Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ঘেরাও জুনিয়র ডাক্তারদের, কাটা পা নিয়ে ঘুরলেন ভ্যানচালক

ফের সামনে এল রাজ্যে চিকিত্সা পরিষেবার বেহাল ছবিটা। সামান্য এক ঘেরাও কর্মসূচির জেরে শনিবার বিপর্যস্ত হল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর পরিষেবা। রেহাই মিলল না পা কাটা যাওয়া গুরুতর জখম রোগীরও।

আহত ভ্যানচালক কৃষ্ণপ্রসাদ।

আহত ভ্যানচালক কৃষ্ণপ্রসাদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৯:১০
Share: Save:

ফের সামনে এল রাজ্যে চিকিত্সা পরিষেবার বেহাল ছবিটা। সামান্য এক ঘেরাও কর্মসূচির জেরে শনিবার বিপর্যস্ত হল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এর পরিষেবা। রেহাই মিলল না পা কাটা যাওয়া গুরুতর জখম রোগীরও। স্রেফ জুনিয়র ডাক্তারদের ঘেরাও কর্মসূচির জেরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বহু রোগীকে। চিকিত্সা পরিষেবা না পেয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে কার্যত চরকি পাক খেতে হল রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়দের।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ভিড় ট্রেনে ঝুলে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে কৃষ্ণপ্রসাদ নামে এক ভ্যানচালকের বাঁ পা কাটা যায়। টিটাগড় থেকে ব্যারাকপুর ফিরছিলেন ওই ভ্যানচালক। অভিযোগ, এর পরই শুরু হয় তাঁর এবং তাঁর পরিজনদের নরক যন্ত্রণা। কলকাতার তাবড় সরকারি হাসপাতাল ঘুরে মাথা কুটে মরলেও মিলল না ন্যূন্যতম চিকিত্সা পরিষেবা। কাটা পা সঙ্গে নিয়ে ওই ভ্যানচালককে প্রথমে ওই দিন রাতে ব্যারাকপুরের বি এন মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁর আত্মীয়েরা। কিন্তু প্লাস্টিক সার্জারির সুবিধা নেই বলে তাঁদের আর জি কর হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলা হয়। আর জি করে গেলে বলা হয়, রাতে প্লাস্টিক সার্জারি করা যাবে না। এসএসকেএম-এ নিয়ে যেতে বলা হয় তাঁকে। রাতে বাড়ি ফিরে যান গুরুতর জখম ওই ভ্যানচালক।


চলছে জুনিয়র ডাক্তাদের ঘেরাও কর্মসূচি

শনিবার আলো ফুটতেই এসএসকেএমে যান তিনি এবং তাঁর আত্মীয়রা। শুরু হয় এ দরজা থেকে ওই দরজায় ঘোরা। ওই ভ্যানচালকের অভিযোগ, প্রথমে ওটি-তে নিয়ে যাওয়া হলেও পরে অপারেশন টেবল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় মুমূর্ষু ওই রোগীকে। জুনিয়র ডাক্তাররা ঘেরাও চালাচ্ছেন, তাই তাঁদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু প্লাস্টিক সার্জেন নেই বলে সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় ওই রোগীকে। ফের আরও এক বার এসএসকেএমে ওই ভ্যানচালককে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তাঁর আত্মীয়রা। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই নড়েচড়ে বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শনিবার বেলা ৩টে নাগাদ এমার্জেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে ভর্তি নেওয়া হয় কৃষ্ণপ্রসাদ নামে ওই ভ্যানচালককে। তখন যন্ত্রণায় চিত্কার করছেন তিনি। অবশেষে দেওয়া হয় স্যালাইন। সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটা পা-টি জোড়া লাগেনি।

জুনিয়র ডাক্তারদের নিরাপত্তা-সহ তিন দফা দাবিতে এ দিন অধ্যক্ষ মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে সাত ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তাঁকে ঘেরাও করে রাখা হয়। পরে পুলিশি আশ্বাসে বিক্ষোভ তুলে নেন তাঁরা। ঘটনার জেরে বিপাকে পড়েন দূরদূরান্ত থেকে এসএসকেএমে আসা রোগী এবং তাঁদের পরিজনেরা।
ঘণ্টা সাতেকের বিক্ষোভের জেরে বিপর্যস্ত হয় চিকিত্সা পরিষেবা। অভিযোগ, ভর্তি না নিয়ে বহু রোগীকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। সরকারি ভাবে শয্যা না থাকার কথা বললেও অনেক চিকিত্সকই একান্তে স্বীকার করেছেন, জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভের জেরেই এ রকম অসুবিধার মধ্যে পড়েন রোগীরা। জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি, কৃষ্ণপ্রসাদের ঘটনাই প্রমাণ করে এসএসকেএম কী ভাবে তাঁদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পরিষেবা চলছে।” এত সবের পরেও কেন অভিজ্ঞ চিকিত্সকের সংখ্যা কেন বাড়ানো হয় না এই হাসপাতালে, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।

ছবি: রণজিত্ নন্দী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE