কাউন্সিলরদের সঙ্গে কত জন লোক ঘুরছেন, তাঁদের মাইনে কে দিচ্ছে, এই সব তথ্য কলকাতা পুরসভার কাছে জানতে চাইছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। শুধু কাউন্সিলরদের ‘কাছের লোক’ই নন, পুরসভার কোন দফতরে কত জন কর্মী রয়েছেন, তাঁদের কাজ কী, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে দফতরের তরফে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, যে ভাবে গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ‘কাছের লোকদের’ চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন কাউন্সিলরদের একাংশ, তাতে ‘ক্ষুব্ধ’ রাজ্য সরকার। তাই এ বার ‘ইচ্ছেমতো’ লোক নিয়োগে রাশ টানতে চলেছে দফতর। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত নির্দেশিকা পুরসভায় এসে পৌঁছেছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কাউন্সিলরদের ‘ইচ্ছেমতো’ লোক-নিয়োগের ফলে সার্বিক ভাবে আর্থিক অচলাবস্থা তৈরি হতে পারে। এমনই আশঙ্কা প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের। কারণ, পুরসভার স্থায়ী পদের (স্যাংশনড পোস্ট) বেতনের জন্য পুরো টাকা রাজ্য সরকারই দেয়। অস্থায়ী ও চুক্তি ভিত্তিক লোকের মাইনে বাবদ অর্থ পুর ভাঁড়ার থেকেই দেওয়া হয়। ফলে কাউন্সিলরদের সুপারিশে যে সংখ্যক লোক অস্থায়ী ভাবে নিয়োগ হচ্ছে কলকাতা পুরসভায়, তাঁদের মাইনে দেওয়ার কারণে পুর ভাঁড়ারে অহেতুক চাপ পড়ছে। আর পরিষেবামূলক প্রকল্পের প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার জন্য পুরসভা রাজ্য সরকারের উপরে নির্ভর হয়ে পড়ছে। এ বার সেই প্রবণতা আটকাতেই সচেষ্ট দফতর। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আমরা দেখেছি, কাউন্সিলরদের সঙ্গে ঘুরছেন, এমন লোকের মাইনের টাকাও পুরসভাই দিচ্ছে। আর উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আর্থিক সহায়তার জন্য পুরসভা সরকারের উপরে নির্ভর হয়ে পড়ছে। অহেতুক লোক নিয়োগ করা হয়েছে অনেক দফতরে। তাই কোন দফতরে কত কর্মী প্রয়োজন, সে সংক্রান্ত সমীক্ষার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, সেই সমীক্ষায় বিস্তারিত ভাবে পুরসভাকে জানাতে হবে দফতরগুলিতে কত জন কর্মী রয়েছেন, তাঁদের কাজ কী। অর্থাৎ, মাইনের পরিবর্তে এক জন পুরকর্মী কী কাজ করছেন, তা অনুপুঙ্খ ভাবে যাচাই করতে চাইছে নগরোন্নয়ন দফতর। পুর দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘পাম্প অপারেটরের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, শুধুমাত্র একটা পাম্প চালানোর জন্য এক জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁর কাজ শুধুমাত্র সুইচ অন-সুইচ অফ করা। এটা হয় না কি!’’
দফতর সূত্রের খবর, পুরসভা যে প্রকল্পগুলির প্রস্তাব পাঠাচ্ছে, সেগুলিও এখন খতিয়ে দেখা হবে। পুরসভার পাঠানো প্রকল্পের প্রস্তাবকে আর না যাচাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে না। এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রকল্পের জন্য পুরসভার আর্থিক অবদান কী, তা জানতে চাওয়া হবে। কেন্দ্রও তো রাজ্যের সঙ্গে এমনটাই করে। কেন্দ্র তো কোনও প্রকল্পের জন্য পুরো টাকা দেয় না। তাই পুরসভা প্রকল্প পিছু কত খরচ করছে, তা জানাতে হবে তাদের।’’
প্রসঙ্গত, এর আগেও পরিষেবার কাজ প্রথমে করতে হবে বলে পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পানীয় জল, রাস্তা, আলো, জঞ্জাল সাফাই-সহ একাধিক ক্ষেত্র চিহ্নিতও করে দিয়েছিল দফতর। এক কর্তার কথায়, ‘‘প্রয়োজন নয়, এমন কোনও ক্ষেত্রে দফতরের তরফে আর টাকা বরাদ্দ করা হবে না। যথেচ্ছ ভাবে অর্থ খরচ করলাম, তার পরে রাজ্যের দ্বারস্থ হলাম, এটা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy