Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পাইকপাড়া-কাণ্ড

পুকুরে উদ্ধার খুনের হাতিয়ার, খুনির জামা

বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করার পরে সঞ্জয় সেন ওরফে বাপ্পা একেবারে পেশাদার খুনির মতো প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল। পাইকপাড়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় ধৃত বাপ্পার থেকে সবটা জানার পরে এমনই মত তদন্তকারীদের। শনিবার বিকেলে বাপ্পা পুলিশকে খুনে ব্যবহৃত লোহার পাইপ ও নিজের রক্তমাখা জামাকাপড়ের হদিস দেয়। ডুবুরি নামিয়ে দু’টি পুকুর থেকে খুনের প্রমাণ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুকুর থেকে মেলে লোহার এই রড। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

পুকুর থেকে মেলে লোহার এই রড। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০০:৪০
Share: Save:

বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করার পরে সঞ্জয় সেন ওরফে বাপ্পা একেবারে পেশাদার খুনির মতো প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল। পাইকপাড়ায় জোড়া খুনের ঘটনায় ধৃত বাপ্পার থেকে সবটা জানার পরে এমনই মত তদন্তকারীদের। শনিবার বিকেলে বাপ্পা পুলিশকে খুনে ব্যবহৃত লোহার পাইপ ও নিজের রক্তমাখা জামাকাপড়ের হদিস দেয়। ডুবুরি নামিয়ে দু’টি পুকুর থেকে খুনের প্রমাণ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাণগোবিন্দ দাস ও তাঁর স্ত্রী রেণুকাদেবীর বাসস্থান, অর্থাৎ ‘ইন্দ্রলোক’ আবাসন থেকে ওই দু’টি পুকুরের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। একটি পুকুর থেকে অন্যটি পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ।
স্থানীয়েরা জানান, একটির নাম কপিলার পাঁচু রায়ের পুকুর, অন্যটির নাম শিবপুকুর। ‘ইন্দ্রলোক’ আবাসন থেকে বেরিয়ে প্রথমে পড়ে পাঁচু রায়ের পুকুর। জেরায় পুলিশকে বাপ্পা জানায়, প্রথমে সে রক্তমাখা জামা ইট-সহ একটি থলিতে ভরে ওই পুকুরে ছুড়ে ফেলে। এর পরে দ্বিতীয় পুকুরে লোহার পাইপ আর বৃদ্ধ দম্পতির ফ্ল্যাটের চাবির গোছা ফেলে দেয়।
এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ পুলিশ শিবপুকুরে ডুবুরি নামায়। শিবপুকুরে দু’জন ডুবুরি ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালিয়েও কিছু পাননি। পরে আরও এক ডুবুরিকে ওই পুকুরে নামানো হয়। ৫টা ২০ নাগাদ লোহার পাইপটি ওই পুকুর থেকেই উদ্ধার হয়। মিনিট পনেরো পরে পাঁচু রায়ের পুকুরে ডুবুরি নামেন। এই পুকুরটি তুলনায় বেশি গভীর হওয়ায় বেশ বেগ পেতে হয় ডুবুরিদের। পুকুরের চারপাশে আলোর যথেষ্ট পরিমাণ ব্যবস্থা না থাকায় পুলিশ প্রথমে টর্চলাইটের ব্যবস্থা করে। কিন্তু ঘণ্টাখানেক তল্লাশি চালিয়েও কিছু না মেলায় পুকুরপাড়ে হ্যালোজেন-এর ব্যবস্থা করে পুলিশ। তারও আধ ঘণ্টা পরে ডুবুরিরা তুলে আনেন লাল রঙের ওই ব্যাগটি।

পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের পরে বাপ্পা বৃদ্ধ দম্পতির আলমারি থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ও গয়না হাতিয়ে নেয়। সেই টাকা থেকেই খুনের পরের দিন, সাড়ে সাত হাজার টাকা সে দিয়েছিল তার এক পাওনাদারকে। তদন্তকারীরা সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, বাপ্পার কাছে তিনি অনেক টাকা দেখেছিলেন। শুক্রবার রাতে বাপ্পাকে নিয়ে নন্দীগ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে যান তদন্তকারীরা। এ দিন সেই বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় লুঠ হওয়া টাকার অনেকটাই। উদ্ধার হয় কয়েক ভরি সোনার গয়নাও।

পুলিশ আরও জানায়, বাপ্পার স্ত্রী পূর্ণিমাও স্বীকার করেছেন, নন্দীগ্রামে পৌঁছেই বাপ্পা তাঁকে খুনের কথা জানায়। পুলিশকে পূর্ণিমা জানান, তাঁর বাপের বাড়ির অদূরে পুকুরপাড়ের পাশে বাঁশঝোপের মধ্যে টাকা ও গয়না লুকিয়ে রাখা রয়েছে। সেখানে তল্লাশি চালিয়ে পলিথিনের ব্যাগে ভরে রাখা টাকা-গয়না উদ্ধার করে পুলিশ। পূর্ণিমা প্রথমে সত্য গোপন করায় তাঁকেও আর সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ। খুনের ঘটনায় পূর্ণিমাও জড়িত কি না তা দেখছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। পূর্ণিমা অবশ্য এ দিন দাবি করেন, ‘‘আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই প্রথমে পুলিশকে কিছু বলিনি।’’

মা-বাবার খুন হওয়ার খবর পেয়ে মার্কিন মুলুক থেকে এ দিনই কলকাতা পৌঁছন প্রাণগোবিন্দ ও রেণুকা দাসের একমাত্র সন্তান শুচিস্মিতা দাস। একই সঙ্গে কলকাতায় এসেছেন তাঁর স্বামী তুষারবরণ দেবও। ১৯৯৮ সালে বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে মার্কিন মুলুকে থাকেন ওই মহিলা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE