Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

অটোচালকের স্কেচ আঁকাচ্ছে পুলিশ

সিসি ক্যামেরা বসানো রাস্তায় রাস্তায়। কিন্তু তার ছবিই স্পষ্ট নয়। এমনকী পুলিশের যুক্তি, একে রাত তায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি থাকায় রবিবার রাতে গিরিশ পার্কে যে অটোয় ছিনতাই হয়েছিল, সেটির নম্বরই দেখা যায়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০০:৪০
Share: Save:

সিসি ক্যামেরা বসানো রাস্তায় রাস্তায়। কিন্তু তার ছবিই স্পষ্ট নয়। এমনকী পুলিশের যুক্তি, একে রাত তায় ঝিরঝিরে বৃষ্টি থাকায় রবিবার রাতে গিরিশ পার্কে যে অটোয় ছিনতাই হয়েছিল, সেটির নম্বরই দেখা যায়নি। এ দিনের ঘটনার পরে তাই স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, নিরাপত্তার স্বার্থে ওই সব সিসি ক্যামেরা বসানো হলেও আদৌ কি তাতে কোনও লাভ হচ্ছে?

রবিবার রাতে পার্ক সার্কাস থেকে একটি অটোয় উঠে হাওড়া যাচ্ছিলেন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্মী সুদীপ্তা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাওড়ার ব্যাঁটরার দশরথ ঘোষ লেনে তাঁর বাড়ি। মাঝে গিরিশপার্কের কাছে আপাত নির্জন একটি জায়গায় অটো থামিয়ে ওই তরুণীর হার, টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে চালক-সহ তিন জন। ওই রাতেই গিরিশপার্ক থানায় অভিযোগ জানান সুদীপ্তা। এর পরেই পার্ক সার্কাস থেকে যে যে রাস্তা দিয়ে ওই অটো গিরিশপার্ক গিয়েছিল, প্রতিটির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ। কখনও শিয়ালদহ উড়ালপুল, কখনও রবীন্দ্র সরণিতে একটি অটোর গতিবিধি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। সুদীপ্তার বলে দেওয়া রুট ও সময় মিলিয়ে পুলিশের অনুমান, এটি সেই অটো যাতে সুদীপ্তা ছিলেন। তবে পুলিশ জানায়, রাতের অন্ধকার এবং ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে ক্যামেরায় অটোর নম্বর পরিষ্কার ফুটে ওঠেনি।

এ দিকে, এ ধরনের অপরাধ ঘটলে গাড়ির নম্বরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে গণ্য করা হয়। তাহলে যে ধরনের ক্যামেরা বসালে রাতেও গাড়ির নম্বর পরিষ্কার দেখা সম্ভব সেই ক্যামেরা বসানো হচ্ছে না কেন? তবে কি শহরের রাস্তায় শুধু দিনের আলোতেই অপরাধ ঘটলে গাড়ির নম্বর পাওয়া সম্ভব?

কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারের বক্তব্য, কলকাতার রাস্তায় যে সিটি ক্যামেরা লাগানো আছে তা মূলত গাড়ি ট্রাফিকের নিয়ম মানছে কি না দেখার জন্য। বৃষ্টির রাতে ছুটে চলা গাড়ির নম্বর চিহ্নিত করার ক্ষমতা কোনও ক্যামেরারই নেই। তিনি বলেন, ‘‘এ ধরনের অপরাধ ঘটলে শুধু সিসিটিভি ফুটেজ নয়, পুলিশের হাতে আরও অনেক অস্ত্র থাকে, যা দিয়ে অপরাধীকে ধরা সম্ভব।’’ কিন্তু বৃষ্টির রাতে কোনও গাড়ি যদি ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন করে তা হলেও তো গাড়ির নম্বর পাওয়া যাবে না। তখন কী করবে পুলিশ? এর কোনও সন্তোষজনক জবাব মেলেনি পুলিশ কর্তার কাছে।

তবে যেহেতু অটোর নম্বর এখনও মেলেনি, তাই সুদীপ্তার বয়ানের উপর নির্ভর করে ছিনতাইবাজ অটোচালক ও তার দুই সঙ্গীর ছবি আঁকিয়েছে পুলিশ। কলকাতার প্রতিটি অটোর গায়েই তার রুট নম্বর লিখে রাখার কথা। তবে অভিযুক্ত অটোর রুট নম্বরও সিসিটিভি ফুটেজে পরিষ্কার নয় বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পার্ক সার্কাস থেকে ধর্মতলা রুটে যে অটোগুলি চলে সেগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করছে পুলিশ।

পুলিশের অনুমান, ওই রাতে দুষ্কর্ম করার উদ্দেশেই জড়ো হয়েছিল তিন জন। সওয়ারি পেলে নির্জন এলাকায় গিয়ে ছিনতাই করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুদীপ্তা অটোয় উঠে প্রথমে ধর্মতলা যেতে চেয়েছিলেন। ঠিক করেছিলেন, ধর্মতলা থেকে বাস ধরে হাওড়া যাবেন। কিন্তু অটোচালকই তাঁকে বলেন তিনি হাওড়ার দিকেই যাবেন এবং সুদীপ্তাকে হাওড়ায় নামিয়ে দেবেন।

সুদীপ্তা পুলিশকে জানান, রবিবার রাতে অফিস থেকে বেরোতে দেরি হয়েছিল। ঝড়-বৃষ্টিতে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও পার্ক সার্কাস থেকে হাওড়া যাওয়ার কোনও বাস বা ট্যাক্সি পাননি। তাই ১৫০ টাকায় অটোটি ভাড়া করেন তিনি। সুদীপ্তার অভিযোগ, অটোয় আগে থেকেই দুই যুবক ছিলেন। অটো ভাড়া করার পরে ওই দু’জনের থাকা নিয়ে অভিযোগ করলেও তাতে কান দেননি চালক। পরে অনেক পথ ঘুরিয়ে গিরিশ পার্কের দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের কাছে অটো থামিয়ে সুদীপ্তার টাকার ব্যাগ, সোনার হার, মোবাইল ছিনিয়ে অটো নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sketch auto driver
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE