হতে পারে এ বছরের মাধ্যমিকে প্রথম দশে শহরের খুব বেশি স্কুলের দেখা মেলেনি। তাতে কী? আমি বহু বছর প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। সেখানকার পড়ুয়াদের একটা বড় অংশই কলকাতার বাসিন্দা। তাঁদের পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এ শহরের ছাত্র-ছাত্রীদের ভাবনা-চিন্তার মান যথেষ্টই উন্নত। তবে কলকাতায় দিল্লি বোর্ডের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার মান যত বেড়েছে, ততই প্রবণতা বেড়েছে সে সব স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করার। শহরের একটা বড় অংশই এখন আর স্থানীয় বোর্ডের স্কুলে পড়ে না। ফলে এখন আইসিএসই বা সিবিএসই পরীক্ষায় অনেক ভাল ফল করে কলকাতা। সে সব পরীক্ষায় প্রথম সারিতে থেকে এ বছরও শহরের নাম উজ্জ্বল করেছে কত ছাত্র-ছাত্রী।
শহরের বহু নামী স্কুলই এখন সিবিএসই বা আইসিএসই পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পড়ায়। এর মধ্যে বেশ কিছু স্কুল কিন্তু আগে স্থানীয় বোর্ডের অধীনে ছিল। আমিও তেমনই একটি স্কুলের প্রাক্তনী। সেই স্কুলগুলিতে শিক্ষার মান মোটেও পড়েনি, এখনও আগের মতোই আছে। এখন তো আর সেই স্কুল থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম হওয়ার সুযোগ নেই, বোর্ডটাই তো বদলে গিয়েছে। তাই আমরা আর কৃতীদের তালিকায় দেখি না সেই সব স্কুলের পড়ুয়াদের নাম।
তা ছাড়া, শহর কলকাতার পাশাপাশি যে বিভিন্ন জেলাও এগিয়ে আসছে, এটা তো খুব আনন্দের কথা। গত বেশ কিছু বছর ধরেই এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। এটা নিয়ে গেল-গেল করার তো কিছু নেই। আর জেলার ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল ফল করছে মানে কলকাতায় পড়াশোনার মান পড়ছে, এমনটা ভেবে আতঙ্কিত
হওয়াটাই যুক্তিহীন।
খেয়াল রাখা জরুরি যে, এটা ইন্টারনেটের যুগ। আগে জেলায় বসে যে সব জিনিস নাগালে পেত না ছাত্রছাত্রীরা, এখন ইন্টারনেটের সাহায্যে তা অনায়াসেই মিলছে বাড়ি বসে। কোর্স মেটিরিয়াল থেকে বই— সবই। ইন্টারনেটের এখন এমনই দাপট যে শিক্ষকেরাও আরও সচেতন হচ্ছেন নিজেদের পড়ানো নিয়ে। তাতে জেলার ছাত্রছাত্রীরা আরও বেশি যত্নে বেড়ে উঠছে। আগে এই সুযোগ শুধু কলকাতার ছেলেমেয়েরাই পেত।
আমাদের তো খুশি হওয়ার কথা যে সামগ্রিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে পড়াশোনার মান উন্নত হয়েছে। আর উন্নতি যে হয়েছে, তা টের পাচ্ছি আমি সুদূর পুণেতে বসে। এখানে যে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে এখন যুক্ত আমি, সেখানকার ৪০ জন গবেষকের মধ্যে ২৫ জনই পশ্চিমবঙ্গের। তাতে যেমন কলকাতা শহরের মানুষ আছেন, তেমনই আছেন বিভিন্ন জেলার গবেষকেরা। আসলে কলকাতা আর জেলা পাশাপাশি এগোচ্ছে, এটাই আশার কথা। অন্য সমস্ত তর্ক ভুলে এটা নিয়েই আমাদের খুশি থাকা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy