Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সংযত হোক বাহিনী, চান নগরপাল

গত মাসে কলকাতায় দু’টি রাজনৈতিক আন্দোলনে বাহিনীর এই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে লালবাজার। প্রতিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বাহিনীকে সতর্ক করেছেন, এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। যে সব পুলিশকর্মীরা ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সতর্ক করে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

পুলিশের যে আচরণে আপত্তি পুলিশ কমিশনারের। ফাইল চিত্র

পুলিশের যে আচরণে আপত্তি পুলিশ কমিশনারের। ফাইল চিত্র

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০২:২৯
Share: Save:

মাটিতে পড়ে রয়েছেন এক বিক্ষোভকারী। তাঁকে ঘিরে ধরে লাঠি চালাচ্ছেন জনা চারেক পুলিশকর্মী।

বিক্ষোভ কর্মসূচির পরে সাংবাদিকেরা এক জায়গায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। হঠাৎ পুলিশের হামলা। এক চিত্র সাংবাদিককে ঘিরে ধরে চলল বেপরোয়া লাঠি।

বৌবাজারের সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন। বিক্ষোভকারীদের ধরতে তার মধ্যে ঢুকে বেপরোয়া ভাবে যাত্রীদের উপরে লাঠিচার্জ করছে পুলিশ।

গত মাসে কলকাতায় দু’টি রাজনৈতিক আন্দোলনে বাহিনীর এই ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে লালবাজার। প্রতিটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার বাহিনীকে সতর্ক করেছেন, এমন ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। যে সব পুলিশকর্মীরা ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সতর্ক করে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মে মাসে বামেদের নবান্ন অভিযানে বাহিনীর একটি অংশ যে ভাবে বেপরোয়া লাঠি চালিয়েছে, তাতে লালবাজারের কর্তারা বিব্রত। বিশেষত, সাংবাদিকদ ও মাটিতে পড়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের উপরে কেন পুলিশ লাঠি চালাতে গেল, তার ব্যাখ্যা তাঁর কাছে নেই বলে পুলিশ কমিশনার ঘনিষ্ঠ মহলে মন্তব্য করেছেন। বামেদের নবান্ন অভিযান ও বিজেপির লালবাজার অভিযানে পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী। দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্তারা পরিস্থিতি আগাম বুঝতে না পারার জন্যই বাহিনীকে লাঠি চালাতে হল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে লালবাজার। বিশেষ করে সাংবাদিকদের উপরে লাঠি চালানোর নির্দেশ কে বা কারা দিয়েছিলেন, সেটাও জানতে চান পুলিশ কমিশনার।

লালবাজার সূত্রে খবর, বিজেপির অভিযানের পরেই গত সপ্তাহে পুলিশের শীর্ষকর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজীববাবু। সেখানে বাহিনীর ‘বেপরোয়া’ মনোভাব নিয়ে নিজের উদ্বেগ চেপে রাখেননি তিনি। বিভিন্ন ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারদের তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, ওই দিনের ঘটনায় বাহিনীর যে সব সদস্যেরা মাটিতে পড়ে থাকা রাজনৈতিক কর্মী বা বিক্ষোভকারীকে ঘিরে ধরে লাঠি দিয়ে মারধর করেছেন, তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। সতর্ক করতে হবে ওই সব পুলিশকর্মীকে। বিজেপির লালবাজার অভিযানের দিন মেট্রো স্টেশনের ভিতরে ঢুকে যাত্রীদের উপরে কেন লাঠিচার্জ করতে হল, তারও ব্যাখ্যা চেয়েছেন কমিশনার।

শহরে বড় বিক্ষোভ কর্মসূচি থাকলে প্রতিটি ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনারেরা তাঁদের অধীনে থাকা বিভিন্ন থানার পুলিশকর্মীদের নিয়ে ওই বাহিনী গঠন করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজীববাবুর ওই নির্দেশের পরেই ডেপুটি কমিশনারেরা নিজেদের বিশেষ দলের সদস্যদের ডেকে পাঠান। পুলিশি লাঠিচার্জের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয় তাঁদের। দেখানো হয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিও।

লালবাজারের এক শীর্ষকর্তার কথায়, দু’দিনই বিক্ষোভকারীরা পুলিশকর্মীদের লক্ষ্য করে ইট ছুড়েছে। কিন্তু এক জন বিক্ষোভকারী একা হয়ে গেলে তাঁকে ধরে একাধিক পুলিশকর্মী পেটাবেন, এটা হতে পারে না। আবার সাংবাদিকদের হাতে ক্যামেরা দেখার পরেও কেন তাঁদের পুলিশ আক্রমণ করবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কমিশনার। পুলিশের অন্য কর্তারা জানিয়েছেন, লাঠিচার্জ মানে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া নয়। এটাই বোঝাতে চেয়েছেন কমিশনার। ওই দু’দিন যে সব পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন পুলিশ কমিশনার। তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE