সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিংহ।
আজীবন বামপন্থী তিনি। বাংলার অন্যতম সেরা তারকাও। তাঁর বাড়িতে যাচ্ছেন বিজেপি-র জাতীয় সম্পাদক— জোর জল্পনা শুরু হয়েছিল খবরটা নিয়ে। প্রথম সারির এক বাঙালি রাজনৈতিক অবস্থান বদলানোর বা নমনীয় করার কোনও বার্তা দিতে চলেছেন? বৃহস্পতিবার থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল গুঞ্জন। শুক্রবার সকালে অবশ্য সব জল্পনায় জল পড়ল। রাহুল সিংহের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ শেষ হয়ে গেল মিনিট পাঁচেকেই।
লোকসভা নির্বাচন আসতে আর এক বছরও নেই। গোটা দেশেই তাই জনসংযোগ বাড়ানোয় জোর দিয়েছে বিজেপি। প্রত্যেকটি রাজ্যেই শীর্ষ বিজেপি নেতারা যাচ্ছেন বিশিষ্ট নাগরিকদের বাড়ি। সরকারের কাজকর্ম নিয়ে তাঁদের মতামত জানতে চাইছেন, পরামর্শ চাইছেন। কর্মসূচির পোশাকি নাম ‘জনসম্পর্ক অভিযান’। বাংলায় মূলত রাহুল সিংহই আপাতত সে অভিযান সামলাচ্ছেন। এর আগে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার দীনেশ বাজপেয়ী, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা প্রাক্তন রাজ্যপাল শ্যামলকুমার সেনের বাড়ি থেকেও ঘুরে এসেছেন রাহুল। কিন্তু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাহুল সিংহের সাক্ষাৎ পর্ব নিয়ে যতটা আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, আগেরগুলো নিয়ে ততটা হয়নি।
শুক্রবার সকাল থেকেই বাংলার রাজনৈতিক শিবির চোখ রেখেছিল সৌমিত্র-রাহুল সাক্ষাতের দিকে। কিন্তু সাক্ষাৎ পর্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বেলা ১১টা ৩১ নাগাদ সৌমিত্রর গল্ফগ্রিনের বাড়িতে ঢোকেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক। মিনিট পাঁচেক দু’জনের কথা হয়। ১১টা ৩৮ নাগাদ রাহুল সিংহ বেরিয়ে আসেন।
আরও খবর: ভিএইচপি, বজরঙ দলকে ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন তকমা দিল সিআইএ
বেঁচে থাকার ‘চ্যালেঞ্জ’ হেরে গেলেন বুখারি
কী কথা হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে? রাহুল সিংহ জানান, ‘‘সরকারের কাজ ওঁর ভাল লাগছে। নোট বাতিলে সমস্যা হয়েছে, সেটা জানালেন।’’ সরকারের কাছ থেকে কী ধরনের কাজ আশা করেন তিনি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তা-ও জানতে চেয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সৌমিত্র পরামর্শ দিতেও অনীহা দেখান। নানা কাজ নিয়ে তাঁকে ব্যস্ত থাকতে হয়, পারিবারিক সমস্যাও রয়েছে, তাই সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার মতো সময় তাঁর নেই— রাহুলকে এ দিন অনেকটা এমন বার্তাই দেন সৌমিত্র।
সৌমিত্র-রাহুল সাক্ষাৎ, দেখুন ভিডিয়ো:
জনসম্পর্ক অভিযানে বিজেপি নেতা তাঁর বাড়িতে যাওয়ায় রাজ্য জুড়ে যে জল্পনা তৈরি হয়েছিল, সে প্রসঙ্গে সৌমিত্র নিজে কী বলেছেন? বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করতেও তিনি অনীহা দেখাচ্ছেন। বেশ বিরক্তি নিয়েই বললেন, ‘‘আমার বাড়িতে রোজ কয়েকশো লোক আসেন দেখা করতে। তেমন উনিও (রাহুল সিংহ) এসেছেন। এটাকে এত বড় করে দেখার কী আছে, বুঝতে পারছি না।’’ কিন্তু রাহুল সিংহ তো অন্য যে কোনও সাধারণ সাক্ষাৎপ্রার্থীর মতো নন। তিনি তো এ রাজ্যে বিজেপির প্রথম সারির নেতা। ‘‘তাতে কী হয়েছে! অনেকেই আসেন। উনিও দেখা করতে চেয়েছিলেন। সৌজন্যমূলক ভাবে পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছি। এটা অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়।’’ আরও বিরক্তি নিয়ে জানিয়ে দেন সৌমিত্র।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে রাহুল সিংহ
এক সপ্তাহ আগে নাগপুরে সঙ্ঘের মঞ্চে দেখা গিয়েছিল আজীবন কংগ্রেসি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে। তা নিয়ে বাংলায় তো বটেই, গোটা দেশের রাজনীতিতে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রথম সারির বাঙালি মুখকে নিজেদের মঞ্চে হাজির করে বাংলার সুশীল সমাজের মধ্যে সঙ্ঘ তথা বিজেপি নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চাইছে বলে জল্পনা শুরু হয়েছিল। পরে অবশ্য সে জল্পনা থিতিয়ে যায়। কারণ সঙ্ঘের মঞ্চ থেকে নিজের ভাষণেই প্রণববাবু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভারতের বিবিধতা এবং সহিষ্ণুতার সঙ্গে কোনও মতাদর্শগত আপোসে তিনি নারাজ। পরে রাহুল গাঁধীর ইফতার পার্টিতে হাজির হয়ে ফের তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করার কোনও ইচ্ছাও তাঁর নেই। সে সবের পরে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ঘোষিত বামপন্থীর সঙ্গে রাহুল সিংহের ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ নির্ধারিত হতেই আরও এক বার সেই একই রকম জল্পনা অক্সিজেন পেয়েছিল। কিন্তু এতটাই ক্ষণস্থায়ী হয়েছে সৌমিত্র-রাহুল বৈঠক, এতটাই বিরক্তি নিয়ে সে বিষয়ে কথা বলছেন সৌমিত্র, যে জল্পনা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে অত্যন্ত দ্রুত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy