Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মজার টিজারে পুজোর প্রচার শহর জুড়েই

পুজো সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ও ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছে শহর। আর সেই ভিড়েই উঁকি মারছে এই ধরনের চমক জাগানো লাইন। ওই সমস্ত ব্যানারের নীচে কোথাও দুর্গা ঠাকুরের ছবি নেই।

প্রাচীন: খুলনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ির আদলে তৈরি হয়েছে যোধপুর গার্ডেন সর্বজনীনের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

প্রাচীন: খুলনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ির আদলে তৈরি হয়েছে যোধপুর গার্ডেন সর্বজনীনের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০১:১০
Share: Save:

‘আন্দামান যাওয়ার খরচ এ বার শূন্য।’ ‘হাঁটাপথে নয়, জাহাজে।’ ‘একশো দু’শো বছর নয়, ২১০০ বছর।’

পুজো সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ও ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছে শহর। আর সেই ভিড়েই উঁকি মারছে এই ধরনের চমক জাগানো লাইন। ওই সমস্ত ব্যানারের নীচে কোথাও দুর্গা ঠাকুরের ছবি নেই। লেখা নেই পুজোর উদ্যোক্তা বা ক্লাবের নামও। কিন্তু মানুষ বুঝে যাচ্ছেন, এই ব্যানারগুলো সবই পুজোর বিজ্ঞাপন। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রবণতা শুরু হলেও বিজ্ঞাপন জগতের বিশেষজ্ঞদের মতে, এ বছর এই ধরনের কৌতূহল জাগানো ব্যানার, যাকে বিজ্ঞাপনের পরিভাষায় ‘টিজার’ বলা হয়, তার সংখ্যা অনেক বেশি। আগে বড় পুজোগুলো এই ধরনের টিজার তৈরি করে পুজোর এক-দেড় মাস আগে থেকে প্রচার চালাত। এখন অনেক মাঝারি বা ছোট পুজোও টিজার তৈরি করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।

‘আন্দামান যাওয়ার খরচ এ বার শূন্য’— রাস্তায় এ রকম টিজার দেখে বাগবাজারের বাসিন্দা অরিন্দম চৌধুরী ভেবেছিলেন, কোনও ট্র্যাভেল এজেন্সি আন্দামান যেতে উৎসাহিত করতে এই সব বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। কিন্তু পরে দেখেন, আন্দামান সংক্রান্ত আর একটি টিজারে শহর ছেয়ে যায়। সেখানে লেখা ছিল, ‘আন্দামানের পিন কোড এ বার কলকাতা।’ তখনই তিনি বুঝে যান, এটা কোনও পুজোর বিজ্ঞাপন। অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘খুবই কৌতূহল জাগানো টিজার। আমি ওই বিজ্ঞাপনে এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলাম যে, ঠিক করে ফেলি, ওই পুজোটা অবশ্যই দেখতে যাব।’’

‘হাঁটাপথে নয়, জাহাজে’। ‘ডাঙায় নয়, মাঝগঙ্গায়।’ যে পুজোর কর্তারা এই ধরনের টিজার লাগিয়েছিলেন, তাঁদের তরফে সত্যব্রত সামন্ত বলেন, ‘‘আগে কখনও এ ভাবে পুজোর বিজ্ঞাপন দিইনি। এ বার দিয়ে খুব ভাল সাড়া পেয়েছি।’’ পরে অবশ্য নবান্নের নির্দেশে নিরাপত্তার স্বার্থে পুজোটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। গঙ্গায় পুজো দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই ওই সিদ্ধান্ত।

কলকাতার এক নামী বিজ্ঞাপন সংস্থার মার্কেটিং বিভাগের পদস্থ কর্তা অনির্বাণ সরকারের মতে, ‘‘পুজোর কর্মকর্তারা আগে প্রচারে সে ভাবে খরচ করতেন না। এখন তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, পুজোয় দর্শক টানতে হলে বিজ্ঞাপনী কৌশলটাও জানা জরুরি। সে জন্য বাজেটও ধরছেন বেশি করে।’’

‘গলানো সোনা মাত্র ২৭ টাকায়।’ নব্বইয়ের দশকে এমন একটি টিজার শহরে ছড়িয়ে পড়ে সবার কৌতূহল জাগিয়েছিল। পরে জানা যায়, সেটি একটি সর্ষের তেলের বিজ্ঞাপন। কলকাতায় বেশ কয়েকটি বহুজাতিক বিজ্ঞাপন সংস্থায় ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের পদে কাজ করেছেন শৌভিক মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘ওই সাড়া জাগানো টিজারটি লিখেছিল একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ বিভাগের টিম। এখন পুজো উপলক্ষে যে ধরনের টিজার লেখা হয়, তার কয়েকটি বেশ ভাল হলেও বেশির ভাগই পুজো উদ্যোক্তাদের লেখা।’’ শৌভিকের মতে, ভবিষ্যতে এ রকম দিনও হয়তো আসবে যখন পুজোর টিজার লিখবেন বিজ্ঞাপন সংস্থার ক্রিয়েটিভ বিভাগের পেশাদারেরা। তখন প্রতিযোগিতা বাড়লে আরও আকর্ষণীয় হবে টিজারগুলি। পুজোর বুদ্ধিদীপ্ত বিজ্ঞাপনে আরও বেশি ‘স্মার্ট’ হয়ে উঠবে শহর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

teaser Advertisement Durga Puja Durga Puja 2018
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE