খুনের আগ্নেয়াস্ত্রের কী হল? প্রতীকী ছবি।
কখনও খুনি বলছে, ট্রিগারে চাপ দেওয়ার পরে গুলির শব্দে নিজেই চমকে গিয়েছিল! পরক্ষণেই তদন্তকারীদের জানাচ্ছে, ডিসেম্বরের সন্ধ্যায় কী ভাবে সে খুনি হয়ে উঠল! দমদমের গোরাবাজারে গণেশ কুন্ডু খুনের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয় রবিবার। ব্যারাকপুর কমিশনারেট সূত্রের খবর, পুনর্নির্মাণের সময়ে মূল অভিযুক্ত বাচ্চু দাস রীতিমতো নাটকীয় ভাবে খুনের বর্ণনা দিয়েছে।
গত ৩০ ডিসেম্বর ডেকরেটর্স দোকানের কর্মী গণেশকে খুন করে বাইকে চেপে পালিয়েছিল বাচ্চু ও তার দুই সঙ্গী শুভ চক্রবর্তী ও শান্তনু মৃধা। ব্যক্তিগত আক্রোশ ও অপরাধ জগতে নিজেদের দর বাড়াতেই পরিকল্পনা করে বাচ্চু এই খুন করে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
এ দিন দুপুরে বাচ্চু এবং তার দুই সঙ্গীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় দমদম থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, গাড়ি থেকে নামানোর পরে বাচ্চুকে তদন্তকারীরা পরপর প্রশ্ন করতে থাকেন— গলির কোন দিক দিয়ে সে ঢুকেছিল? বাইক কোথায় ছিল? গণেশের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল? গণেশ কোথায় ছিল? পুলিশ সূত্রের খবর, রীতিমতো অভিনয় করে বাচ্চু সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম প্রশ্নের প্রেক্ষিতে সে জানায়, বি আর অম্বেডকর পার্কের দিকের রাস্তা দিয়ে সে গলিতে ঢোকে। তদন্তকারী আধিকারিক জানতে চান, কাছের বাইক শো-রুম সংলগ্ন বাতিস্তম্ভের কাছে সে বাইক রেখেছিল কি না। বাচ্চু দ্রুত ভুল সংশোধন করে জানায়, তারও আগের একটি বাতিস্তম্ভের সামনে বাইক রেখে একাই দোকানে এসেছিল সে। তাকে দেখা মাত্র গণেশ বলেন, ‘তুই আবার এখানে এসেছিস’। এ কথা শুনেই সে গুলি চালিয়ে দেয় বলে জানিয়েছে বাচ্চু।
পুলিশ সূত্রের খবর, গুলি চালানোর আগে বাচ্চু কী বলেছিল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে সে বলেছে, ‘কোনও কথা বলিনি স্যার। শুধু গুলি চালিয়েছি’! বাচ্চু আরও বলে, ‘গুলির শব্দে চমকে গিয়েছিলাম। ভয়ে দৌড়ে গিয়ে বাইকে উঠে পড়ি। দোকানের ভিতরে সে কী ভাবে পড়েছে, তা দেখিনি’। গুলির শব্দে নিজের চমকে যাওয়ার মুহূর্তও অভিনয় করে দেখায় বাচ্চু।
পুলিশ সূত্রের খবর, গুলি চালানোর পরে বাইকে চেপে পোস্ট অফিসের সামনের আইল্যান্ড ঘুরে ওই তিন জন গোলপার্কের রাস্তা ধরে আর এন গুহ রোডে ওঠে। সেখান থেকে ময়লাখানার রাস্তা ধরে বান্ধবনগরে দিদির বাড়ি পৌঁছয় বাচ্চু। সেখান থেকে জামাকাপড় নিয়ে সুভাষনগর বাই লেনে এস পাল মোড়ের একটি বাড়িতে বাইক রেখে হাঁটা পথে মতীশ রায় সেতু পৌঁছয় তারা। সেতুর উপর থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ফেলে দিয়ে অটোতে প্রথমে দমদম স্টেশন, পরে ট্রেন ধরে ক্যানিং পৌঁছয়। পরবর্তী গন্তব্য ছিল শান্তনুর ঝড়খালির বাড়ি। সেখান থেকেই গত সোমবার অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়।
খুনের আগ্নেয়াস্ত্রের কী হল? মতীশ রায় সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে বাচ্চু বলেছে, ‘সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে মুখ ঘুরিয়ে ওটা ছুড়ে দিয়েছি। কোথায় গিয়ে পড়ল, তা দেখিনি পর্যন্ত স্যার’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy