বরুণরাজ বাগড়ি ও রাধা বাগড়ি
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কখনও বাড়তি মুনাফার লোভে বেআইনি ভাবে টাকা তোলার চেষ্টার। কখনও বা ইচ্ছাকৃত ভাবে রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার অভিযোগ। বাগড়ি মার্কেটের মালিক সংস্থার বর্তমান ডিরেক্টর রাধা বাগড়ি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভূমিকা নিয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ অন্তত দেড় বছর আগে থেকে জমা পড়েছে কলকাতা পুলিশের কাছে (যেগুলির প্রতিলিপি আনন্দবাজারের কাছে রয়েছে)। তবু অগ্নিকাণ্ডের আগে বা পরে, কখনওই বাজার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে খবর নেই। সংস্থার দুই ডিরেক্টর— রাধা বাগড়ি ও তাঁর দত্তকপুত্র বরুণরাজ বাগড়ি এবং চিফ এগ্জিকিউটিভ অফিসার কৃষ্ণকুমার কোঠারি ‘উধাও’ হওয়ার পরে পুলিশের একাংশেই এই ‘গাফিলতি’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লালবাজারের কর্তাদের অবশ্য বক্তব্য, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় অভিযোগ লিখেই তদন্ত চলছে।
বুধবারই তিন অভিযুক্তের নামে পুলিশের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আর্জিতে সায় দিয়েছেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক মনোদীপ দাশগুপ্ত। অভিযুক্তদের বিদেশে পালানো রুখতে তাঁদের নামে লুকআউট নোটিস জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার। যদিও রাধা বাগড়ি ইতিমধ্যেই ইউরোপে চলে গিয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দিন দুপুরে নিজের ফোনে পুরনো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ দেখতে দেখতে আফসোস করছিলেন বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশুতোষ সিংহ। বিধ্বংসী আগুনের প্রথম দিন, রবিবার সন্ধ্যায় ‘‘ব্যবসায়ী, লিজ়ধারীদের সব শেষ’’ বলে বাগড়ি এস্টেটের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ করেছিলেন তিনি। বরুণরাজ বাগড়ি সেই বার্তাটি দেখেছিলেন বলে বুঝতে পারেন আশুতোষ। তাঁদের অভিযোগ, ওই সময়েও বরুণ যখন হোয়াটসঅ্যাপে সক্রিয় ছিলেন, তখন চেষ্টা করলে তাঁর ফোনের অবস্থান জানা যেত। কিন্তু এই ডিরেক্টরকে পাকড়াও করার জন্য পুলিশ-প্রশাসন গা-ঝাড়া দেয়নি। আশুতোষ বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে ইচ্ছাকৃত ভাবে গাফিলতি করছেন বলে গত ৯ ফেব্রুয়ারিতে তাঁদের চিঠি দিয়েছি। বড়বাজার থানাতেও সেই চিঠির কপি জমা পড়েছে।’’
গত বছর ইউনিট-পিছু বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে এবং বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য অতিরিক্ত টাকা চেয়ে বেশ কিছু দোকান মালিককে নোটিস দিয়েছিলেন বাগড়ি মার্কেট কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে মামলা গড়িয়েছিল হাইকোর্টে। কোর্টের হস্তক্ষেপে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। এই সূত্রে গত বছরের ১৮ মে বড়বাজার থানায় জমা পড়া জনৈক মোহনলাল বাগড়ির চিঠিও এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিজেকে ‘বাগ়ড়ি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর অন্যতম ডিরেক্টর দাবি করে মোহনলাল লিখেছিলেন, বাড়তি মুনাফার লোভে একার সিদ্ধান্তে বেআইনি ভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিদ্যুতের জন্য বাড়তি টাকা দাবি করছেন রাধা বাগড়ি। পুলিশ সূত্রের খবর, এই মোহনলাল রাধার শ্বশুর। রাধা, তাঁর দত্তকপুত্র বরুণ এবং জনৈক পিসতুতো দেওর কৃষ্ণ কোঠারিই তার পর থেকে বাগড়ি মার্কেটের সব কিছুতে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: মাঝেরহাটে তৈরি হবে এক জোড়া বেইলি ব্রিজ
‘বাগড়ি এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেড’ কর্তৃপক্ষ বেআইনি ভাবে তাঁদের সাসপেন্ড করেছিলেন বলে অভিযোগ তুলে ২ ফেব্রুয়ারি শ্রম আদালতে মামলা করেছিলেন ছ’জন কর্মী। তাঁদের আইনজীবী অজয়শঙ্কর সান্যাল ও শ্রেয়সী সান্যাল জানান, ওই কর্মীরা গত বছরের মে থেকে বেতন পাচ্ছেন না। শ্রম আদালতে মামলাটি চলছে। পুলিশের একাংশ বলছে, এই মামলাকারীদের সঙ্গে কথা বললে কিছু তথ্য মিলতে পারে।
আরও পড়ুন: ববির পরে শোভনকে তির এ বার জাভেদের
অভিযুক্ত তিন শীর্ষ পদাধিকারীকে আপাতত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশের দাবি। মোবাইলে বারবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy