এই নুড়ি সরিয়েই পাকা রাস্তা করাতে চায় রাজভবন। সোমবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
নুড়িপথই থেকে যাবে, না কি সেখানে পাকা রাস্তা হবে, ফের তা নিয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে রাজভবনে!
নুড়ি বিছানো পথের পরিবর্তে রাজভবন চত্বরে বাঁধানো রাস্তা করা যায় কি না, তা নিয়ে সম্প্রতি রাজভবনের তরফে প্রস্তাব জমা পড়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। এর আগেও নুড়িপাথর তুলে পাকা রাস্তা করার জন্য রাজভবনের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু সে বার বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি রাজ্য। সম্প্রতি ফের রাজভবনের তরফে ওই প্রস্তাব জমা পড়ে সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে।
ওই পরিবর্তনের সঙ্গে যে হেতু হেরিটেজের বিষয়টিও জড়িত, তাই প্রস্তাবটি এ বার সরকারের তরফে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে। স্বরাষ্ট্র দফতর এ বিষয়ে কমিশনের মতামত জানতে চেয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর, নিজেদের মধ্যে আলোচনার পরে ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে না বলেই প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছেন আধিকারিকদের একাংশ। কারণ, নুড়িপাথরের ওই পথ হেরিটেজ শৈলীর অপরিহার্য অঙ্গ বলে জানিয়েছেন হেরিটেজ-বিশেষজ্ঞেরা। পার্লামেন্ট হাউস, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-সহ ব্রিটিশ আমলে তৈরি একাধিক হেরিটেজ ভবনে ওই ‘পেব্লস রোড’ রয়েছে। ফলে চট করে তা সরিয়ে বাঁধানো রাস্তা করা যাবে না বলেই হেরিটেজ কমিশনের বক্তব্য। হেরিটেজ শৈলীর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই যা করার করতে হবে। কমিশনের এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাজভবনের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র দফতর ওই নুড়িপাথরের পথ বদল নিয়ে কমিশনের মত চেয়েছিল। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে দেখেছি, ওই পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারণ, ওটা হেরিটেজ শৈলীর অঙ্গ।
এ বার স্বরাষ্ট্র দফতর যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’’
তবে কমিশনের তরফে এ-ও জানানো হচ্ছে যে, নুড়িপাথর রেখেও ওই রাস্তার সংস্কার করা যায়। তার জন্য যে বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে, রাজভবনের সম্মতি পেলে তা তাদের দেখিয়ে দেওয়া হবে। তাতে নুড়িপাথরে গাড়ি চলাচল বা হাঁটার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধাও থাকবে না। এক হেরিটেজ বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘নুড়িপাথর রেখেও রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব। রাজভবনের সম্মতি পেলে সেটা আমরা করে দেখাতে পারি। তাতে হেরিটেজ শৈলী যেমন অক্ষুণ্ণ থাকবে, হাঁটা বা গাড়ি চলাচলের ক্ষেত্রেও কোনও অসুবিধা হবে না।’’
হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকেই একাধিক হেরিটেজ ভবনে ওই নুড়িপাথরের পথ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, বড় এলাকা জুড়ে যে সমস্ত ভবন রয়েছে, সেগুলির পাকা রাস্তার খরচ বাঁচাতেই ওই নুড়িপাথরের পথ তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। তবে শুধু ব্রিটিশরাই রাস্তার ওই পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। হেরিটেজ কমিশনের এক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ব্রিটিশ আর ফরাসিদের মধ্যে কারা রাস্তার ওই শৈলী তৈরি করেছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে অনেক ভবনেই ওই রাস্তা রয়েছে।’’
রাজভবন সূত্রের খবর, এর আগেও এ নিয়ে এক বার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কারণ, গাড়িতে বসে থাকলে নুড়িপাথরের পথে যেতে অনেক সময়েই অসুবিধা হয়। এমনিতে সাউথ গেটের একটি অংশ পর্যন্ত কংক্রিট রয়েছে। কিন্তু নর্থ গেট থেকে পুরোটাই নুড়িপাথরের রাস্তা। তাই গেট থেকে রাজভবনের সিঁড়ি পর্যন্ত যাতে পাকা রাস্তা করা যায়, তার প্রস্তাব আগেই দেওয়া হয়েছিল সরকারের কাছ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy