Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
চিৎপুর

বিয়ের আসরে হাজির পুলিশ, বাঁচল কিশোরী

বাড়ির সামনে বক্সে গান বাজছে। ভিতরে চলছে গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠান। মেহেন্দি পরে, গয়নায় সেজে বিয়ের জন্য তৈরি কনে। জমজমাট বিয়েবাড়ির মেজাজের মধ্যেই চিৎপুরের ঘোষবাগান লেনে হাজির হলেন পুলিশকর্মীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০২:১৩
Share: Save:

বাড়ির সামনে বক্সে গান বাজছে। ভিতরে চলছে গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠান। মেহেন্দি পরে, গয়নায় সেজে বিয়ের জন্য তৈরি কনে। জমজমাট বিয়েবাড়ির মেজাজের মধ্যেই চিৎপুরের ঘোষবাগান লেনে হাজির হলেন পুলিশকর্মীরা। বাড়িতে ঢুকেই তাঁরা সাফ বললেন, ‘এই বিয়ে বন্ধ করতে হবে।’

কেন? পুলিশ জানিয়েছে, খাস কলকাতায় তেরো বছরের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন ঘোষবাগান লেনের বাসিন্দা প্রতাপ দে। নাবালিকার বিয়ের সেই খবর এলাকা থেকেই পেয়েছিল পুলিশ। তার পরেই চিৎপুর থানার অতিরিক্ত ওসি দীপেন জোয়ারদার মহিলা পুলিশকর্মীদের নিয়ে হাজির হন বিয়েবাড়িতে। বিয়ে রুখে দিয়ে কিশোরী কনে ও তার মাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, বিয়ে বন্ধ করা হবে কেন, তা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্ক জুড়েছিলেন কনের মা। নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যে বেআইনি এবং সামাজিক অপরাধ, তা বোঝানো হয় তাঁকে। তার পরে অবশ্য আর তর্ক চালাননি তিনি। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নাবালিকার বিয়ে দেওয়া যে অপরাধ, তা জানতেন কনের বাবা প্রতাপবাবুও। তাই পুলিশ দেখেই ভিড়ের মধ্যে গা-ঢাকা দেন তিনি। রাত পর্যন্ত ওই ব্যক্তির খোঁজ মেলেনি বলেই পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ সূত্রে খবর, উত্তর কলকাতার কাশিমবাজার সাবিত্রী শিক্ষালয়ে অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ওই কিশোরী বুধবার স্কুলে যায়নি। সহপাঠীদের থেকে স্কুলের শিক্ষিকারা জানতে পারেন, এ দিনই স্থানীয় একটি মন্দিরে তার বিয়ে হওয়ার কথা। সে কারণেই সে স্কুলে অনুপস্থিত। এর পরেই সোজা থানায় খবর দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত ওসি জানান, ঘোষবাগানের কাছাকাছি এলাকায় গিয়ে তিনি ওই কিশোরীর বাড়িতে ফোন করে বলেন, ‘‘মিষ্টির অর্ডার নিয়ে এসেছি, কোথায় পৌঁছতে হবে বলুন।’’ তখনই তাঁর কানে আসে, ফোনের ওপারে জোরে গান বাজছে। এর পরে ফোন কেটে দিয়ে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন এবং গানের আওয়াজ অনুসরণ করে বিয়েবাড়িতে পৌঁছয় পুলিশ। কনের সাজে মেয়েটিকে উদ্ধার করে মা-সহ তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুকল্যাণ সমিতির কাছে।

এ দিন এলাকায় পৌঁছে দেখা যায়, পড়শিদের ভিড়ে ঠাসা ঝুপড়ি ঘরের দরজায় মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছেন ওই কিশোরীর পিসি। মেয়েটি স্কুলে পড়ে। তা সত্ত্বেও কেন এই বয়সে তার বিয়ে দিচ্ছিলেন তাঁরা? প্রশ্ন করতেই, ‘বেশ করেছি’ বলে দড়াম শব্দে দরজা বন্ধ করে দেন সেই পিসি।

পুলিশ সূত্রে খবর, বাদুড়িয়ার ২৩ বছর বয়সী এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল ওই কিশোরীর। সেই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে ওই যুবকের সঙ্গেই তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে পরিবার। বিয়েতে ইচ্ছুক ছিল ওই কিশোরীও। পুলিশের দাবি, মেয়েটির মা জানিয়েছেন, তাঁর স্বামী গাড়িচালক। আর্থিক দুরবস্থার কারণেই নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। এর আগে তাঁদের বড় মেয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ভেবেছিলেন, চেন্নাইয়ে কর্মরত ওই যুবকের সঙ্গে ছোট মেয়ের বিয়ে দিলেই হয়তো সমস্যা মিটে যাবে।

নাবালিকা-বিয়ের ঘটনা ঘটেছে ট্যাংরার পুলিন খটিক রোডেও। অভিযোগ, সেখানে বৃন্দাবনের বাসিন্দা একটি ছেলের সঙ্গে ১৭ বছরের এক নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছিলেন বাবা সমীর মণ্ডল। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে ট্যাংরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ওই কিশোরীকে। সাত দিন দু’টি মেয়েকেই হোমে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিশুকল্যাণ সমিতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police minor girl marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE