Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Fire

‘মনে হচ্ছিল ঘরের মধ্যেই দু’জনে পুড়ে মারা যাব’

সুবীরবাবুর তেতলা বাড়ির চার দিকে আগুনের ক্ষতের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

তালতলার বাড়িতে রূপালি দত্ত। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

তালতলার বাড়িতে রূপালি দত্ত। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

শুভাশিস ঘটক
শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৪০
Share: Save:

মাস তিনেক হল, হাঁটাচলার ক্ষমতা প্রায় হারিয়েছেন তাঁরা। সোমবার রাতে বাড়ি লাগোয়া কারখানায় আগুনের লেলিহান শিখা দেখার পরে মঙ্গলবার দুপুরেও তাঁদের আতঙ্কের ঘোর কাটেনি। সোমবার রাতে তালতলার পূরণ নাহার অ্যাভিনিউয়ের তিনটি প্লাইউড কারখানায় বিধ্বংসী আগুন লাগে। ওই কারখানার প্রায় গা ঘেঁষা চিকিৎসক সুবীর দত্তের ল্যাবরেটরি। সুবীরবাবু ও তাঁর স্ত্রী রূপালিদেবী দু’জনেই হুইলচেয়ারে বসা।

মঙ্গলবার সকালে রূপালিদেবী বলেন, ‘‘সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আগুন আমাদের দিকে এগিয়ে আসছিল। আমি তো নড়াচড়া করতে পারি না। এক দিকে আগুন তেড়ে আসছে। আর এক দিকে আগুনের তাপে ঝনঝন করে ভেঙে পড়ছে দরজা-জানলার কাচ। দু’জনেই হুইলচেয়ারে বসে। বুঝতে পারছিলাম না কী করে বেরোব। মনে হচ্ছিল ঘরের মধ্যেই দু’জনে পুড়ে মারা যাব।’’ মঙ্গলবারেও রূপালিদেবীর চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। স্বামীর পাশে বসে গত রাতের আগুনের বিভীষিকার বিবরণ দিচ্ছিলেন ওই বৃদ্ধা।

সুবীরবাবুর মেয়ে নন্দিনী এবং তাঁদের বাড়ির আয়া সরু সিঁড়ি দিয়ে কোনও ভাবে বৃদ্ধ দম্পতিকে নীচে নামিয়ে আনেন। নন্দিনী বলেন, ‘‘আমরা কোনও ভাবে বাবা ও মাকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে নীচে নামিয়ে আনি। পরে ওঁদের পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়। বাড়ি ফিরে আধার কার্ড ও প্যান কার্ড-সহ নানা নথি খোঁজা শুরু করি। কিন্তু আগুনে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে।’’ সুবীরবাবু বলেন, ‘‘সত্তরের দশকে পাশে একটিই কারখানা ছিল। ওই সময়ে এক বার আগুন লেগেছিল। ঘিঞ্জি এলাকায় ওই সময়ে মাস ছয়েক বন্ধ ছিল কারখানা। পরে আবার চালু হয়ে যায়। এখন তো শুনছি তিনটি কারখানা।’’

সুবীরবাবুর তেতলা বাড়ির চার দিকে আগুনের ক্ষতের চিহ্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বারান্দায় থাকা ওয়াশিং মেশিন প্রায় গলে গিয়েছে। জলের ট্যাঙ্ক আগুনের তাপে গলে ফুটো হয়ে গিয়েছে। দেওয়াল থেকে বেসিন প্রায় খুলে পড়ছে। ছাদের বাগানের প্রায় সব গাছই ঝলসে গিয়েছে। বাড়ির পাঁচটি এসি আগুনের তাপে বিকল হয়ে গিয়েছে। হুইলচেয়ারে বসে রয়েছেন চিকিৎসক সুবীরবাবু ও রূপালিদেবী। সারা বাড়ি কালো ছাইয়ে ঢেকেছে। মাস চারেক আগেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন সুবীরবাবু। এখন কানে প্রায় শুনতেই পান না। মাস তিনেক আগে কোমর ভেঙেছিল তাঁর স্ত্রীর। এখন দু’জনই হাঁটাচলা করতে পারেন না।

এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। বাড়ির লাগোয়া সুবীরবাবুর ল্যাবরেটরি কার্যত অচল। কোনও রকমে একটি জেনারেটর চালিয়ে বাড়ি ও ল্যাবরেটরিতে আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানালেন নন্দিনী। সোমবার রাতে ওই কারখানাগুলির আশপাশের বাড়ি থেকে প্রায় সব আবাসিকদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার নন্দিনী বলেন, ‘‘শুনেছি ওই কারখানাগুলির বিমা করা রয়েছে। ওরা হয়তো কিছু ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু আমাদের প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা কী পাব?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident Fire Brigade Wood Warehouse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE