Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রুটের ম্যাজিকে পুজোর জোট

এ যেন ঠিক ট্যুরিস্ট সার্কিট! সিকিমের পেলিং-এ গেলে অনেকেই ঘুরে আসেন হি বার্মিওক, রিনচেনপং। কালিম্পং গেলে লাভা, লোলেগাঁও, কোলাখাম। দক্ষিণবঙ্গের বিহারীনাথ বা গড়পঞ্চকোট গেলে বরন্তি বা পাঞ্চেত।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০১:২৭
Share: Save:

এ যেন ঠিক ট্যুরিস্ট সার্কিট!

সিকিমের পেলিং-এ গেলে অনেকেই ঘুরে আসেন হি বার্মিওক, রিনচেনপং। কালিম্পং গেলে লাভা, লোলেগাঁও, কোলাখাম। দক্ষিণবঙ্গের বিহারীনাথ বা গড়পঞ্চকোট গেলে বরন্তি বা পাঞ্চেত।

তেমন কলকাতার পুজোতেও রয়েছে এমন কিছু ‘সার্কিট’। গড়িয়াহাটের ভিড় যেমন একডালিয়া, সিংহি পার্ক হয়ে হিন্দুস্থান পার্ক, দেশপ্রিয় পার্ক হয়ে বালিগঞ্জ কালচারালে ঢোকে। উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে শুরু হওয়া ভিড়টা তেলেঙ্গাবাগান, কবিরাজবাগান হয়ে ঢুকে পড়ে হাতিবাগানে। আবার খিদিরপুরের ভিড়টা ঘুরপাক খেতে থাকে ২৫ পল্লি, পল্লি শারদীয়া, কবিতীর্থের মণ্ডপে। বেহালায় ঢুকলে বেহালা ক্লাব, বড়িশা ক্লাব, নূতন দল দেখে ভিড়টা চলে যায় হরিদেবপুর অজেয় সংহতি, ৪১ পল্লি।

এখানেও ভূগোলই আসল কারণ। তাই নামী পুজোর পাশে থাকার জন্য সাধারণ পুজোতেও জুটে যায় অপ্রত্যাশিত ভিড়। এ বার এই ‘সার্কিট’-কেই এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে জোট বেঁধেছে একাধিক ক্লাব। একসঙ্গে হোর্ডিংও দিচ্ছে তারা। ওই সব পুজোর কর্তারা জানাচ্ছেন, দ্বন্দ্ব নয়, ভ্রাতৃত্ববোধ বোঝাতেই এমন হোর্ডিং। কেউ কেউ বলছেন, সম্মিলিত হোর্ডিং দিলে খরচও কম! ক্লাবের এমন জোট অবশ্য নতুন কিছু নয়। এক সময়ে বেহালায় পুজো নিয়ে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল সহযাত্রী ও সৃষ্টি ক্লাবের। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মিশে গিয়েছে ক্লাব দু’টি। কলকাতা এখন তাদের বড়িশা ক্লাব নামেই চেনে।

দক্ষিণে এ বার যেমন জোট বেঁধেছে ভবানীপুরের ছ’টি ক্লাব— চক্রবেড়িয়া, অবসর, বকুলবাগান, পদ্মপুকুর বারোয়ারি, রূপচাঁদ মুখার্জি লেন, সঙ্ঘশ্রী। ওই পুজোর কর্তারা জানাচ্ছেন, এক সময়ে ভবানীপুর ছিল দক্ষিণের পুজোর জমায়েতের জায়গা। উপচে পড়ত ভিড়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমেছে। এখানে যে পুজো সার্কিট রয়েছে, সে খবর এ প্রজন্মের অনেকেই জানে না। অবসরের পুজোকর্তা শ্যামল দাসনাগের কথায়, ‘‘কাছে ম্যাডক্স স্কোয়ারে সব সময়েই ভিড়। সেই ভিড়ের অনেকটাই এমুখো হয় না।’’ পুজোর কর্তারা জানাচ্ছেন, ভাব-ভালোবাসা যতই থাক, থিমের লড়াইও কিন্তু ফেলনা নয়! যেমন চক্রবেড়িয়া সর্বজনীনে শিল্পী স্বরূপ নন্দী তুলে ধরছেন অমৃতকে। প্রকৃতির গঠনকে তুলে ধরতে জ্যামিতিক আকারে মণ্ডপ সাজছে। অবসরের পুজোয় শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা তুলে ধরছেন বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের লোকশিল্প। বকুলবাগানের পুজো সাজাচ্ছেন শিল্পী মানু পারিখ। রূপচাঁদ মুখার্জি লেনের শিল্পী পিয়ালি সাধুখাঁর মণ্ডপসজ্জার হাতিয়ার দেশি-বিদেশি হাতপাখা। সঙ্ঘশ্রীর মণ্ডপে আবার থিয়েটার মঞ্চের আদল ও পিনাকী গুহের আলোর সাজ।

খিদিরপুর ২৫ পল্লির পুজোকর্তা অসীম দত্তও বললেন, ‘‘আমাদের এলাকায় রুটটাই এমন যে এখানে ঢুকলে সব পুজো দেখেই লোকে বেরোবে।’’ একই কথা খাটে হাতিবাগানের ক্ষেত্রেও। তবে ভূগোল মেনে নিলেও থিমকে ফেলে দিতে নারাজ হাতিবাগান সর্বজনীনের কর্তা শাশ্বত বসু। চমক দিতে এ বার তাঁরা তুলে ধরছেন জাপানের কাগজশিল্প ‘অরিগ্যামিকে’। শাশ্বতবাবুর পুজোর সঙ্গে হাতিবাগানের আরও দু’টো পুজো জোট ঘোষণা করে হোর্ডিং টাঙিয়েছে শহরে।

পুজোর বাজারে ক্লাবগুলির এই নতুন ট্রেন্ড কিন্তু অনেকেরই মনে প্রশ্ন তুলেছে। পুজো ময়দানের কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, নতুন ‘ট্রেন্ড’ মাথায় রেখে আগামী দিনে কি একডালিয়া, হিন্দুস্থান পার্ক, বালিগঞ্জ কালচারাল জোট বাঁধবে? জোট বাঁধবে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের চেতলা অগ্রণী আর আবাসনমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘও?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE