Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জুজু ডেঙ্গি, মশারি ভরসা বাসিন্দাদের

শাশুড়িকেও বলে রেখেছেন, ওরা যেন দিনের বেশিটা সময় মশারির ভিতরেই থাকে, খেয়াল রাখতে।

ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে মশারির ভিতরে শিশুরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

ডেঙ্গি থেকে বাঁচতে মশারির ভিতরে শিশুরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:১৪
Share: Save:

বাড়ির কয়েকটি জানলায় বসানো হয়েছে নেট। যে সব জানলায় নেট নেই, সেগুলি বন্ধ। বাড়িতে সর্বক্ষণ জ্বলছে মশার ধূপ ও কয়েল। তবুও আতঙ্ক যাচ্ছে না। গত বছরই ডেঙ্গি-আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন নার্সিংহোমে কাটিয়েছেন স্বামী। জিঞ্জিরাবাজারের বাসিন্দা সুনন্দা সরকার অফিসে যাওয়ার আগে তাই তাঁর দুই সন্তান সোহেলিয়া ও শ্রেয়মকে মশারির ভিতরেই বসে খেলতে বলে গিয়েছেন। শাশুড়িকেও বলে রেখেছেন, ওরা যেন দিনের বেশিটা সময় মশারির ভিতরেই থাকে, খেয়াল রাখতে।

শুধু সুনন্দাই নন, জিঞ্জিরাবাজারের অধিকাংশ বাড়িতেই এখন ডেঙ্গি আতঙ্কে দিন-রাত টাঙানো মশারি। বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, মহেশতলা পুরসভার জিঞ্জিরাবাজারের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় সব বাড়িতেই কোনও না কোনও বাসিন্দার ডেঙ্গির লক্ষণ-সহ জ্বর চলছে। অনেকেরই রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। অভিযোগ, অনেক বাড়িতে একাধিক ব্যক্তি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। যাঁরা আক্রান্ত নন, তাঁরাও ভয়ে মশারির ভিতরেই দিন কাটাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা।

জিঞ্জিরাবাজারের চাউলপট্টির পিছনের পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ বাড়িতেই রয়েছেন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী। কেউ কেউ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কারও আত্মীয় আবার ভর্তি নিকটবর্তী বিবেকানন্দ হাসপাতালে। এমনই এক বাসিন্দা, পেশায় অঙ্কনশিল্পী প্রণব পাত্রের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, তাঁর ছেলে শৌভিক পাত্র ও পুত্রবধূ মিঠু পাত্র জ্বরে ভুগছেন। দু’জনেই শুয়ে মশারির ভিতরে। তাঁরা জানালেন, শৌভিকের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। মিঠুর রক্ত পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। তবে তাঁরও জ্বরে ডেঙ্গির লক্ষণ প্রকট। প্রণববাবুর স্ত্রী শিখা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে বিবেকানন্দ হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর মা কমলাদেবীও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সদ্য হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। প্রণববাবু বলেন, ‘‘মা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরল, স্ত্রী ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেল। বাড়িতে ছেলে ও পুত্রবধূ ডেঙ্গি লক্ষণ নিয়ে জ্বরে ভুগছে। খুব দুশ্চিন্তায় আছি।’’ পাশের পাড়া কাটা মনসাতলার বাসিন্দা ভবানী মাকাল বলেন, ‘‘বাড়িতে পাঁচ জনের ডেঙ্গি হয়েছিল। সন্ধ্যা হলেই বাড়িতে মশা ঢুকে পড়ে। প্রচণ্ড গরমেও সব সময়ে জানলা বন্ধ রাখতে হয়।’’

এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন জায়গায় জমে আবর্জনার স্তূপ। নিকাশি নালায় জমে রয়েছে জল। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার প্রধান সমস্যা একটি ডোবা ঘিরে। চারপাশে জঞ্জাল জমে ডোবার জল স্থির হয়ে আছে। অভিযোগ, মহেশতলা পুরসভাকে এই ডোবা পরিষ্কার করার জন্য লিখিত আবেদন করা হয়েছে। পুরসভা শুধু সেই চিঠি রিসিভ করে স্ট্যাম্প মেরে দিয়েছে। যদিও পুরসভার দাবি, নিয়মিত এলাকা পরিষ্কার করা হয় ও ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচারও করা হয় পাড়ায় পাড়ায়।

তবে এলাকার বহু মানুষ ডেঙ্গি আক্রান্ত, তা স্বীকার করে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস বলেন, ‘‘১২ নম্বর ওয়ার্ডে অনেকে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত, সেটা ঠিক। কিন্তু স্থানীয় একটি ক্লাবে গত ১২ অগস্ট থেকে পুরসভার তরফে মেডিক্যাল ক্যাম্প চলছে। সেখানে সব সময় চিকিৎসক থাকছেন। রয়েছে আধুনিক ল্যাবরেটারি। ওখানেই রক্ত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আছে। এমনকি, কাউকে হাসপাতালে পাঠানোর দরকার পড়লে বিনামূল্যে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও রয়েছে।’’ দুলালবাবুর দাবি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি আর আগের মতো খারাপ নেই। এখন কিছুটা হলেও পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Mosquito Net
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE