Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Howrah Station

‘যাত্রীরা সচেতন না হলে কী করার থাকতে পারে?’

সকালে এবং সন্ধ্যায় এমনই ছবি দেখা গেল হাওড়া স্টেশনে। যা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনে টিকিট কাটার লম্বা লাইন। কোথাওই দূরত্ব-বিধি মেনে চলার বালাই নেই। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সন্ধ্যায় শিয়ালদহ স্টেশনে টিকিট কাটার লম্বা লাইন। কোথাওই দূরত্ব-বিধি মেনে চলার বালাই নেই। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০২:০৫
Share: Save:

দৃশ্য ১: সকাল ৯টা ২৫। হাওড়া স্টেশনের চার নম্বর প্ল্যাটর্ফমে এসে দাঁড়াল কাটোয়া লোকাল। ট্রেন থামতেই মুহূর্তের মধ্যে কয়েক হাজার যাত্রী একসঙ্গে নেমে প্রায় ছুটতে শুরু করলেন বাইরে বেরোনোর জন্য। স্টেশন চত্বরে পাহারায় থাকা রেল রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা বাঁশি বাজিয়ে বার বার তাঁদের পথ দেখানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা? একটা আস্ত মিছিল এগিয়ে গেল সাবওয়ের দিকে। অন্য ভিড়টা গেল লঞ্চঘাটের দিকে। যা দেখে কর্তব্যরত জওয়ানদের কাউকে কাউকে বলতে শোনা গেল, ‘‘প্রথম দিনেই যদি এই অবস্থা হয়, করোনা ঠেকাবে কার সাধ্য?’’

দৃশ্য ২: বিকেল ৫টা ১০ মিনিট। আপ হাওড়া-বর্ধমান লোকাল ধরতে এসে থমকালেন দোলন বসু। প্ল্যাটফর্মে শুধু কালো মাথা। সকলেরই ট্রেন ধরার তাড়া। কোথায় দূরত্ব-বিধি? ভয়ে এগোলেন না দোলন। বললেন, ‘‘কোভিড থেকে বাঁচব না মনে হচ্ছে।’’

সাড়ে সাত মাস বন্ধ থাকার পরে বুধবার ফের গড়াতে শুরু করেছে লোকাল ট্রেনের চাকা। তার পরে সকালে এবং সন্ধ্যায় এমনই ছবি দেখা গেল হাওড়া স্টেশনে। যা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। রেল এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাওড়া স্টেশন চত্বরে কোভিড-বিধি মেনে চলার নানা ব্যবস্থা করা হলেও ট্রেনে ওঠা-নামার সময়ে নিত্যযাত্রীদের যা হুড়োহুড়ি এ দিন চোখে পড়েছে, তাতে শঙ্কিত রেলের আধিকারিকেরা। এমনকি নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে কামরাতেও দু’জনের আসনে তিন জন তো বটেই, ঘেঁষাঘেঁষি করে চার জন যাত্রীও বসলেন। যা নিয়ে আতঙ্কিত নিত্যযাত্রীদের একাংশই। নন্দিনী প্রসাদ নামে এক তরুণীর মন্তব্য, ‘‘শ্রীরামপুর থেকে মহিলা স্পেশ্যাল ট্রেনে এসেছি। তাঁরাও ন্যূনতম দূরত্ব-বিধি মানেননি। ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে, দাঁড়িয়ে এসেছেন।’’ বর্ধমান থেকে আসা আর এক যাত্রী চিত্তরঞ্জন দাস বললেন, ‘‘রেলের ব্যবস্থাপনা খুবই ভাল। কিন্তু যাত্রীরা অনেকেই তা মানছেন না। প্রথম দিনেই এত ভিড় হওয়ায় এই ব্যবস্থা কত দিন চালু রাখা যাবে, সেটাই বড় কথা।’’

এ দিন হাওড়া থেকে প্রথম ট্রেন ছাড়ে ভোর পাঁচটায়। বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ট্রেন চলে। সারা দিনে চলেছে ১২৫টি ট্রেন। একটার পর একটা ট্রেন ঢুকেছে আর যাত্রীদের ভিড় উপচে পড়েছে প্ল্যাটর্ফমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ভিড়। সব ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে এ দিন হাওড়া স্টেশনে ছিলেন ডিআরএম ইশাক খান, স্টেশন ম্যানেজার আনন্দ বর্ধন-সহ র্পূব রেলের অফিসারেরা। স্টেশনের বাইরে ছিলেন জেলা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিক ও পুলিশকর্তারা। ভিড় নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে ডিআরএম বলেন, ‘‘ভিড়ের কথা ভেবে প্রায় ৭০ শতাংশ ট্রেন চালাচ্ছি। কোভিড-বিধি মেনে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ধাপে ধাপে ট্রেন বাড়ানো হবে। কিন্তু যাত্রীরা সচেতন না হলে কী করার থাকতে পারে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah Station Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE