Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নিকাশি নেই, ভরসা তাই কংক্রিটেই

বিটুমিন থেকে পূর্ত দফতরের মুখ ঘোরানোর মূল কারণ বেহাল নিকাশি। অভিযোগ, বিমানবন্দর-রাজারহাট-লাউহাটি রোডের ধারে নিকাশি পরিকাঠামো নেই।

চুরমার: বেহাল এ পথই এ বার হবে কংক্রিটের পেভার ব্লকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

চুরমার: বেহাল এ পথই এ বার হবে কংক্রিটের পেভার ব্লকে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

সৌরভ দত্ত
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:৩২
Share: Save:

আবাসনের জমা জলে উঠে যাচ্ছে বিটুমিন। এ বার তাই বিশেষ কংক্রিটেই ভরসা করছে রাজ্য পূর্ত দফতর!

বিটুমিন থেকে পূর্ত দফতরের মুখ ঘোরানোর মূল কারণ বেহাল নিকাশি। অভিযোগ, বিমানবন্দর-রাজারহাট-লাউহাটি রোডের ধারে নিকাশি পরিকাঠামো নেই। তবুও রাস্তার দু’ধারে গড়ে উঠেছে একের পর এক বড় আবাসন। ফলে বৃষ্টির জমা জল রাস্তা থেকে বেরোতে পারে না। এর জেরে বছর ঘুরতেই বিধাননগর পুর এলাকা ও পঞ্চায়েতের অধীন রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় ভেঙেচুরে যাচ্ছে পূর্ত দফতরের তৈরি রাস্তা। তাই ওই রাস্তা বিশেষ কংক্রিটে তৈরি করার পরিকল্পনা করেছে পূর্ত দফতর। এ জন্য কংক্রিটের পেভার ব্লকও কেনা হয়ে গিয়েছে।

পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, কৈখালি মোড় থেকে বিমানবন্দরের পিছনের রাস্তাটি রাজারহাট হয়ে লাউহাটি যাচ্ছে। কাজ হবে এই রাস্তাতেই। লাউহাটি থেকে একটি রাস্তা যাচ্ছে ভাঙড়ে। অন্যটি দিয়ে হাড়োয়া পৌঁছনো যায়। লাউহাটি থেকে হাড়োয়া পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ৪৬ কোটি টাকায় হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিমানবন্দর-রাজারহাট-লাউহাটি পর্যন্ত মাত্র আট কিলোমিটারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, এতেই স্পষ্ট কতটা টেকসই করতে সচেষ্ট দফতর।

পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বিমানবন্দর-রাজারহাট-লাউহাটি রাস্তাটি ডোঙা আকৃতির। ভারী বৃষ্টি হলেই জল দাঁড়িয়ে যায়। গোদের উপরে বিষফোঁড়া আবাসনের জল। বড় বড় আবাসনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ নিকাশিতে কোনও নজর নেই। আবাসনের জমা জল পাম্প করে রাস্তায় ফেলা হচ্ছে! এ জন্য রাস্তার বিটুমিন টেকসই হচ্ছে না।’’

পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, রাস্তার জমা জল নোয়াই খালে ফেলতে হবে। অথচ সেই নিকাশিই নেই। এক আধিকারিক জানান, জমা জল বার করতে যেখানে পাইপ পাতা সম্ভব তা করা হবে। কিন্তু সেই পাইপের জল কী ভাবে নোয়াই খালে পড়বে তার দায় বিধাননগর পুরসভার। সম্প্রতি এ নিয়ে পূর্ত দফতর এবং বিধাননগর পুরসভা যৌথ পরিদর্শনও করেছে। তবে নিকাশি নালার রূপরেখা এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলেই খবর। এ জন্য বেশি টাকা খরচ করে বিশেষ ধরনের কংক্রিটের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। পূর্ত দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন যায়। সাধারণ কংক্রিট গাড়ির চাপ নিতে পারবে না। তাই কংক্রিটের এক কোটি পেভার ব্লক আনানো হচ্ছে।’’

সমস্যায় জর্জরিত রাস্তার জন্য বিশেষ ধরনের উপাদান কার্যকর হবে কি না, তা নিশ্চিত হতে ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট রাস্তার কিছু অংশে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই উপাদান ব্যবহার হয়েছে। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মাত্র আট কিলোমিটার রাস্তার জন্য ৪৮ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে! রাস্তা তৈরির পরে বিদ্যুৎ, কেব্‌লের লাইনের জন্য রাস্তা যাতে খোঁড়া না হয়, সে দিকেও কড়া অবস্থান নেওয়া হবে।’’

নিকাশি ব্যবস্থা ছাড়া আবাসন গড়ার অনুমোদন কী ভাবে মেলে? বিধাননগর পুরসভার ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘নিয়ম মেনে আবাসন গড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আবাসন এবং নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে যে অসুবিধার কথা বলা হচ্ছে, সেটি নগরায়নের সমস্যা। নিকাশি নালা তৈরি করতে পুরসভা সব রকম সাহায্য করবে। যৌথ পরিদর্শনের শেষে জল বেরনোর রাস্তা কোথায় রয়েছে, তা পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের দেখানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PWD roads concrete monsoon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE