Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চড়া বাজারে ব্যথা বাড়াচ্ছে চন্দ্রমুখী

একে নোটের আকালে মানুষের মাথায় হাত। তার উপর ভিন্‌ রাজ্য থেকে জোগান কম থাকায় বিয়ের মরসুমে মাছের দাম চ়ড়া। এই দুই সাঁড়াশি চাপের মধ্যেই মরসুমে বিয়ের প্রথম দিন, সোমবার দাম চড়ল চন্দ্রমুখী আলুর। একেবারে ৩০ টাকা প্রতি কেজি।

সোমবার, সল্টলেকের বৈশাখী মার্কেটে। ছবি: শৌভিক দে

সোমবার, সল্টলেকের বৈশাখী মার্কেটে। ছবি: শৌভিক দে

দেবাশিস দাস
শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪১
Share: Save:

একে নোটের আকালে মানুষের মাথায় হাত। তার উপর ভিন্‌ রাজ্য থেকে জোগান কম থাকায় বিয়ের মরসুমে মাছের দাম চ়ড়া। এই দুই সাঁড়াশি চাপের মধ্যেই মরসুমে বিয়ের প্রথম দিন, সোমবার দাম চড়ল চন্দ্রমুখী আলুর। একেবারে ৩০ টাকা প্রতি কেজি। এ দিন গড়িয়াহাট, মানিকতলা, লেক মার্কেট-সহ কলকাতার বিভিন্ন খুচরো বাজারে এই দামে বিকিয়েছে চন্দ্রমুখী। উল্টো দিকে, জ্যোতি আলুর দাম ছিল কেজি প্রতি কোথাও ১৮, কোথাও ২০ টাকা। সাধারণত, এই দু’ধরনের আলুর দামে প্রতি কেজিতে খুব বেশি হলে চার-পাঁচ টাকা হেরফের হয়। এ দিন সেই ব্যবধানই কেজি প্রতি ১০-১২ টাকায় উঠে গিয়েছে।

যদিও দামের এই হেরফের নিয়ে হেলদোল নেই কোনও মহলে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার গঠিত টাস্ক ফোর্স সূত্রের খবর, চন্দ্রমুখী আলুর দামের ব্যাপারে সরকার বরাবরই কম গুরুত্ব দেয়। কারণ, দাম বেশি বলে চন্দ্রমুখী বেশি লোক খান না। অধিকাংশ মানুষ খান জ্যোতি আলু। তাই, সেটির দাম নিয়েই সরকারের মাথাব্যথা। জ্যোতি আলু চাষ করা কৃষকের সংখ্যাও অনেক বেশি। টাস্ক ফোর্সের এক সদস্যের কথায়, ‘‘বৈঠকে চন্দ্রমুখী আলুর দাম নিয়ে কথা উঠলেই সরকারের শীর্ষ স্তর থেকে বলা হয়, তার দাম নিয়ে ভাবার দরকার নেই। জ্যোতির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলেই হবে।’’

রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদারও বলেন, ‘‘মোট উৎপাদনের পাঁচ শতাংশ ফলন হয় যে জিনিসের, সেটা বছরের শেষে তা-ও ৩০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। চন্দ্রমুখী আলু নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে?’’ তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের বেশি পয়সা, তাঁরাই চন্দ্রমুখী আলু খান। ওটা হল বড়লোকদের শৌখিনতা। এক শ্রেণির মানুষ আছেন, যাঁরা যত দামই হোক, চন্দ্রমুখী আলু খাবেন।’’

স্বাদে, আভিজাত্যে আলুর বংশে চন্দ্রমুখী কুলীন। চরিত্রে নরম, তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। কিন্তু এর জোগান সব সময়েই কম। রাজ্য কৃষি ও কৃষি বিপণন দফতরের হিসেব বলছে, চন্দ্রমুখীর ফলন রাজ্যে আলুর মোট ফলনের বড়জোর পাঁচ শতাংশ। চলতি বছরে চন্দ্রমুখীর উৎপাদন হয়েছে বড়জোর পাঁচ-ছ’লক্ষ টন। বাকি ৮৫ লক্ষ টন অন্য জাতের আলু। এখন শুধু হুগলিতেই মূলত চন্দ্রমুখীর চাষ হয়। অথচ রাজ্যে এর চাহিদা থাকে বছরে ১৪-১৫ লক্ষ টন।

গড়িয়াহাট, মানিকতলা, লেক মার্কেটের খুচরো ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় পঞ্জাব-সহ উত্তর ভারত থেকে আমদানি করা হয় চন্দ্রমুখী। এখন নোটের এই টানাটানির সময়ে সেই আমদানিও মাঝেমধ্যে মার খাচ্ছে। ফলে বাড়ছে দাম। টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘‘নোট বাতিলের ফলে কৃষকেরা বেশি পরিমাণে চন্দ্রমুখী আলু আমদানি করতে পারছেন না। সে জন্যই দাম খানিকটা বেড়েছে।’’

কিন্তু একই সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, দাম বাড়লেও তা একবারে ৩০ টাকা কেজিতে উঠে যাওয়ার মতো নয়। তাঁদের বক্তব্য, পঞ্জাব থেকে নতুন আলু যখন রাজ্যের বাজারে কিছু কিছু করে ঢুকতে শুরু করেছে, তখন চন্দ্রমুখীর এত দাম হওয়ার কথা নয়।

গড়িয়াহাট বাজারের আলু ব্যবসায়ী মনা সাহা জানান, এ দিন তাঁরা ২০ টাকা কেজি দরে জ্যোতি ও ৩০ টাকা কেজি দরে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি করেছেন। মানিকতলা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রভাত দাস জানান, ওই বাজারেও এ দিন ৩০ টাকা কেজি দরে চন্দ্রমুখী আলু বিক্রি হয়েছে। দক্ষিণ শহরতলির বাঁশদ্রোণী ও বাঘা যতীন বাজারেও ওই দাম ছিল চন্দ্রমুখী আলুর।

রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত অবশ্য এই অবস্থার জন্য মূলত ফড়েদের দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চন্দ্রমুখী আলুর বেশির ভাগটা বাইরে থেকে আনতে হয়। ফড়েরা সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে।’’ যদিও প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘শুধু ফড়েরা নয়, কোনও কোনও বিক্রেতাও ইচ্ছাকৃত ভাবে চন্দ্রমুখীর দাম বাড়াচ্ছেন।’’

বাম জমানায় এক বার চন্দ্রমুখী আলুর দাম অত্যধিক বাড়ায় রাজ্যের তৎকালীন কৃষি বিপণন মন্ত্রী কলিমউদ্দিন শামস বলেছিলেন, ‘‘চন্দ্রমুখী আলু খায় বুর্জোয়ারা। আর সর্বহারারা খায় জ্যোতি আলু। তার দাম তো বাড়েনি!’’

টাস্ক ফোর্সের একাধিক সদস্যের রসিকতা, ‘‘যাক, তা হলে অন্তত চন্দ্রমুখী আলু নিয়ে বামফ্রন্ট আর তৃণমূলের দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনও তফাত নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Currency Crisis Potato Price Price Increase
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE