Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধী ভবনকে সংগ্রহশালায় পরিণত করার প্রস্তুতি শুরু

বর্তমানে ওই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ করে পূর্ত দফতর। তাদের তরফে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভবনে বেশ কিছু ‘পরিবর্তন’ করা হয়েছে বলে হেরিটেজ কমিশন সূত্রের খবর। কমিশনের কর্তাদের একাংশের মতে, ওই ‘পরিবর্তন’ ভবনটির নির্মাণশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি।

সংরক্ষিত: গাঁধীজির ব্যবহৃত সামগ্রী ও চরকা রয়েছে গাঁধী ভবনে। ছবি: শৌভিক দে

সংরক্ষিত: গাঁধীজির ব্যবহৃত সামগ্রী ও চরকা রয়েছে গাঁধী ভবনে। ছবি: শৌভিক দে

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৮ ০২:৪৭
Share: Save:

মহাত্মা গাঁধীর ইতিহাসের সংরক্ষণে ‘সন্তুষ্ট নয়’ রাজ্য সরকার। তাই বেলেঘাটার গাঁধী ভবন নতুন করে সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই ভবনকে পুরোপুরি সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। কমিশনের তরফে এ ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। হেরিটেজ কমিশনের আধিকারিকেরা ইতিমধ্যেই গাঁধী ভবনে গিয়ে প্রাথমিক সমীক্ষাও করে এসেছেন।

বর্তমানে ওই ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ করে পূর্ত দফতর। তাদের তরফে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভবনে বেশ কিছু ‘পরিবর্তন’ করা হয়েছে বলে হেরিটেজ কমিশন সূত্রের খবর। কমিশনের কর্তাদের একাংশের মতে, ওই ‘পরিবর্তন’ ভবনটির নির্মাণশৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। তাই সংস্কারের সময়ে সেগুলি ভেঙে ফেলাও হতে পারে। পূর্ত দফতর অবশ্য জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরেই ভবনটি অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল। সংস্কার করতে গিয়ে মেরামতি করা হয়, সে কারণে সামান্য কিছু পরিবর্তন হলেও হতে পারে, কিন্তু মূল কাঠামোয় কখনওই হাত দেওয়া হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, রিপোর্ট তৈরির পরে ভবনটি সংস্কারের প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। আগামী ২ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওই ভবনে যাওয়ার কথা। তার পরে মূল সংস্কার শুরু হবে।

ইতিহাস বলছে, দাঙ্গা বিধ্বস্ত কলকাতায় শান্তি স্থাপনের উদ্দেশে মহাত্মা গাঁধী ওই বাড়িতে এসেছিলেন ১৯৪৭ সালের ১২ অগস্ট। ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলেন। সেই সূত্রেই সাম্প্রতিক সময়ে বেলেঘাটার ১৫০ বি, সুরেশচন্দ্র ব্যানার্জি রোডের ঠিকানার বাড়িটা যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে।

তবে হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, গাঁধী ইতিহাস যে ভাবে সংরক্ষিত হয়েছে ভবনে, তা পর্যাপ্ত নয়। এখনও ওখানে গাঁধীজির খড়ম, তাঁর শোওয়ার জায়গা, চরকা থেকে শুরু করে জল খাওয়ার গ্লাস, হ্যারিকেন-সহ সব জিনিসপত্রই সযত্নে রাখা রয়েছে। ভবন সারাক্ষণ দেখভালের জন্য দু’জন কর্মীও রয়েছেন। কিন্তু হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ওখানে যা বর্তমানে রয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি স্মারক, গাঁধীর স্মৃতিবাহিত জিনিস রাখার সুযোগ রয়েছে। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ভবনটিকে সংগ্রহশালা বলার মতো কিছুই এখন ওখানে নেই। ওটাকে পুরোপুরি সংগ্রহশালায় পরিণত করতে গেলে পুরো ভোলবদল দরকার। অনেক বেশি পরিমাণে জিনিসপত্র রাখা হবে। সেই রিপোর্টই প্রস্তুত করা হচ্ছে।’’

ইতিহাসবিদদের একাংশের মতে, গাঁধীজি সচেতন ভাবেই ওই বাড়ি নির্বাচন করেছিলেন। কারণ, তৎকালীন বেলেঘাটায় হিন্দু-মুসলিম একত্রে বাস করতেন। তাই দাঙ্গার সময়ে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিতেই গাঁধীজি সেখানে থেকেছিলেন। সেই ইতিহাস সবিস্তারে ওই ভবনে ধরে রাখার পরিকল্পনা হয়েছে। তথ্য বলছে, আগে ওই ভবন ও সংলগ্ন জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩০ কাঠা। পিছনের পুকুরটিও মূল ভবনের জমির মধ্যেই ছিল। কিন্তু পরে পাঁচিল তুলে দেওয়ায় পুকুরটি ভবন থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ভবন ও সংলগ্ন জমির পরিমাণ প্রায় ১৪ কাঠা। হেরিটেজ কমিশনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ভবন ও সংলগ্ন জমি নিয়েই একটা ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত করতে কত টাকা খরচ হবে, তাই আপাতত দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gandhi Bhavan Museum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE