Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নজরদারির অভাব, শহরে অবাধ স্কুল-‘ব্যবসা’

শহরের যত্রতত্র প্রি-স্কুল। অনেক ক্ষেত্রেই নেই সুরক্ষা, পরিকাঠামো। কেন এমন দশা?আর যারা প্রি-স্কুলের ট্রেড লাইসেন্স দেয়, সেই পুরসভা কী বলছে? কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি।

যারা প্রি-স্কুলের ট্রেড লাইসেন্স দেয়, সেই পুরসভা কী বলছে?

যারা প্রি-স্কুলের ট্রেড লাইসেন্স দেয়, সেই পুরসভা কী বলছে?

সুপ্রিয় তরফদার এবং আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:৫১
Share: Save:

শহর, মফস্সলের অভিজ্ঞতাই বলছে, ট্রেড লাইসেন্স ও দমকলের ‘নো অবজেকশন’ সার্টিফিকেট থাকলেই খুলে ফেলা যায় প্রি-স্কুল। আর সেই সব স্কুলের অনেকগুলিতে নেই অগ্নিসুরক্ষার ন্যূনতম ব্যবস্থা।

তা হলে দমকল বা সংশ্লিষ্ট পুরসভার ভূমিকা কী? দমকলের অধিকর্তা সমীর চৌধুরীর দাবি, ‘‘নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট ছাড়া কোনও স্কুলকে ছাড়পত্র দিই না।’’ তা হলে অগ্নি নির্বাপণের পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে চলছে অনেক প্রি-স্কুল? সমীরবাবুর কথায়, ‘‘সমস্ত স্কুলে নজরদারি করা সম্ভব নয়। সেই পরিকাঠামো নেই। কেউ অভিযোগ করলে খতিয়ে দেখা হয়।’’

আর যারা প্রি-স্কুলের ট্রেড লাইসেন্স দেয়, সেই পুরসভা কী বলছে? কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ বার্তারও উত্তর দেননি। লাইসেন্স দফতর সূত্রের খবর, আবেদনের ভিত্তিতে লাইসেন্স দেওয়া হয়। তার আগে সংশ্লিষ্ট স্কুলের ফায়ার লাইসেন্স রয়েছে কি না, স্কুলটিতে যাতায়াতযোগ্য রাস্তা রয়েছে কি না ইত্যাদি দেখা হয়। তা সত্ত্বেও পরিকাঠামো ছাড়াই কী ভাবে অনেক স্কুল চলছে? ওই দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব। তবে সব কিছু যাচাই করে লাইসেন্স দিই।’’

বিধাননগর পুরসভার মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘পরিকাঠামো দেখেই লাইসেন্স দিই। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বেশ কিছু স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক নেই। সেই স্কুলগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব।’’

তবে অনেকেরই মত, স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে অভিযোগ কেউ করেন না বলেই অনেক প্রি-স্কুল যথাযোগ্য পরিকাঠামো ছাড়া রমরমিয়ে চলছে। অভিভাবকদের এক অংশের মতে, মাঝেমধ্যে তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে এই নিয়ে অভিযোগ করলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। কর্তৃপক্ষের ‘রোষানলে’ পড়ার আশঙ্কায় থানায়, পুরসভায় বা দমকল বিভাগে গিয়ে অভিযোগ জানানোর জন্য একজোটও তাঁরা হতে পারেননি।

মডার্ন হাই ফর গার্লসের অধিকর্তা দেবী কর এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শহরের সমস্ত প্লে এবং প্রি-স্কুল যে খারাপ তা বলব না। কিন্তু এটা মানতে হবে যে কোনও কোনও স্কুলে পড়াশোনার যথোপযুক্ত পরিবেশ নেই। অভিভাবকদের বলব, আগে ভাল করে খোঁজ নিন। কারও নজরদারির অবশ্যই প্রয়োজন।’’ হিন্দু স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্তের মত, ‘‘এই সব স্কুলে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারি থাকা উচিত।’’

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘প্রি-স্কুলের কোনও অনুমোদন সরকার দেয়নি। তাই এ সব নিয়ে কোনও ভাবনা নেই।’’ যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তা হলে? শিশুদের ক্ষতি হলে সরকারেরও তো দায় থাকবে। মন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘সরকারের উপর দায় কেন বর্তাবে? সরকার তো ওই স্কুলের অনুমোদন দেয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education Pre-School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE