Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অন্তর্ঘাত কি না, সন্দেহ পুলিশেও

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুনে এই সন্দেহ হয়েছে পুলিশের। লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার শেষ রাতে আগুন লাগার সময় সেখানে উপস্থিত মুটে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা জানান, ফুটপাতের ডালার পাশাপাশি একতলাতেও আগুন দেখা গিয়েছিল। যা পরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাগড়ি মার্কেটে।

বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড।—ফাইল চিত্র।

বাগড়ি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৬
Share: Save:

ফুটপাতের সুগন্ধির ডালাই বাগড়ি মার্কেটের আগুনের উৎস বলে প্রথম থেকে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এখন এই প্রশ্ন ও সন্দেহ ঘোরালো হয়েছে যে, ফুটপাতের সঙ্গে ওই বাজারের একতলাতেও কি লেগেছিল আগুন?

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীর বক্তব্য শুনে এই সন্দেহ হয়েছে পুলিশের। লালবাজার সূত্রের খবর, শনিবার শেষ রাতে আগুন লাগার সময় সেখানে উপস্থিত মুটে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা জানান, ফুটপাতের ডালার পাশাপাশি একতলাতেও আগুন দেখা গিয়েছিল। যা পরে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বাগড়ি মার্কেটে।

পুলিশ জেনেছে, ফুটপাতে সুগন্ধির ডালার পাশে একটি বিদ্যুৎ বক্স রয়েছে। যার দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। ঘটনার পরে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের মনে হয়েছিল, ওই বিদ্যুৎ বক্স থেকেই সুগন্ধির ডালায় আগুন লেগেছিল। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য শোনার পরে পুলিশ বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না। রাজ্য মন্ত্রিগোষ্ঠীর প্রধান পার্থ চট্রোপাধ্যায় জানান, বারবার শনিবারেই কেন আগুন লাগে আর রবিবার কেন তা শেষ হয়, তা নিয়ে এ দিন মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা-ও দেখা হবে। তিনি বলেন, ‘‘কী করে বাগড়ি মার্কেটে আগুন লাগল, তা দেখছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। ওই বাড়ি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আইনকানুনের ধার ধারছেন না। পুরো ঘটনার উপরে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নজর রাখছেন। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে বাড়ির স্বাস্থ্য খতিয়ে দেখা হবে।’’

প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, সেই সুগন্ধির ডালার মালিক সাঁকরাইলের এক বাসিন্দা। তিনি মেটিয়াবুরুজের মহম্মদ জাহাঙ্গির নামে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সেটি ভা়ড়া নিয়েছিলেন। বাগড়ি মার্কেটের ‘সি’ গেটের পাশে দু’টি ডালা রয়েছে জাহাঙ্গিরের। সেই দু’টি ডালায় খেলনা বিক্রি করা হত। তা আগুনে পুড়ে গিয়েছে। জাহাঙ্গির এ দিন বলেন, ‘‘ঘটনার পরে পুলিশ আমার সঙ্গে একাধিক বার কথা বলেছে।’’ তবে সুগন্ধির ডালার মালিক তাঁর সঙ্গে কথা বলেননি বলে জানান জাহাঙ্গির। তদন্তকারীরা জানান, সাঁকারাইলের বাসিন্দা ওই ডালাওয়ালার খোঁজ চলছে। বাগড়ি মার্কেটের ক্যানিং স্ট্রিটের ফুটপাতে বসা অন্য হকারদের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ।

ফরেন্সিক বিভাগের অনুমান, ইলেকট্রিক্যাল বক্স থেকেই আগুন ছড়িয়েছিল। এ দিন তারা বক্সটি বাজেয়াপ্ত করে। পুলিশ জানিয়েছে, ফরেন্সিক দল নমুনা সংগ্রহ করলেও আগুনের উৎস সম্পর্কে কিছু জানায়নি। বাগড়ির অগ্নিকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন জনের খোঁজ পায়নি লালবাজার। দমকল এবং পুলিশের দেরিতেই ওই তিন প্রভাবশালী ব্যক্তি পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলেও তদন্তকারীরা তা মানতে নারাজ। পুলিশের দাবি, অভিযোগ দায়ের করার এক দিনের মধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। লুক আউট নোটিসও জারি হয়েছে পলাতকদের বিরুদ্ধে।

তদন্তকারীরা জানান, অভিযুক্তদের মোবাইলের টাওয়ার শেষ দেখা গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতায়। মনে করা হচ্ছে, তাঁরা ভিন্‌ রাজ্যে গেলেও দেশের বাইরে যেতে পারেননি। এ দিন আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ বাগড়ি মার্কেটের মালিক রাধা বাগড়ি, তাঁর ছেলে বরুণরাজ বাগড়ি এবং বাগড়ি এস্টেটের চিফ এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার কৃষ্ণকুমার কোঠারির বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করেছে। অভিযুক্তেরা যাতে দেশের বাইরে পালাতে না-পারেন, সেই জন্যই এই নোটিস।

লালবাজারের খবর, অভিযুক্তদের মোবাইল কলের ডিটেলস খতিয়ে দেখার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেরও খোঁজ চলছে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, অভিযুক্তেরা প্রভাবশালী। তাঁরা পলাতক থাকাকালীনও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন বলে তদন্তকারীদের অনুমান। সেই সঙ্গে টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। তাই অভিযুক্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি ওই আত্মীয়দের উপরে নজর রাখছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE