Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সাময়িক ছাড়পত্রে ব্যবসা, আগুন লাগলে দায় কার

শুধুমাত্র নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে ওই লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু যেখানে বাগড়ি মার্কেট-সহ ৩৭টি ভবন জতুগৃহ হয়ে রয়েছে এবং শহরের বেশির ভাগ বাজার-দোকান-রেস্তরাঁরই বেহাল অবস্থা, সেখানে ‘প্রভিশনাল লাইসেন্স’ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি প্রতি পদে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ।

ছাড়: অগ্নি-সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা অনেক বাড়িতেই প্রভিশনাল ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলে ব্যবসা। নিজস্ব চিত্র

ছাড়: অগ্নি-সুরক্ষার ব্যবস্থা না থাকা অনেক বাড়িতেই প্রভিশনাল ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলে ব্যবসা। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:০৮
Share: Save:

কোনও নথিপত্র দেখানোর প্রয়োজন নেই! শুধুমাত্র দমকলের ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেই প্রমাণটুকু থাকলেই হল। তার ভিত্তিতেই এক বছর পর্যন্ত ব্যবসা করা যাবে!

বাগড়ি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ড বিতর্কের কেন্দ্রে এনে দিয়েছে এই ‘প্রভিশনাল লাইসেন্স’ নীতিকে! তিন বছর আগে ‘প্রভিশনাল লাইসেন্স’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই অনুযায়ী ২০১৫ সালে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন অ্যাক্ট, ২০০৬’ –এ প্রয়োজনীয় সংশোধনও করা হয়েছিল। দমকলমন্ত্রী তথা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় স্বীকার করেছেন, ‘‘ব্যবসায়ী মহলকে স্বস্তি দিতেই ওই নতুন নীতি আনা হয়েছিল।’’ কিন্তু ব্যবসায়ী মহলের সেই ‘স্বস্তি’ শহরকে জতুগৃহ বানানোর পথে কতটা ঠেলে দিচ্ছে, এখন সেই প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অন্দরেই।

শুধুমাত্র নতুন ব্যবসার ক্ষেত্রে ওই লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলেছিল সরকার। কিন্তু যেখানে বাগড়ি মার্কেট-সহ ৩৭টি ভবন জতুগৃহ হয়ে রয়েছে এবং শহরের বেশির ভাগ বাজার-দোকান-রেস্তরাঁরই বেহাল অবস্থা, সেখানে ‘প্রভিশনাল লাইসেন্স’ অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি প্রতি পদে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলেই মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। এমনিতেই পুরনো বহু বাড়ি নিয়ে নাজেহাল অবস্থা প্রশাসনের। শহরের আর কোথায় জতুগৃহ তৈরি হয়ে রয়েছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও কারও কাছে নেই। এই পরিস্থিতিতে শুধু দমকলের ছাড়পত্রের জন্য আবেদনের ভিত্তিতে এক বছর পর্যন্ত ব্যবসা করার সুযোগ শহরকে আরও বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কি না, ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

নতুন নিয়মে বলা রয়েছে, ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর প্রভিশনাল সার্টিফিকেট অব এনলিস্টমেন্ট মে বি সাবমিটেড উইদাউট ডকুমেন্ট’। শুধু ‘ফায়ার ক্লিয়ারেন্স’-এর জন্য আবেদন করা হয়েছে, সেই নথিটুকু দেখালেই হবে। আর এক বছর সময়সীমার মধ্যে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, দমকলের ছাড়পত্র, বিদ্যুৎ সংযোগ-সহ সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি দিতে পারলে তিন বছরের মেয়াদে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীকে স্থায়ী ট্রেড লাইসেন্সের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

কিন্তু ওই এক বছর মেয়াদের মধ্যে আগুন লাগলে কী করা হবে, সে সম্পর্কে কারও কাছেই কোনও সদুত্তর নেই! যখন এই নীতি চালু হয়েছিল, তখনও স্পষ্ট করে কেউ বলতে পারেননি, আগুন লাগলে তার দায় কার?

অথচ প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই নতুন নিয়মের আগে ট্রেড লাইসেন্স পেতে গেলে দমকলের নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট, জমির প্ল্যান-সহ সব নথিই জমা দিতে হত। যদিও বাগড়ি মার্কেটের ক্ষেত্রে ‘প্রভিশনাল সার্টিফিকেট’ দেওয়া হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। এক পুরকর্তা বলেন, ‘‘ওখানে তো সকলেরই পুরনো ব্যবসা। ফলে শুধু লাইসেন্স পুনর্নবীকরণ করা হয়েছে বলেই মনে হয়। প্রভিশনাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে কি না, নিশ্চিত নই।’’

প্রশাসনিক মহলের একটা বড় অংশই মনে করছেন প্রভিশনাল লাইসেন্স নীতি বিপদের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনিতেই বিপজ্জনক বা অগ্নিপ্রবণ বাড়িগুলিতে উপযুক্ত অগ্নি-সুরক্ষা ব্যবস্থা করা হচ্ছে কি না, তা পরিদর্শন করে দেখার মতো লোকবলের অভাব রয়েছে। দমকলও যে ঠিক ভাবে পরিদর্শন করে না, তা ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বাগড়ি মার্কেটের ঘটনায়। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘সকলে

ভালই জানেন, শহরের কী অবস্থা! তার পরেও ওই নতুন নিয়ম কী ভাবে চালু করা হয়েছিল তা ভাবলে অবাক হতে হয়।’’ প্রাক্তন মেয়র

বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গোটা ব্যাপারটাই তো বেআইনি! একের পর এক এরকম ঘটনা ঘটছে। তার পরেও কোনও হুঁশ নেই। কাগজপত্র ছাড়াই ব্যবসায়িক ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া

হচ্ছে! এগুলো তো একটি গোষ্ঠী বা কয়েক জন ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE