Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শুধু ‘সতর্ক করে’ই শাস্তি মারধরে অভিযুক্ত পুলিশকে

ছড়িয়ে প়ড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, বাসে উঠে এর পরে ওই বৃদ্ধকেই বেধড়ক মারধর শুরু করেন উর্দিধারীরা। চড়-থাপ্পড়ের সঙ্গে গালিগালাজ করতেও দেখা যায় পুলিশকর্মীদের।

বাসে বৃদ্ধকে নিগ্রহের ভিডিয়ো।

বাসে বৃদ্ধকে নিগ্রহের ভিডিয়ো।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯
Share: Save:

পুলিশি ‘দাদাগিরি’র শাস্তি কি শুধু সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া? হাওড়ায় বাসে উঠে এক বৃদ্ধকে পুলিশের বেধড়ক মারধরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তত তেমন প্রশ্ন উঠেছে। হাওড়া সিটি পুলিশের দুই অভিযুক্ত এএসআই বিদ্যুৎকুমার সিংহ এবং তুষারকান্তি বৈদ্যকে সতর্ক করেই ছেড়ে দিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ। এখন বহাল তবিয়তেই ‘ডিউটি’ করছেন তাঁরা।

একবালপুরের চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার পরে হাওড়ার এই ঘটনা ফের সামনে এসেছে। গত ৭ জানুয়ারি হাওড়ার বালি থানার কর্ড ব্রিজ এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছিল। ওই দিন হাওড়ায় ম্যারাথন দৌড় থাকায় সকাল থেকে ‘ডিউটি’ করছিলেন সিটি পুলিশের আধিকারিকেরা। কর্ড ব্রিজ এলাকার রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হয় একটা সময়ের পরে। অভিযোগ, একটি ছোট মালবাহী গাড়ি পুলিশি ব্যবস্থা না মেনে বন্ধ রাস্তায় ঢুকে পড়ে। সেই ‘অপরাধে’ ওই গাড়ির চালককে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করছিলেন পুলিশকর্মীরা। সেই দৃশ্য দেখে পাশে দাঁড়ানো বাস থেকেই প্রতিবাদ করেন রাজেন্দ্র সিংহ নামে পঁয়ষট্টি বছরের এক বৃদ্ধ। ছড়িয়ে প়ড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, বাসে উঠে এর পরে ওই বৃদ্ধকেই বেধড়ক মারধর শুরু করেন উর্দিধারীরা। চড়-থাপ্পড়ের সঙ্গে গালিগালাজ করতেও দেখা যায় পুলিশকর্মীদের। মারের চোটে এক সময় বৃদ্ধের মাথার টুপি খুলে পড়ে যায়। পুলিশকর্মীরা তখন বলছেন, ‘‘ফের এই রাস্তায় দেখলে মেরে পুঁতে দেব।’’

পেশায় লরিচালক রাজেন্দ্র জানিয়েছিলেন, বিহারের পটনায় বাড়ি তাঁর। কাজের সূত্রে ঘটনার দিন শহরে এসেছিলেন। একজন লরিচালককে মার খেতে দেখে খারাপ লেগেছিল তাঁর। প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, ‘‘মারবেন না। তার থেকে রাস্তা সাফ করুন। বহুক্ষণ বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে।’’ অভিযোগ, এই মন্তব্যই কাল হয়েছিল বৃদ্ধের। শুক্রবার তিনি ফোনে বলেন, ‘‘আগে কখনও এরকম হয়নি। ও দিকে গেলে এখন সাবধানে থাকি। আমরা সাধারণ মানুষ। পুলিশের সঙ্গে লড়ার ক্ষমতাও নেই।’’

ওই ঘটনার পরে হাওড়া সিটি পুলিশ অবশ্য নিজেরাই তদন্ত শুরু করে। অভিযুক্ত দুই এএসআই-কে ডেকে তাঁদের বয়ান নথিভুক্ত করানো হয়। তদন্তের পরে কী হল? হাওড়া পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘অপরাধ সেরকম নয়। তাই পুলিশকর্মীদের তিন মাস সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল!’’

পুলিশি দাদাগিরির শাস্তি স্রেফ এটুকুই? মন্তব্যে নারাজ হাওড়ার ডিসি (ট্র্যাফিক) জাফর আজমল কিদোয়াই। অভিযুক্ত তুষারকান্তিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। এএসআই বিদ্যুৎকুমার অবশ্য বললেন, ‘‘মাথা গরম করা ঠিক হয়নি। কিন্তু, ভুল ওই ব্যক্তিরও ছিল। সকাল থেকে ডিউটি করছিলাম। ওঁকে এমন মন্তব্য করতে কে বলেছিল?’’

বিষয়টি জানেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন গিরিশ গুপ্ত। যদিও এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেননি তিনি।

গিরিশবাবু বলেন, ‘‘সব সময় আক্রান্তকে আমাদের কাছে আসতে হবে তেমনটা নয়। আমরা নিজেরাও পদক্ষেপ করি। বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে পদক্ষেপ করা হয়।’’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও প্রয়োজনে এই ধরনের হেনস্থার ঘটনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে। সে জন্য তাদের রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাছ থেকে কোনও অনুমতির প্রয়োজন হয় না। তবে ওই বৃদ্ধের ক্ষেত্রে নীরব থেকেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE