Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
রুবি জেনারেল

রোগীমৃত্যুর গুজব ঘিরে চুরমার হল হাসপাতাল

রোগী মারা গেলেন রবিবার সন্ধ্যায়। কিন্তু তার অনেক আগেই শনিবার গভীর রাতে রোগীমৃত্যুর ভুল খবরে ভাঙচুর চলল ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে।

তাণ্ডবের পরে।

তাণ্ডবের পরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৪৯
Share: Save:

রোগী মারা গেলেন রবিবার সন্ধ্যায়। কিন্তু তার অনেক আগেই শনিবার গভীর রাতে রোগীমৃত্যুর ভুল খবরে ভাঙচুর চলল ই এম বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে।

কী হয়েছিল শনিবার রাতে? পুলিশ সূত্রে খবর, গত বৃহস্পতিবার মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে বাইপাসের রুবি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন পিকনিক গার্ডেনের বাসিন্দা অশোককুমার রায়। মাথা থেকে রক্তক্ষরণের পাশাপাশি তাঁর উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের সমস্যাও ছিল। আইটিইউ-এ ভেন্টিলেশনে ছিলেন তিনি। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়। বর্তমানে হাসপাতালের মর্গে রয়েছে তাঁর দেহ। আজ, সোমবার দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ কয়েকটি মোটরবাইক ও দু’তিনটি ম্যাটাডরে চেপে ১০০ জনেরও বেশি যুবক হাসপাতালে ঢোকেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, অশোকবাবু মারা গিয়েছেন এবং সেই খবর হাসপাতাল গোপন করছে। এই অভিযোগে ভাঙচুর শুরু করেন তাঁরা। কাচ ভাঙার শব্দে জেগে ওঠে গোটা হাসপাতাল। সিঁড়ি বেয়ে চিৎকার করতে করতে উন্মত্ত যুবকেরা ঢুকে পড়েন আইটিইউ-তেও। বাধা দিতে গিয়ে মার খান কয়েক জন চিকিৎসক এবং নিরাপত্তাকর্মী। এবং পুরোটাই ঘটে ভুল তথ্যের ভিত্তিতে। রিসেপশন থেকে ভাঙচুর শুরু হয়েছিল। পরে তা জরুরি বিভাগ, আইটিইউ-তেও ছড়ায়। হাসপাতালের টিভি, কম্পিউটার, টেলিফোন ভেঙে ফেলা হয়। এই ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

শনিবার, রুবি জেনারেল হাসপাতালে।

‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিকেয়ার সার্ভিস পার্সন্‌স অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইনস্টিটিউশন্‌স (প্রিভেনশন অব ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ টু প্রপার্টি) অ্যাক্ট ২০০৯’ অনুযায়ী, হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ঢুকে ভাঙচুর চালানো, চিকিৎসক, নার্সদের মারধরের ঘটনা জামিন-অযোগ্য অপরাধ। গত ছ’বছরে এই আইনে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে হামলার দায়ে বহু জনকে গ্রেফতার করা গয়েছে। কিন্তু তার পরেও এই প্রবণতা বন্ধ করা যায়নি।

শনিবার রাতেই ঘটনার খবর পেয়ে আনন্দপুর থানার পুলিশ এলে উত্তেজিত যুবকেরা পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছুড়তে থাকে। আনন্দপুর থানার ওসি দেবজিৎ ভট্টাচার্যের বুকে চোট লাগে। ইটের আঘাতে জখম হন আরও তিন পুলিশকর্মী। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে রাতেই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পাশাপাশি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ১৫টি মোটরবাইক। পুলিশ জানিয়েছে, হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় আরও কয়েক জন অভিযুক্ত রয়েছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মীকে কাজে বাধাদান, অবৈধ জমায়েত ও গোলমাল-সহ একাধিক মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

কেন এ ভাবে ভাঙচুর চালানো হল? মৃত্যু সংবাদ যাচাই না করেই কেন এ ভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়লেন অভিযুক্ত ওই যুবকেরা? এই প্রশ্নের কোনও সরাসরি জবাব মেলেনি রোগীর পরিবারের কাছে। রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই রোগী ভেন্টিলেশনেই ছিলেন। তার পরে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃতের ছেলে রাহুল রায় জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়িতে সিঁড়ি থেকে পড়ে মাথায় গুরুতর চোট পান তাঁর বাবা। ওই দিনই বাইপাসের ওই বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। রাহুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘শনিবার রাতে কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান, বাবার মাথার খুলি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচারের সঙ্গে সঙ্গে কেন আমাদের হাতে কাটা খুলি দেওয়া হল না? ভুল অস্ত্রোপচার হওয়াতেই বাবা ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছিলেন। এ জন্য চিকিৎসায় গাফিলতিই দায়ী।’’

হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) শুভাশিস দত্ত বলেন, ‘‘রোগীর অবস্থা যে সঙ্কটজনক, তা বাড়ির লোককে প্রথমেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও কোনও বিষয়ে অভিযোগ থাকলে সরাসরি ওঁরা সে নিয়ে কথা বলতে পারতেন। তা না করে হাসপাতালে যে ভাবে হামলা চালালেন, তাতে অন্য রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকেরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’

— নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE