Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

আগে শক্ত না হওয়ায় এত হামলা, মানছে পুলিশই

ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের চেহারা-ছবিতে বেহালা যেন বাঘা যতীনের পথেই হাঁটছে। ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পুলিশের মেরুদণ্ড নুইয়ে গিয়েছে নাকি আদৌ নেই? বাঘা যতীনের ফুলবাগান রোডে রবিবার রাতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি বহিরাগতেরা তাণ্ডব চালানোর পরেও পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে তেমন কঠোর পদক্ষেপ করেনি।

বেহালার জয়শ্রীতে কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলার পরে।

বেহালার জয়শ্রীতে কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়িতে হামলার পরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের চেহারা-ছবিতে বেহালা যেন বাঘা যতীনের পথেই হাঁটছে। ফের প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পুলিশের মেরুদণ্ড নুইয়ে গিয়েছে নাকি আদৌ নেই?

বাঘা যতীনের ফুলবাগান রোডে রবিবার রাতে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি বহিরাগতেরা তাণ্ডব চালানোর পরেও পুলিশ দোষীদের বিরুদ্ধে তেমন কঠোর পদক্ষেপ করেনি। সিসিটিভি ফুটেজে হামলাকারীদের ছবি থাকলেও তাদের শনাক্ত পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। এমনকী, সোমবার রাতে ফের সেখানে হামলা চালানোর সাহস পায় দুষ্কৃতীরা।

একই ভাবে মঙ্গলবার রাতে বেহালার বামাচরণ রায় রোডের সেনহাটিতে সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সদস্যের বাড়ি লক্ষ করে চার-চার রাউন্ড গুলি চালানোর পরেও কেউ ধরা পড়েনি। ওই ঘটনার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই বেহালার জয়শ্রীতে সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক কুমকুম চক্রবর্তীর বাড়ি লক্ষ করে পরপর দু’টো বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা।

সেনহাটির মতো জয়শ্রীতেও অভিযোগের তির শাসক দলের দিকে। যথারীতি শাসক দলের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় তাদের কোনও রকম সংস্রবের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। কলকাতার মেয়র তথা বেহালা (পূর্ব) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শোভন চট্টোপাধ্যায় একে ‘পরিকল্পিত চক্রান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।


বাড়ির সামনে এখন পুলিশি পাহারা। বৃহস্পতিবার। — নিজস্ব চিত্র

সেনহাটিতে যাঁর বাড়ির সামনে কার্তুজের খোল পাওয়া গিয়েছে, সিপিএমের বেহালা উত্তর-পূর্ব লোকাল কমিটির সদস্য, পেশায় স্কুলশিক্ষক সেই অরিন্দম ঝা-এর বাড়ি থেকে কুমকুমদেবীর বাড়ির দূরত্ব এক কিলোমিটার। কুমকুমদেবী এখন সিপিএমের কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য। একদা তিনি বেহালা (পূর্ব) কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন।

সিপিএমের অভিযোগ, একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একই এলাকায় ফের সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে। এই কথা স্বীকার করে নিচ্ছে পুলিশের একাংশও।

লালবাজারের এক সহকারী কমিশনারের কথায়, ‘‘ঘটনা ঘটতেই পারে। অনেক সময়েই কোনও ঘটনা আগে থেকে আঁচ করা সম্ভব হয় না। কিন্তু ঘটনার পরে দ্রুত আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করলে পরের ঘটনা ঘটতে বেশি সময় লাগবে না। পরের ঘটনাটি আরও বড়, আরও খারাপ হতে পারে।’’ বেহালা এবং বাঘা যতীনে পরপর সন্ত্রাসের ঘটনা কার্যত সেই মতকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

কেন এই অবস্থা? আর এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘তদন্তে যদি পাওয়া যায়, জড়িতেরা শাসক দলের আশ্রিত, তা হলে কী ভাবে তারা ধরা পড়বে? এই জায়গাতেই তো আমাদের অনেকের হাঁটু এখনও ঠকঠক করে কাঁপছে। খোদ সিপি শিরদাঁড়া সোজা রেখে কর্তব্য পালন করার নির্দেশ দিলেও তেমন কাজ হচ্ছে না।’’

বুধবার রাত সওয়া ১১টা নাগাদ কুমকুমদেবীর বাড়ির বসার ঘর লক্ষ করে দু’টি বোমা ছোড়া হয়। জানলা বন্ধ থাকায় সেটি ওখানেই সশব্দে ফেটে যায়। জানলার কাচ ঝনঝনিয়ে ভেঙে চার দিকে ছ়ড়িয়ে পড়ে। আর একটি বোমা ফাটেনি। সেটি পাওয়া যায় ওই বাড়ির বারান্দায়। কুমকুমদেবীর কথায়, ‘‘প্রচণ্ড শব্দ আর কালো ধোঁয়া একটু থিতিয়ে পরে বসার ঘরে গিয়ে দেখলাম, সব তছনছ।’’ দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমা দু’টি বাড়িতে ঢুকে ফাটলে তাঁদের কারও বিপদ হতে পারত বলে মনে করছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জেনেছেন, জর্দার কৌটোয় বারুদ, স্টোনচিপ্‌স ভরা বোমা কুমকুমদেবীর বাড়িতে ছুড়েছে দুষ্কৃতীরা।

সেনহাটি ও জয়শ্রী, দু’টি এলাকাই বেহালা থানার অন্তর্গত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’টি ঘটনায় জড়িত কেউই ধরা পড়ল না কেন? সদুত্তর নেই পুলিশের কাছে। বিশেষ করে অরিন্দমবাবু যেখানে তাঁর অভিযোগে উত্তম নামে এক জনের নামও উল্লেখ করেছেন। তবে কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ-পশ্চিম ডিভিশন) মির্জা খালিদের দাবি, ‘‘তদন্তে দু’টি ঘটনায় জড়িত হিসেবে কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

সেনহাটি ও জয়শ্রী, দু’টি এলাকাই বেহালা (পূর্ব) কেন্দ্রের অন্তর্গত। যে কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক এবং এ বারের তৃণমূল প্রার্থী মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। গত শনিবার, ৩০ এপ্রিল ভোট মিতে না মিটতেই ওই কেন্দ্রেরই হরিদেবপুরে সিপিএম সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় এক শিশুকন্যাও জখম হয়।

কিন্তু একই কেন্দ্রে এত বার কেন ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটছে?

শোভনবাবুর জবাব, ‘‘কুমকুমদির সঙ্গে ভোটে আমার তিন বার লড়াই হয়েছে। আগে কখনও এমন কিছু ঘটেনি। পুরোটাই পরিকল্পিত চক্রান্ত। সত্যিকারের তদন্ত হলে দুধ কা দুধ, পানি কা পানি হয়ে যাবে।’’ মেয়রের কথায়, ‘‘আমিও চাই, দোষীরা ধরা পড়ুক। সিপিএমের একাংশও কিন্তু সন্দেহের বাইরে নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE