Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ডেঙ্গির মেঘ, ডরাচ্ছে ঘরপোড়া দমদম

বস্তুত ২০১৭ সালে ঘরে ঘরে জ্বর আর ডেঙ্গিতে ভুগেছেন মূলত দক্ষিণ দমদম এবং কিছুটা দমদম পুরসভার বাসিন্দারা। মশাবাহিত রোগে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

সচেতন: মশারির মধ্যেই ঘুমিয়ে কাদা শিশু। রবিবার, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সচেতন: মশারির মধ্যেই ঘুমিয়ে কাদা শিশু। রবিবার, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৬
Share: Save:

সদর রাস্তার নীচ দিয়ে গিয়েছে নর্দমা। আর গলির পাশের নর্দমার মুখ ঢাকনা দিয়ে বন্ধ। কিছু কিছু জায়গায় যে নর্দমাগুলির মুখ খোলা, সেগুলি থাকে অপরিষ্কার হয়ে। এর পাশাপাশি বৃষ্টি শুরু হতেই ফাঁকা জায়গায় জমছে জল। শুরু হয়েছে মশার উৎপাতও। আর তাতেই জ্বর ও ডেঙ্গির আতঙ্কে ভুগছেন দমদম এলাকার বাসিন্দারা।

বস্তুত ২০১৭ সালে ঘরে ঘরে জ্বর আর ডেঙ্গিতে ভুগেছেন মূলত দক্ষিণ দমদম এবং কিছুটা দমদম পুরসভার বাসিন্দারা। মশাবাহিত রোগে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। ডেঙ্গি এমন মহামারীর চেহারা নেয়, যে এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমনকি নার্সিংহোমগুলিতেও ভর্তির জায়গা ছিল না। সেই ঘটনা নিয়ে এতটাই হৈ-চৈ হয় যে তার পরেই ডেঙ্গি রুখতে নড়েচড়ে বসে উত্তর ২৪ পরগনা প্রশাসন ও পুরসভা। অবশ্য গত বছর সেই সমস্যা খানিকটা সামাল দেয় দু’টি পুরসভা।

দমদম এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে প্রশাসন ও পুরসভাকে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার মধ্যমগ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী দমদমে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার প্রসঙ্গ টেনে পুরসভার চেয়ারম্যানদের আগাম ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই জেলায় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া বারবার হচ্ছে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীকে নির্দেশ দেন, ‘‘১৫ দিন অন্তর এই নিয়ে স্বাস্থ্যদফতর ও পুরসভা, পঞ্চায়েতদের নিয়ে বৈঠক করতে হবে।’’ তবে জেলাশাসক জানিয়েছেন, ‘‘নিয়মিতই বৈঠক হচ্ছে। এলাকা পরিষ্কার, মশা মারার তেল ছড়ানোও হচ্ছে।’’

কিন্তু দমদমের বাসিন্দাদের অভিযোগ, অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে শুরু হয়েছে মশার উৎপাত। তাঁরা আতঙ্কিত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দমদম এলাকা এখনও প্লাস্টিক-মুক্ত নয়। প্লাস্টিক, থার্মোকল নর্দমায় পড়ে জলের গতি আটকে দিচ্ছে। সেই জলে জন্মাচ্ছে মশার লার্ভা। বাসিন্দাদের দাবি, মাঝেমধ্যে মশা মারার তেল ছড়ানো হয়।

দক্ষিণ দমদমের পুরকর্তারা জানান, পুরনো অভিজ্ঞতা থেকে ডেঙ্গি দমনে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে। ৮০ জন সুপারভাইজারের অধীনে ৮৩০ জন মহিলা স্বেচ্ছাসেবক এবং ২৩০ জন সাফাইকর্মী এলাকা পরিষ্কার ছাড়াও বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে সচেতন করছেন। বাড়ির সেপটিক, রান্নাঘরের আশপাশ— কোথাও যেন জল না জমে, তা-ও নজর রাখা হচ্ছে।

দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডে বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিরা নিজের ওয়ার্ড পরিষ্কারের পাশাপাশি কারও জ্বর হলেই খোঁজ নিচ্ছেন। এলাকা ডেঙ্গি মুক্ত করার জন্য মশা মারার তেল ছড়ানো, এক ধরনের পাউডারও ব্যবহার হচ্ছে।’’ রবিবারও মাইকে প্রচার, জল পরিষ্কার, তেল ছড়ানো হয়েছে বলেই পুরসভার দাবি।

এলাকার ২২টি ওয়ার্ডে নিয়মিত মশা মারার কাজ চলছে জানিয়েছেন দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান হরেন্দ্র সিংহ। তাঁর দাবি, ‘‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ জন করে সাফাই কর্মী নিয়মিত কাজ করছেন। বাইরে এবং বাড়িতেও জল জমলে তা পরিষ্কার করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dumdum Dengue Mosquito Fever
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE