে। জাল দিয়ে বাড়ি ঘিরে, হেলমেটে মাথা মুড়ে শেষমেশ ওই ‘দুষ্কৃতীকে’ পাকড়াও করেন বনরক্ষীরা।

‘দুষ্কৃতী’ ধরতে বনরক্ষী কেন? কারণ, এই দুষ্কৃতী মানুষের ‘পূর্বপুরুষ’। একটি প্রাপ্তবয়স্ক লালমুখো বাঁদর! তার উপদ্রবেই গত দিন তিনেক ধরে কার্যত তটস্থ ছিলেন ফিয়ার্স লেন, ছিদাম মুদি লেনের বাসিন্দারা। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ ইমরান বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে এলাকার একটি গাছে আচমকা এসে ডেরা বাঁধে ওই বাঁদর। তার পর থেকে কখনও কারও বাড়ি থেকে রুটি নিয়ে পালাচ্ছিল, কারও ছাদ থেকে শুকোতে দেওয়া জামা তুলে গাছে নিয়ে যাচ্ছিল। কখনও ছেলেমেয়েদের দাঁত খিঁচিয়ে চড় মারছিল।’’

এই উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে বৌবাজার থানার দ্বারস্থ হন এলাকার বাসিন্দারা। মানুষ দুষ্কর্ম করলে হাজতে পুরতে পারে পুলিশ। কিন্তু বাঁদরকে গ্রেফতার করবে কোন ধারায়? ‘‘সেই কারণেই তো বন দফতরে খবর দেওয়া হয়েছিল,’’ বলছেন এক পুলিশকর্তা।

এ দিন সকালে বন দফতর ও পুলিশের যৌথ দল ফিয়ার্স লেনে যায়। ফিয়ার্স লেনে একটি এবং ছিদাম মুদি লেনে কলার টোপ দিয়ে দু’টি খাঁচা পাতা হয়। কিন্তু কোথায় সে? খাঁচার ত্রিসীমানায় বাঁদরের দেখা নেই। এরই মধ্যে খবর এল, এলাকায় একটি সরু গলির মধ্যে দেখা গিয়েছে তাকে। গিয়ে দেখা গেল, সে তত ক্ষণে চলে গিয়েছে পাশের গলিতে! ছোটাছুটিতে হেমন্তের সকালেও কপালে ঘাম জমছিল প্রৌঢ় সাব ইনস্পেক্টর কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তরুণ অফিসার নীলাদ্রি বৈদ্যও হাল ছাড়ার পাত্র নন। অলিগলিতে তল্লাশি চালিয়ে খোঁজ মিলল। ছিদাম মুদি লেনের একটি বাড়িতে ঢুকে তখন গা এলিয়ে বসে রয়েছে সে! তখনই বন দফতরের কর্মীরা মাছ ধরার জাল দিয়ে বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। কিন্তু বাঁদর তো ঘরের ভিতর! পাকড়াও করা হবে কী করে? শেষমেশ দুই বনরক্ষী মাথায় পুলিশের হেলমেট পরে এবং হাতে বাঁদর ধরার সাঁড়াশি নিয়ে ঘরে ঢোকেন। তার পর প্রায় চোর ধরার কায়দায় বাঁদরটিকে পাকড়াও করেন।

বন দফতরের আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, বাঁদর খেলা দেখিয়ে অনেক মাদারি টাকা আয় করেন। তাঁদের কারও কাছ থেকে বাঁদরটি চলে এসেছে। অনেক সময়ে বুড়ো হয়ে গেলে বাঁদরকে ছেড়েও দেন তাঁরা। এই বাঁদরটিও তেমন ভাবে লোকালয়ে চলে আসতে পারে। শহরে এসে খাবারের অভাবে এবং আতঙ্কিত হয়ে সে উপদ্রব করেছে।

পাকড়াও করার পরে ‘দুষ্টু’ বাঁদরকে খাঁচায় পুরে নিয়ে চলে যায় বন দফতর। হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন সন্ত্রস্ত বাসিন্দারা। পুলিশও বলছে, বাঁদর ধরার থেকে অন্তত চোর ধরা অনেক সোজা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Monkey Bowbazar Chidam Mudi Ln
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE