Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সুরক্ষিত কি ঋণদাতা সংস্থা, দেখবে পুলিশ

প্রতিটি শাখার জন্য সোনা মজুত রাখার নির্দিষ্ট সীমা থাকবে ও সেই সীমা পেরোলে অতিরিক্ত সোনা পাঠিয়ে দিতে হবে সংস্থার প্রধান শাখা অফিসে। শক্তিশালী, রাতের অন্ধকারেও ছবি তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন যথেষ্ট সংখ্যক সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে অফিসের ভিতরে ও বাইরে। এ রকম আরও কিছু ব্যবস্থার কথা বলেছে পুলিশ।

সুরবেক বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:০৫
Share: Save:

সোনা নিরাপদে রাখতে রয়েছে ডজন খানেক সুরক্ষা বিধি। প্রবর্তক খাস লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।

কমপক্ষে দু’জন সুপ্রশিক্ষিত বন্দুকধারী রক্ষী প্রতিটি শাখায় নিয়োগ করতে হবে। তবে সেই রক্ষীদের অতীত, চরিত্র সম্পর্কে ভাল ভাবে খোঁজ নেওয়া দরকার। নতুন কোনও শাখা খোলার আগে জানাতে হবে লালবাজার ও স্থানীয় থানাকে। সব ক’টি শাখায় বিপুল পরিমাণ সোনা মজুত করা যাবে না। প্রতিটি শাখার জন্য সোনা মজুত রাখার নির্দিষ্ট সীমা থাকবে ও সেই সীমা পেরোলে অতিরিক্ত সোনা পাঠিয়ে দিতে হবে সংস্থার প্রধান শাখা অফিসে। শক্তিশালী, রাতের অন্ধকারেও ছবি তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন যথেষ্ট সংখ্যক সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে অফিসের ভিতরে ও বাইরে। এ রকম আরও কিছু ব্যবস্থার কথা বলেছে পুলিশ।

আসলে বড় কাঁটা বলতে একটাই খচখচ করছে। সদ্য শেষ হওয়া বছরে শহরে যত বড় বড় সংগঠিত অপরাধ হয়েছে, তার মধ্যে একটির কিনারা হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসে বেনিয়াপুকুরে একটি বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থার অফিসে ঢুকে বন্দুক উঁচিয়ে কয়েক কোটি টাকার সোনা ডাকাতি। তবে জড়িতদের যেমন শনাক্ত করা যায়নি, তেমনই আবার ওই ঘটনা শহরের অধিকাংশ ঋণদাতা সংস্থার অফিসে নিরাপত্তার হতশ্রী চেহারা বেআব্রু করেছে বলে জানাচ্ছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাই, কলকাতায় যে সব সংস্থা সোনা বন্ধক রেখে ঋণ দেয়, তাদের এক গুচ্ছ সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্প্রতি নিতে বলেছে লালবাজার।

নতুন বছরে কিছু দিনের মধ্যে বিভিন্ন থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দারা সরেজমিন খতিয়ে দেখবেন, কোন সংস্থা উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছে, আর কারা করেনি।

কলকাতা পুলিশের হিসেবে, সোনা বন্ধক রেখে ঋণ দেয়, এমন সংস্থাগুলির সব মিলিয়ে প্রায় ৪০টি অফিস বা শাখা এই শহরে আছে। যেখানে সোনার গয়না, বিস্কুট, ছোট ইট, কয়েন বন্ধক রেখে ক্রেতা বা খদ্দেরদের নগদ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, খুব বেশি নগদ ওই সব সংস্থার অফিসে থাকে না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকা ক্রেতাদের দেওয়া হয়। কিন্তু কেজি কেজি সোনা ওই সব অফিসে জমা থাকে। ‘‘অথচ এ জন্য যে রকম নিরাপত্তা থাকা উচিত, তার প্রায় কিছুই বেশির ভাগ সংস্থায় নেই। ফলে, ওই সব সংস্থা দুর্বৃত্তদের সহজ লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে’’ বলছেন লালবাজারের এক কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘এটা রুখতেই আমরা কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

বেনিয়াপুকুরের সেই ডাকাতিতে দুষ্কৃতীরা আগে থেকেই জানত, সিসি ক্যামেরা কোথায় আছে। ক্রেতাদের ছদ্মবেশে থাকা ওই ডাকাতেরা স্বমূর্তি ধারণ করে প্রথমে ওই সব ক্যামেরার সংযোগ কেটে দেয়। ক্যামেরাগুলির হার্ড ডিস্কও তারা হাতিয়ে নেয়।

গোয়েন্দারা তাই জানিয়েছেন, ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা ও আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা এমন ভাবে বসাতে হবে, যাতে সহজে বোঝা না যায়। সিসি ক্যামেরার ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার বা ডিভিআর এমন নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে, যাতে সহজে দুষ্কৃতীরা তার হদিস না পায়। সিসি ক্যামেরার আলাদা ‘ব্যাকআপ’ রাখার কথাও বলেছেন গোয়েন্দারা। কোনও ভাবে লুটেরারা ডিভিআর-এর সন্ধান পেয়ে সেটি নষ্ট করে ফেললেও সিসি ক্যামেরার শেষ তিন দিনের রেকর্ডিং প্রধান শাখা অফিসে বা ‘ক্লাউড স্টোরেজ’-এ রাখতে হবে।

তবে বেনিয়াপুকুর তো বটেই, আসানসোল, দুর্গাপুরের মতো রাজ্যের অন্য জায়গায় এমন ঋণদাতা সংস্থায় দুষ্কৃতীরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ক্রেতাদের ছদ্মবেশে ঢুকে আগে সব কিছু খোঁজ নিয়ে যাচ্ছে। সেই জন্য সমস্ত সাক্ষাৎপ্রার্থীর ছবি তোলার পর তবেই তাঁদের সংস্থায় ঢুকতে দেওয়ার কথা বলছেন গোয়েন্দারা। সেই সব ছবিও ক্লাউড স্টোরেজ-এ রাখতে হবে। ইচ্ছুক ক্রেতা হিসেবে যাঁরা ঢুকছেন, নিতে হবে তাঁদের বিস্তারিত তথ্যও। মাঝেমধ্যেই পুলিশ ওই সব সংস্থার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মহড়া দেবে এবং সেই বন্দোবস্ত রাখতে হবে। সংস্থায় বোতাম টিপলে বিপদঘণ্টি যেন স্থানীয় থানায় বাজে।

এক পুলিশকর্তার অভিমত, ‘‘বহু সংস্থায় মজুত রাখা সোনার ৮৫ শতাংশ বিমা করানো থাকে। ডাকাতি হলে বিমা কোম্পানির কাছ থেকে সেই সোনার টাকা পেয়ে যায় ঋণদাতা সংস্থাগুলি। তাই অনেক সংস্থার নিরাপত্তা নিয়ে গরজ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gold Loan Agencies Security police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE