Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মূষিক-মুক্তির পথ খুঁজছে আর জি কর

ওই হাসপাতালের মর্গে রাখা একটি দেহ থেকে চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে সোমবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন মৃত শম্ভুনাথ দাসের পরিজনেরা

আর জি কর হাসপাতাল

আর জি কর হাসপাতাল

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩২
Share: Save:

বছরে অন্তত আড়াই হাজার দেহের ময়না-তদন্ত হয়। যার মধ্যে অন্তত দশটি দেহ ইঁদুরে খুবলে নেয়। এ কথা বলছেন খোদ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই।

ওই হাসপাতালের মর্গে রাখা একটি দেহ থেকে চোখ তুলে নেওয়া হয়েছে বলে সোমবার কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেছিলেন মৃত শম্ভুনাথ দাসের পরিজনেরা। আর জি কর সূত্রের খবর, চোখ খুবলে নিয়েছে ইঁদুর। এ বারই প্রথম নয়। এর আগেও মৃতদেহের চোখ, কান, নাক বা ঠোঁটের অংশবিশেষ ইঁদুরের পেটে যাওয়ার নজির রয়েছে। একটি আনুমানিক হিসেব দিয়ে ফরেন্সিক বিভাগের এক চিকিৎসকের দাবি, ‘‘বছরে আড়াই হাজার দেহের ময়না-তদন্ত হয়। তার মধ্যে ইঁদুরে দেহ খুবলে নেওয়ার অন্তত দশটি ঘটনা ঘটে।’’

আর জি কর চত্বরে মূষিক-সন্ত্রাস কেমন, তা বোঝাতে সেখানকার চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, হাসপাতালের মাটির নীচে রীতিমতো সুড়ঙ্গ বানিয়ে ফেলেছে ইঁদুর-বাহিনী। স্ত্রী-রোগ বিভাগ, ক্যান্টিন ও মর্গের আশপাশে ধেড়ে ইঁদুরের দাপট সব চেয়ে বেশি। তারা আবার প্রবল মাংসাশী! ফরেন্সিক বিভাগের এক চিকিৎসক বললেন, ‘‘মর্গে ধেড়ে ইঁদুরের দল চলে আসে দেহাংশের লোভে। অ্যালুমিনিয়ামের পাত তো বটেই, লোহা পর্যন্ত কেটে ফেলছে তারা। শম্ভুনাথের দেহ কুল চেম্বারের মধ্যে রাখা ছিল। তার ভিতরে ঢুকে চোখ খেয়ে ফেলেছে!’’ চিকিৎসকদের একাংশের আক্ষেপ, প্রথম দিকে বিষে কাজ হত। এখন বিষ দিয়ে, ফাঁদ পেতেও কোনও লাভ হয় না। শুধু গ্লাস-টপ কাটতে পারে না। কুল চেম্বারে গ্লাস-টপের আস্তরণ ছিল। সেখানেও ওরা কোনও ভাবে ঢোকার পথ তৈরি করে ফেলেছে।

মর্গের এক কর্মী জানালেন, বাইরে থেকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে নিকাশির পাইপের মাধ্যমে মর্গের ভিতরে ঢুকে পড়ত ইঁদুর। তাই সেগুলির

মুখ বিষ মাখানো মাংস দিয়ে বুজিয়ে ফেলেন তাঁরা। ওই কর্মীর কথায়, ‘‘কুল চেম্বার নতুন করে তৈরির পরে দু’মাস কোনও দেহ খুবলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। সোমবার আবার হল। কুল চেম্বারের যন্ত্রের পিছনে দু’ফুটের জায়গা রয়েছে। সেটাও এখন ইঁদুরের করিডরে পরিণত হয়েছে।’’

সোমবারের ঘটনায় মৃতের ছেলে শ্রীকান্ত দাস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, মর্গ থেকে বাবার

দেহ নেওয়ার সময়ে তাঁরা দেখেন, বৃদ্ধের দু’টি চোখ কেউ তুলে নিয়েছে। শ্রীকান্ত অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন, হাসপাতালের এক কর্মী মৌখিক ভাবে তাঁদের জানান, চোখ ইঁদুরে খেয়েছে। কিন্তু তিনি কোনও লিখিত দিতে চাননি। ইতিমধ্যে অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে কর্তৃপক্ষের ধারণা, ওই মৃতদেহের চোখ ইঁদুরেই খেয়েছে।

বস্তুত, সোমবারের ঘটনার পরে হাসপাতালে ইঁদুরের বংশ কী ভাবে ধ্বংস করা যায়, তা-ই এখন মাথাব্যথা আর জি কর কর্তৃপক্ষের। এদিন হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, ‘‘মৃতের পরিজন কেউ চোখ তুলে নিয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছেন তা ঠিক নয়। ইঁদুরের দৌরাত্ম্য বন্ধে কিছু একটা করতেই হবে। পূর্ত দফতরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

R. G. Kar Medical College and Hospital Rat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE