Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মাথায় নেতা, তাই কি এত দ্বন্দ্ব কলেজে

শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও যেখানে গোলমাল থামেনি, সেখানে উচ্চশিক্ষা দফতর রিপোর্ট পেয়ে পদক্ষেপ করলেও কোনও ফল হবে বলে মনে করছেন না কলেজের শিক্ষকেরা। সম্প্রতি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছেন জয়পুরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মূল কেন্দ্র হিসেবে প্রাক্তনদেরই দায়ী করা হয়েছে বলে খবর।

জয়পুরিয়া কলেজের সামনে মোতায়েন পুলিশ। ফাইল চিত্র

জয়পুরিয়া কলেজের সামনে মোতায়েন পুলিশ। ফাইল চিত্র

সুপ্রিয় তরফদার
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪০
Share: Save:

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বারবার শিরোনামে উঠে এসেছে কলকাতার শেঠ আনন্দরাম জয়পুরিয়া কলেজ। এ বার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণ জানতে চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করল উচ্চশিক্ষা দফতর। পাশাপাশি, গোটা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন দফতরের কর্তারা। কিন্তু কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভাবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ‘প্রকোপ’ ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে দফতরের কর্তারা আদৌ কতটা রাশ টানতে পারবেন, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

টিএমসিপি সূত্রের খবর, ছাত্রছাত্রী ভর্তির বিষয়ই হোক বা ফেস্ট, কর্তৃত্ব কায়েম করতে গিয়ে বারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন জয়পুরিয়া কলেজের পড়ুয়ারা। সেই সঙ্গে প্রেমঘটিত বিষয় তো আছেই। কলেজের ভিতরে বিয়ারের বোতল, লোহার রড, লাঠি দিয়ে মারামারির ঘটনায় রক্তাক্ত হয়েছেন পড়ুয়ারা। থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পরেও দ্বন্দ্ব থামেনি।

টিএমসিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর কলকাতার দুই মন্ত্রীর বিবাদের ছায়া এসে পড়েছে কলেজে। পড়ুয়ারা আড়াআড়ি ভাবে দুই মন্ত্রীর গোষ্ঠীতে বিভক্ত। টিএমসিপি-র এক নেতার দাবি, ছাত্র সংগঠনে তৃণমূলের নেতারা হস্তক্ষেপ করায় সমস্যা বাড়ছে। কলেজে ওই দুই মন্ত্রীর প্রভাব কমাতে পরিচালন সমিতি থেকে এক মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনোনীত সদস্য করেছে দফতর। সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা প্রাক্তনদের কলেজে প্রবেশ আটকাতে তৎপর হয়েছিলেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি। গত সপ্তাহে ফের কলেজে গোলমাল হয়।

শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও যেখানে গোলমাল থামেনি, সেখানে উচ্চশিক্ষা দফতর রিপোর্ট পেয়ে পদক্ষেপ করলেও কোনও ফল হবে বলে মনে করছেন না কলেজের শিক্ষকেরা। সম্প্রতি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছেন জয়পুরিয়া কলেজ কর্তৃপক্ষ। সেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মূল কেন্দ্র হিসেবে প্রাক্তনদেরই দায়ী করা হয়েছে বলে খবর।

তবে শুধুই জয়পুরিয়া নয়, কয়েক দিন আগেই উত্তর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে দুই গোষ্ঠীর গোলমালের জেরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। আহত হন কয়েক জন পড়ুয়া। পরে দু’পক্ষকে সতর্ক করে দেন সংগঠনের নেত্রী জয়া দত্ত এবং সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ। কিন্তু সেটাও কত দিন স্থায়ী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। জয়পুরিয়া, চারুচন্দ্র কলেজের মতো গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তালিকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও ঠাঁই পেয়েছে বলে জানাচ্ছে শিক্ষা মহল।

সম্প্রতি দুই গোষ্ঠীর পড়ুয়াদের ধাক্কাধাক্কিতে আহত হন উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি শয্যাশায়ী। শাসক দলের নেতা-নেত্রীরাই যেখানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামলাতে পারছেন না, সেখানে উচ্চশিক্ষা দফতরের ভূমিকা কতটা উপযোগী হবে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে।

কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে রিপোর্ট চেয়ে আদতে অধ্যক্ষদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে কোনও লাভ হবে না। কারণ শাসক দল সক্রিয় না হলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের হাত থেকে শিক্ষাঙ্গনকে রক্ষা করা মুশকিল।’’ সংগঠনের সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘সংগঠনের মধ্যে যাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন, তাঁদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করব।’’ কিন্তু এই আশ্বাসবাণী আদৌ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লাগাম পরাতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ সংগঠনের নেতারাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE