Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

অনটন আর অবসাদেই কি ঝাঁপ মা-মেয়ের

বুধবার সন্ধ্যায় পোস্তা থানা এলাকার ব়ড়তলা স্ট্রিটে একটি বহুতলের উপর থেকে আড়াই বছরের শিশুকন্যা যুবাকি মোহতা ও মা সোহিনীদেবী কাপাড়িয়াকে (৬২) নিয়ে ঝাঁপ দেন ইন্দিরা মোহতা (৩০)। শিশুটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গেলেও তার দিদিমা মারা গিয়েছেন।

মাসির কোলে যুবাকি। বৃহস্পতিবার, পোস্তার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

মাসির কোলে যুবাকি। বৃহস্পতিবার, পোস্তার বাড়িতে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০২:২২
Share: Save:

মায়ের জন্য মাঝেমধ্যেই ডুকরে কেঁদে উঠছে সে। সকাল থেকে মুখেও দিতে চাইছিল না কিছু। নামতে চাইছে না এক আত্মীয়ের কোল থেকেও। পরিবারের সকলে এখন ওই একরত্তিকে নিয়েই বেশি চিন্তিত।

বুধবার সন্ধ্যায় পোস্তা থানা এলাকার ব়ড়তলা স্ট্রিটে একটি বহুতলের উপর থেকে আড়াই বছরের শিশুকন্যা যুবাকি মোহতা ও মা সোহিনীদেবী কাপাড়িয়াকে (৬২) নিয়ে ঝাঁপ দেন ইন্দিরা মোহতা (৩০)। শিশুটি প্রায় অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গেলেও তার দিদিমা মারা গিয়েছেন। মা আশঙ্কাজনক অবস্থায় ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়নি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বড়তলা স্ট্রিটের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরিবারের সকলেই শোকে মুহ্যমান। তাঁরা জানালেন, বুধবার রাতে কিছুতেই ঘুমোতে চায়নি যুবাকি। ‘মা মা’ বলে চিৎকার করে বারবার উঠে পড়ছিল। হাওড়ার বাসিন্দা এক মাসিই এখন যুবাকিকে নিয়ে রয়েছেন। ‘‘মা আসবে বলে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে রাখতে হচ্ছে। সারা দিনই তো মা-দিদার কোলেপিঠে থাকত। বারবার দু’জনের কথা বলছে। মিথ্যা বলে আশ্বস্ত করছি।’’ বলতে বলতেই চোখ ভিজে গেল ওই তরুণীর।

পুলিশ জানিয়েছে, বছর চারেক আগে মানিকতলার বাসিন্দা অমিত মোহতার সঙ্গে ইন্দিরার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তি লেগে থাকত। গত বছরের ১৪ জুলাই ইন্দিরা তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে বধূ-নির্যাতনের মামলা দায়ের করেছিলেন। তার পরে গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাঙ্কশাল আদালতে খোরপোষের মামলা দায়ের করলেও তিনি তা পাননি বলে অভিযোগ। বুধবার সন্ধ্যার ঘটনার সময়ে ইন্দিরার বাবা বাড়িতেই ছিলেন। পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, ঘটনার কিছু ক্ষণ আগে তাঁর মেয়ে মোবাইলে কারও সঙ্গে ঝগড়া করছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সাংসারিক অশান্তির জেরে শ্বশুরবাড়ি থেকে ইন্দিরা বাপের বাড়িতে চলে আসেন। তাঁর বাবা অবসাদে আক্রান্ত। একমাত্র ভাই পক্ষাঘাতগ্রস্ত। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইন্দিরা ও তাঁর মা-ও অবসাদে ভুগছিলেন। সম্ভবত সেই কারণেই শিশুটিকে নিয়ে আত্মহত্যা করতে ঝাঁপ দেন মা ও মেয়ে।

ইন্দিরা ও তাঁর মা ঝাঁপ দিয়ে যেখানে পড়েন, সেই ঘটনাস্থলের সামনেই দোকান বিক্রম মোদীর। তাঁর কথায়, ‘‘কেব্‌লের তারের জন্যই বাচ্চাটা বেঁচে গেল। তিন জনে একসঙ্গে ঝাঁপ দিলেও মেয়েটি কেব্‌লের তারে আটকে যাওয়ায় সব শেষে রাস্তায় পড়েছে।’’ এ দিন দুপুরে ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে বিবরণ নেন। চারতলায় গিয়ে ইন্দিরার পরিজনদের সঙ্গেও কথা বলেন তাঁরা। পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ গ্যাস সিলিন্ডার সরিয়ে রান্নাঘরের জানলা খুলে সেখান থেকে নীচে ঝাঁপ দিয়েছিলেন মা-মেয়ে। সঙ্গে ছিল শিশুটি। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সোহিনীদেবী ও ইন্দিরার শোয়ার ঘরের পাশেই তাঁদের রান্নাঘর। বুধবার সন্ধ্যায় মা ও মেয়ে মিলে রান্নাঘরের সিলিন্ডার সরান। তার পরে সোহিনীদেবী ওই জানলা দিয়ে ঝাঁপ দেন। এর পরে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ঝাঁপ দেন ইন্দিরাও। পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই ঘটনার সময়ে বাড়িতে অন্য ঘরে ছিলেন ইন্দিরার বাবা চাঁদরতন কাপা়ড়িয়া।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ওই পরিবার আর্থিক দিক থেকে অসচ্ছল হয়ে পড়েছিল। যা নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। আত্মীয়দের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, ইন্দিরার সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলার জন্য টাকা জোগাড় করাও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ইন্দিরার স্বামীও কোনও রকম আর্থিক সাহায্য করতেন না বলে পুলিশকে জানিয়েছেন পরিজনেরা। এই ঘটনার পর থেকে ইন্দিরার স্বামী অমিত বেপাত্তা। তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE