দাপট: পুজোর সময়ে বাইকবাহিনীর তাণ্ডব। পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের উপরে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
সপ্তমীর রাতে ইএম বাইপাস এলাকায় মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছেন তিন যুবক। কারও মাথাতেই হেলমেট নেই। উদ্দাম গতিতে ছুটছে বাইক।
ওই রাতে একই দৃশ্য দেখা গেল টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। হেলমেটের বালাই নেই। গতিতেও কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।পুজোয় শহরের যানবাহন ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে সুনাম রয়েছে কলকাতা পুলিশের। সেই ঐতিহ্যকে বজায় রেখে এ বারও পুজোর ক’দিন গাড়ি চলাচল মোটের উপরে স্বাভাবিক রেখেছিল পুলিশ। কিন্তু পুজোর শহরেও হেলমেটহীন, বেপরোয়া বাইক-আরোহীদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বলে অভিযোগ। ইএম বাইপাস থেকে শুরু করে বিদ্যাসাগর সেতু, সর্বত্রই দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বেপরোয়া বাইক-আরোহীরা। কোথাও বা হিন্দি সিনেমার কায়দায় হাত ছেড়ে ‘স্টান্ট’ও দেখিয়েছেন তাঁরা। রাতের শহরে বিভিন্ন উড়ালপুলে সেই দাপট ছিল আরও বেশি। সারা বছর পুলিশের তরফে বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর বিরুদ্ধে প্রচার করা হলেও পুজোর ক’দিন শহরের কোথাও তা মানা হয়নি বলেই অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, পঞ্চমী থেকে একাদশীর সকাল পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকায় ১৭টি পথ দুর্ঘটনায় মোট ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মোটরবাইক দুর্ঘটনার বলি সাত জন। জখমের সংখ্যা প্রায় ১৪। কয়েক জনের অবস্থা গুরুতর। অধিকাংশই বিনা হেলেমেটে যাচ্ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
লালবাজার জানিয়েছে, বিদ্যাসাগর সেতুর এ জে সি বসু রোডমুখী র্যাম্পে অষ্টমীর রাতে এবং একাদশীর সকালে দু’টি পৃথক পথ দুর্ঘটনায় তিন মোটরবাইক আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। ওই দুই ঘটনায় জখম এক জন। সপ্তমীর রাতে গার্ডেনরিচ উড়ালপুলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রেলিংয়ে ধাক্কা মারে একটি মোটরবাইক। পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাইকের গতি এত বেশি ছিল যে, রেলিংয়ে ধাক্কা মারার পরে পিছনে বসে থাকা আরোহী সোজা উড়ালপুলের নীচে পড়ে যান। নারকেলডাঙার বাসিন্দা ওই যুবকের সেখানেই মৃত্যু হয়। সে দিনই কালীঘাটে মৃত্যু হয়েছে আর এক বাইক-আরোহী শিশুর। নবমীর ভোরে জওহরলাল নেহরু রোডে আর একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক মোটরবাইক চালকের। সেই ঘটনায় জখম হয়েছেন বাকি দুই আরোহী। দশমীর ভোরে একটি অ্যাপ-ক্যাবের সঙ্গে ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে উত্তরপাড়ার বাসিন্দা এক মোটরবাইক আরোহীর।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, আরোহীদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। পুলিশের এক কর্তা জানান, পুজোয় অধিকাংশ দুর্ঘটনাই ঘটেছে শেষ রাতের দিকে। ওই সময়ে রাস্তায় পুলিশ থাকে না বলেই তাঁর দাবি।
ভিড় আর যানজট সামাল দিলেও বেপরোয়া গতির মোটরবাইক কেন রুখতে পারল না পুলিশ?
লালবাজারের দাবি, পুজোর ক’দিন ভিড় সামলানোর সঙ্গেই বেপরোয়া মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই পুজোতেও কয়েক হাজার মোটরবাইক আরোহীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় ডিউটিতে থাকা এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘পুজোর ক’দিন রাস্তায় এত ভিড় হয় যে, সেটা সামলাতে গিয়ে বেপরোয়া মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তা ছাড়া, ভিড়ের মধ্যে কোনও মোটরবাইককে ধরতে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।’’ তাই সব দিক বিবেচনা করেই ব্যবস্থা নিতে হয়। যে সমস্ত এলাকায় পুজো হয় না, সেখানকার পুলিশ পুজোর ক’দিন মোটরবাইকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বলেই তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy