বিকিকিনি: পুজোর আর ঠিক এক মাস বাকি। হাতিবাগানে কেনাকাটা করতে ভিড় জমিয়েছেন কয়েক জন ক্রেতা। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
আলো-আঁধারির খেলা কিংবা শিল্পের ‘গলিপথ’ পেরিয়ে তবেই মৃন্ময়ীর দর্শন। শহর থেকে শহরতলির দুর্গাপুজো বলতেই চোখে ভেসে ওঠে এ হেন থিমের মণ্ডপের ছবি। কেউ কেউ আবার সঙ্কীর্ণ জায়গায় ভিড়ে ঠাসা পরিবেশে দর্শনার্থীদের স্বস্তি দিতে ব্যবস্থা রাখেন বাতানুকূল যন্ত্রের।
কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে শহর-শহরতলিতে দুর্গাপুজো হলেও চেনা থিম কি থাকবে? না কি, বদল হচ্ছে ভাবনার? শারদীয়ার আর এক মাস বাকি থাকলেও বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। কারণ, তেমন ভাবে ‘টিজ়ার’ লেখা ব্যানার পড়েনি গলি থেকে রাজপথে। তাই দর্শনার্থীদের একরাশ কৌতূহলেই আপাতত বন্দি চেনা থিমপুজো। কয়েক দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এ বার খোলামেলা মণ্ডপ তৈরির জন্য পুজো কমিটিগুলিকে বলা হবে। মণ্ডপে যাতে পর্যাপ্ত আলো-হাওয়া খেলতে পারে, লক্ষ রাখতে হবে সে দিকে।
শহর-শহরতলিতে ইতিউতি থিমের মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সেই মণ্ডপ কতটা খোলামেলা রাখতে হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলেই দাবি অধিকাংশ উদ্যোক্তার। তাঁদের একাংশ বলছেন, ধরা যাক একটি বর্গক্ষেত্রাকার মণ্ডপে প্রতিমা রাখার জন্য সেটির পিছন দিক ঘেরা হল। এ বার বাকি তিন দিক এবং সিলিংও উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হচ্ছে না কি অন্য কিছু— তা আজ, বৃহস্পতিবারের আগে স্পষ্ট হবে না। কারণ, আজই পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বিষয়টি স্পষ্ট না-হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাই তাঁদের কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ আবার প্রথম থেকেই খোলামেলা মণ্ডপ বানাতে শুরু করেছেন। অনেকের আবার মত, পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হলে তবেই কাজে হাত দেওয়া শ্রেয়।
আরও পড়ুন: পাশে অচেনা শহরের ‘বন্ধু’, দেহ ফিরল নিজভূমে
প্রতি বছরের মতো ২০১৯-এর পুজোর শেষেও এ বছরের ভাবনার প্রাথমিক রূপরেখা স্থির হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু করোনার ধাক্কায় সেই ভাবনা পাল্টে নতুন থিম করতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের। এ বার খোলামেলা মণ্ডপের পরামর্শে কি সেই নতুন ভাবনাতেও বদল আনতে হচ্ছে? ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশ মতোই পুজো হবে। তবে মুখ্যমন্ত্রী পুজোপ্রেমী। তিনি এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না, যাতে কারও অসুবিধা হয়।’’ শাশ্বতবাবু আরও জানান, মণ্ডপের চরিত্র দু’ধরনের। মাঠে পুজোর আয়োজন হলে এক রকম। আবার গলির মধ্যে পুজো হলে মণ্ডপ অন্য রকম। মাঠে তৈরি মণ্ডপে সামনের দিকে জায়গা খোলা থাকে। ফলে দর্শনার্থীরা দূর থেকে প্রতিমা দর্শন করে চলে যেতে পারেন। কিন্তু গলির পুজোয় সেটা সব সময়ে সম্ভব হয় না। যদিও শহর এবং শহরতলির অনেক পুজোই হয় গলির মধ্যে। আর প্রতিটি মণ্ডপ দৈর্ঘ্যে ৭০-৮০ ফুট হয়। তাতে বেরোনোর জন্য আপৎকালীন ব্যবস্থা ও আলো-হাওয়া চলাচলের বন্দোবস্ত থাকে বলেও দাবি উদ্যোক্তাদের।
আরও পড়ুন: আধ ঘণ্টা পিছোতে পারে শেষ মেট্রোর সময়
হাতিবাগানের একটি পুজোর সম্পাদক অমিতাভ রায় বলেন, ‘‘থিম হলেও খোলামেলা মণ্ডপের দিকেই জোর দিয়েছি। তবে অন্য বছর এই সময়ে ৫০ শতাংশ কাজ হয়ে গেলেও এ বার তেমন ভাবে কিছু শুরুই হয়নি।’’ উল্টোডাঙার একটি পুজো আবার থিমের পথে হাঁটছে না। সেখানকার অফিস-সম্পাদক অমৃত সাউ জানান, তাঁরা এমন ভাবে উঁচু মণ্ডপ বানাচ্ছেন যা দূর থেকে দেখা যাবে। বেহালার এক পুজোর আহ্বায়ক সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মণ্ডপ খোলামেলা রাখার বিষয়ে কী নির্দেশিকা আসবে, এখনও স্পষ্ট নয়। তাই শিল্পীকে বলেছি মণ্ডপের কাজ ধীরে করতে।’’
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্য কমিশনের কাঠগড়ায় দুই বেসরকারি হাসপাতাল
উদ্যোক্তারা এখন তাকিয়ে আজ, বৃহস্পতিবারের দিকে। করোনা আবহে এ দিনই ঠিক হবে থিমপুজোর ‘ভবিষ্যৎ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy