Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

টাকা দিয়ে সাহায্য, পুলিশের ‘অন্য মুখে’ আপ্লুত যুবক

বৃহস্পতিবার বিকেলে কামনাশিস বলেন, ‘‘পকেটে এক টাকাও ছিল না। অফিসারকে জানাই, বাড়িতে থাকা কাগজপত্রের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে চেয়ে নিয়ে দেখাতে পারি। তাতে উনি রাজি হন।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০১:৪৮
Share: Save:

এক সময়ে তিনিও ভাবতেন সব পুলিশই ‘ঘুষ’ নেয়। কিন্তু বুধবার সকালের পরে নিজের ধারণা বদলাতে চান দমদম ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দা কামনাশিস সমাদ্দার। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী ওই যুবক নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে জানিয়েছেন, কেন তিনি বদলাতে চান
নিজের ধারণা।

ওই যুবক জানান, দিন কয়েক আগের এক সকালে অফিসের কাজে তিনি বাড়ি থেকে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়েছিলেন ব্যান্ডেল যাওয়ার জন্য। বালি ব্রিজ পার করে বালিঘাট মোড়ে আসতেই তাঁর মোটরবাইকটি দাঁড় করান এক পুলিশকর্মী। সেই সময়ে ওই জায়গায় গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করছিলেন বালি ট্র্যাফিক গার্ডের এএসআই অমল কর্মকার। তিনি কামনাশিসবাবুর মোটরবাইকের কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চান। তখন প্যান্টের পিছনের পকেটে হাত দিয়ে ওই যুবক দেখেন, তিনি মানিব্যাগ আনতেই ভুলে গিয়েছেন। তাতেই তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স ও অন্যান্য কাগজপত্র রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে কামনাশিস বলেন, ‘‘পকেটে এক টাকাও ছিল না। অফিসারকে জানাই, বাড়িতে থাকা কাগজপত্রের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে চেয়ে নিয়ে দেখাতে পারি। তাতে উনি রাজি হন।’’ এর পরে বাড়িতে যোগাযোগ করে ড্রাইভিং লাইসেন্স-সহ অন্যান্য কাগজপত্রের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে আনিয়ে দেখালে অমলবাবুও গাড়িটি ছেড়ে দেন। কামনাশিস জানান, তিনি মোটরবাইকে উঠতে যাওয়ার সময়ে ওই অফিসার নিজের পকেট থেকে দু’টি দু’শো টাকার এবং একটি একশো টাকার নোট বার করে এগিয়ে দেন।

ওই যুবক জানান, অমলবাবু তাঁকে বলেন, ‘অনেক দূর যাবেন। পথে সমস্যা হতে পারে। এই টাকাটা রাখুন।’ কামনাশিস বলেন, ‘‘আমি টাকা নিতে রাজি না হয়ে ওঁকে জানাই যে, বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু শুধু শুধু অফিস বাদ দেব কেন প্রশ্ন তুলে তিনি জোর করেই টাকাটা আমার পকেটে ঢুকিয়ে দেন। আমাকে ইতস্তত করতে দেখে তিনি নিজের নাম ও কাজের জায়গার ঠিকানা বলে জানান, ইচ্ছে হলে টাকাটা এসে ফেরত দিয়ে যেতে পারি।’’

এর পরে ওই যুবক নিজের গন্তব্যের জন্য রওনা দিলেও পর মুহূর্তেই ভাবতে থাকেন, কারও কাছ থেকে ওই অফিসার ঘুষ বাবদ ৫০০ টাকা নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে নকল টাকা দেখে তাঁকে দিয়ে মানব সেবার ভান করছেন। তবে কিছুটা যাওয়ার পরে সেই ধারণাও বদলে যায় ওই যুবকের।
টাকা আসল না নকল সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে তিনি কিছুটা দূরে গিয়ে একটি দোকান থেকে ২০০ টাকার নোট ভাঙিয়ে ঠান্ডা পানীয় কেনেন। পরে কার্যস্থলে গিয়ে বন্ধুদের বাকি নোটগুলিও দেখিয়ে নিশ্চিত হন, তিনি ঠকেননি।

ওই রাতেই বালি গিয়ে অমলবাবুকে টাকা ফেরত দিয়ে যান ওই যুবক। যদিও এই বিষয়ে কিছু বলতে নারাজ অমলবাবু। শুধু বললেন, ‘‘আমাদের উচ্চপদস্থ কর্তারা সব সময়ে বলেন মানবিক আচরণ করতে। সেটাই মনে রেখে কাজ করি। আর তাতেই মনে হয়েছিল যে, ওঁকে সাহায্য
করা প্রয়োজন।’’

বিষয়টি জেনে হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘বহু পুলিশকর্মীই
ব্যক্তিগত ভাবে মানুষকে সাহায্য করেন। এটিও তেমন একটি ঘটনা। এই ধরনের পুলিশকর্মীদের জন্য আমরা গর্বিত। তবে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এই সহযোগিতার কথা স্বীকার করেন না। ওই যুবক তা করার জন্য তাঁকেও ধন্যবাদ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Help Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE